ঢাকা , শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৩ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিনিয়োগকারীদের ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাত, কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএসইসি

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ১০:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • 1

প্রতারণামূলক সফটওয়্যার ডাটাবেস ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীদের ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে শেয়ারবাজারের চার ব্রোকারেজ হাউজের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ বিষয়ে কমিশন আইনি মতামত নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারির শেষের দিকে বিএসইসির কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

যেসব ব্রোকারেজ হাউজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেগুলো হলো- তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেড, বানকো সিকিউরিটিজ লিমিটেড, ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ লিমিটেড এবং শাহ মোহাম্মদ সগির অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড। এদিকে, ১৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎকারী মশিউর সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও একটি রোডম্যাপ তৈরি করছে বিএসইসি।

এছাড়া, আরও ৪টি ব্রোকারেজ হাউজের – ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস, সাবভ্যালি সিকিউরিটিজ, ইন্ডিকেট সিকিউরিটিজ এবং সাদ সিকিউরিটিজ লিমিটেড – কে নিয়মনীতি লঙ্ঘন সংশোধন করার জন্য নির্দেশনা জারি করেছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) অনুসারে, ব্রোকারেজ হাউজগুলো সমান্তরাল সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে গ্রাহক অ্যাকাউন্টে কারসাজি করেছে। জাল লেনদেন রেকর্ড দিয়ে বিনিয়োগকারী এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে বিভ্রান্ত করেছে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেড অবৈধভাবে অতিরিক্ত সফটওয়্যার ব্যবহার করে এবং ভুয়া বিনিয়োগ তথ্য প্রদান করে ক্লায়েন্টদের ১৩৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। এর মধ্যে ৯২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ক্যাশ এবং ৪৭ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ ছিল। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে প্রায় ৭২০টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

২০২১ সালের জুন মাসে ডিএসই ৬০ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর তার সদস্য প্রতিষ্ঠান ব্যাঙ্কো সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ট্রেডিং কার্যক্রম স্থগিত করে। ব্রোকারেজ হাউজটির অ্যাকাউন্টগুলির পরবর্তী তদন্তে তাদের একত্রিত গ্রাহক অ্যাকাউন্টে ১২৮ কোটি টাকার ঘাটতি প্রকাশ পায়, যার মধ্যে ৬৬ কোটি ১১ লাখ টাকা নগদ এবং ৬১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা সিকিউরিটিজ ছিল।

ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ লিমিটেড হঠাৎ করে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় এবং কোনও পূর্ব নোটিশ ছাড়াই তাদের অফিস বন্ধ করে দেয়, যার ফলে বিনিয়োগকারীরা তাদের তহবিল এবং শেয়ারের নিরাপত্তা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।

স্টক এক্সচেঞ্জের তদন্তে দেখা গেছে, হাউজটির একীভূত গ্রাহক অ্যাকাউন্টে ৬৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা ঘাটতি রয়েছে। যার মধ্যে ৪৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা ক্যাশ এবং ২০ কোটি ৪০ লাখ টাকা সিকিউরিটিজ রয়েছে।

ডিএসইর অন্যতম শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউজের বাণিজ্য নিষ্পত্তিতে ব্যর্থতার কারণে শাহ মোহাম্মদ সগীর অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের লেনদেন স্থগিত করেছে। তদন্তের পর ডিএসই দেখতে পায়, ব্রোকারেজ হাউজটি ১৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। হাউজটির বিরুদ্ধে মোট ৪,১৮৭টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যার মধ্যে ১,০৮১টি দাবি এখনও নিষ্পত্তি হয়নি।

অন্যদিকে, বিএসইসি মোশিউর সিকিউরিটিজ লিমিটেডের জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করবে। প্রতিষ্ঠানটি একাধিক সার্ভার এবং ডাটাবেস ব্যবহার করে বছরের পর বছর ধরে ক্লায়েন্টদের তহবিল অপব্যবহার করেছে।

২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট ডিএসই মোশিউর সিকিউরিটিজের সিসিএতে ৬৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকার ঘাটতি চিহ্নিত করে। ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট ব্রোকারেজ হাউজটি মোট ১৬১ কোটি টাকার বিনিয়োগকারীদের তহবিল এবং ৯২ কোটি ৩৫ লঅখ টাকার শেয়ার অপব্যবহার করেছে বলে প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিএসইসি বিষয়টি তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে, সিকিউরিটিজ নিয়ন্ত্রক সংস্থা পিএফআই সিকিউরিটিজকে তাদের সিসিএ-তে ২৫ কোটি টাকার ঘাটতি সামঞ্জস্য করার জন্য ছয় মাস সময়সীমা বৃদ্ধি করে। তবে কোম্পানিটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশাবলী সম্পূর্ণরূপে মেনে চলতে ব্যর্থ হয় এবং ২০২৪ সালের ২১ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ঘাটতি ২৮ কোটি ১৮ লাখ টাকায় উন্নীত হয়।

