জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া ১০ বছরের কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা আপিল আবেদনের শুনানি শুরু হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) সকাল ১০ টার পর থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি শুরু হয়। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চে শুনানি চলছে।
আদালতে আজ আপিলের পক্ষে শুনানি করছেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। তাকে সহযোগিতা করছেন আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, এম বদরুদ্দোজা বাদল, মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। এ সময় কামরুল ইসলাম সজল ও মাকসুদ উল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
শুনানিতে এদিন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ প্রশ্ন তোলেন জিয়া ট্রাস্টের অর্থ কোথায় থেকে কিভাবে আসলো? এর জবাবে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জানান, মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নামে কুয়েত সরকার এই ফান্ড দিয়েছিলেন। ওই অর্থ ব্যাংকে জমা আছে, যে অর্থ বেড়ে যাচ্ছে। আর এই অর্থ জিয়াউর রহমানের নামে বগুড়া ও বাগেরহাটে দুটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য রয়েছে।
এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি জানতে চান, এটি কত সাল থেকে শুরু হয়েছে, জবাবে কায়সার কামাল বলেন, ২০০৬ সাল থেকে দুটি প্রতিষ্ঠান করার কাজ শুরু করেছে। এ পর্যায়ে সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন জানান, অর্থ ব্যাংকে রয়েছে এখন তা বেড়েই চলছে। এরপর আপিল বিভাগ বিরতিতে যান। আবার বেলা ১১ টার পর থেকে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে ১১ নভেম্বর খালেদা জিয়াকে আপিলের অনুমতি দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া সাজার রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। পরে খালেদা জিয়া আপিল করেন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন।
একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
পরে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ওই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া আপিল আবেদন করেন। একই বছরের ২৮ মার্চ খালেদার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের করা আবেদনে রুল দেন হাইকোর্ট।
সাজা বৃদ্ধিতে দুদকের আবেদনে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেন।
এছাড়া পাঁচ বছরের দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে খালেদা জিয়া এবং ১০ বছরের দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে কাজী কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের আপিল খারিজ করেন আদালত।
এদিকে ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান একটি রায় দেন। রায়ে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সাজা হয়েছে মামলার অপর তিন আসামিরও।
পরে একই বছরের ১৮ নভেম্বর ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া। শুনানি শেষে হাইকোর্ট গত নভেম্বরে আপিল মঞ্জুর করে খালেদা জিয়াসহ সবার সাজা বাতিল করে দেন। যদিও এ দুই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি।
এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের দাবি, বিএনপি চেয়ারপারসনের দণ্ড মওকুফ করা হয়েছে। তারপরও আপিল শুনানি কেন? আমরা বলেছি, তিনি (খালেদা জিয়া) আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। রাষ্ট্রপতি মওকুফ করেছেন। সেখানে ক্ষমার কথা আছে। খালেদা জিয়া ক্ষমার প্রতি বিশ্বাসী নন। তিনি অপরাধ করেননি। তিনি ক্ষমাও চাননি। তাই এটা আইনগতভাবে মোকাবিলা করতে তিনি আইনজীবীদের নির্দেশ দিয়েছেন।