ট্যাগস

বিনিয়োগকারীদের ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাত, কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএসইসি

আপডেট সময় ১০:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

প্রতারণামূলক সফটওয়্যার ডাটাবেস ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীদের ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে শেয়ারবাজারের চার ব্রোকারেজ হাউজের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ বিষয়ে কমিশন আইনি মতামত নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারির শেষের দিকে বিএসইসির কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

যেসব ব্রোকারেজ হাউজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেগুলো হলো- তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেড, বানকো সিকিউরিটিজ লিমিটেড, ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ লিমিটেড এবং শাহ মোহাম্মদ সগির অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড। এদিকে, ১৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎকারী মশিউর সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও একটি রোডম্যাপ তৈরি করছে বিএসইসি।

এছাড়া, আরও ৪টি ব্রোকারেজ হাউজের – ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস, সাবভ্যালি সিকিউরিটিজ, ইন্ডিকেট সিকিউরিটিজ এবং সাদ সিকিউরিটিজ লিমিটেড – কে নিয়মনীতি লঙ্ঘন সংশোধন করার জন্য নির্দেশনা জারি করেছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) অনুসারে, ব্রোকারেজ হাউজগুলো সমান্তরাল সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে গ্রাহক অ্যাকাউন্টে কারসাজি করেছে। জাল লেনদেন রেকর্ড দিয়ে বিনিয়োগকারী এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে বিভ্রান্ত করেছে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেড অবৈধভাবে অতিরিক্ত সফটওয়্যার ব্যবহার করে এবং ভুয়া বিনিয়োগ তথ্য প্রদান করে ক্লায়েন্টদের ১৩৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। এর মধ্যে ৯২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ক্যাশ এবং ৪৭ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ ছিল। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে প্রায় ৭২০টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

২০২১ সালের জুন মাসে ডিএসই ৬০ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর তার সদস্য প্রতিষ্ঠান ব্যাঙ্কো সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ট্রেডিং কার্যক্রম স্থগিত করে। ব্রোকারেজ হাউজটির অ্যাকাউন্টগুলির পরবর্তী তদন্তে তাদের একত্রিত গ্রাহক অ্যাকাউন্টে ১২৮ কোটি টাকার ঘাটতি প্রকাশ পায়, যার মধ্যে ৬৬ কোটি ১১ লাখ টাকা নগদ এবং ৬১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা সিকিউরিটিজ ছিল।

ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ লিমিটেড হঠাৎ করে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় এবং কোনও পূর্ব নোটিশ ছাড়াই তাদের অফিস বন্ধ করে দেয়, যার ফলে বিনিয়োগকারীরা তাদের তহবিল এবং শেয়ারের নিরাপত্তা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।

স্টক এক্সচেঞ্জের তদন্তে দেখা গেছে, হাউজটির একীভূত গ্রাহক অ্যাকাউন্টে ৬৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা ঘাটতি রয়েছে। যার মধ্যে ৪৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা ক্যাশ এবং ২০ কোটি ৪০ লাখ টাকা সিকিউরিটিজ রয়েছে।

ডিএসইর অন্যতম শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউজের বাণিজ্য নিষ্পত্তিতে ব্যর্থতার কারণে শাহ মোহাম্মদ সগীর অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের লেনদেন স্থগিত করেছে। তদন্তের পর ডিএসই দেখতে পায়, ব্রোকারেজ হাউজটি ১৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। হাউজটির বিরুদ্ধে মোট ৪,১৮৭টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যার মধ্যে ১,০৮১টি দাবি এখনও নিষ্পত্তি হয়নি।

অন্যদিকে, বিএসইসি মোশিউর সিকিউরিটিজ লিমিটেডের জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করবে। প্রতিষ্ঠানটি একাধিক সার্ভার এবং ডাটাবেস ব্যবহার করে বছরের পর বছর ধরে ক্লায়েন্টদের তহবিল অপব্যবহার করেছে।

২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট ডিএসই মোশিউর সিকিউরিটিজের সিসিএতে ৬৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকার ঘাটতি চিহ্নিত করে। ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট ব্রোকারেজ হাউজটি মোট ১৬১ কোটি টাকার বিনিয়োগকারীদের তহবিল এবং ৯২ কোটি ৩৫ লঅখ টাকার শেয়ার অপব্যবহার করেছে বলে প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিএসইসি বিষয়টি তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে, সিকিউরিটিজ নিয়ন্ত্রক সংস্থা পিএফআই সিকিউরিটিজকে তাদের সিসিএ-তে ২৫ কোটি টাকার ঘাটতি সামঞ্জস্য করার জন্য ছয় মাস সময়সীমা বৃদ্ধি করে। তবে কোম্পানিটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশাবলী সম্পূর্ণরূপে মেনে চলতে ব্যর্থ হয় এবং ২০২৪ সালের ২১ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ঘাটতি ২৮ কোটি ১৮ লাখ টাকায় উন্নীত হয়।