যুক্তরাষ্ট্রের ১৪৫ শতাংশ শুল্কের চাপে হিমশিম খাচ্ছে চীনের রপ্তানি খাত। এতে দেশটিতে চাকরি হারানোর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। গোল্ডম্যান স্যাশের মতে, প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ চীনা কর্মী যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া পণ্যের উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত। আবার নোমুরা ব্যাংক বলছে, যদি এই ‘শক’ চলতে থাকে তাহলে স্বল্পমেয়াদে ৫৭ লাখ এবং দীর্ঘমেয়াদে ১ কোটি ৫৮ লাখ কর্মী চাকরি হারাতে পারেন।
চীনের নেতারা এরই মধ্যে ক্ষতি কমানোর জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছেন। গত ২৫ এপ্রিল পলিটব্যুরোর এক বৈঠকে তারা শুল্কে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বেকারত্ব বিমার অর্থ ফেরত দেওয়ার পরিমাণ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তবে, দেশটির জন্য এই সংকটের আরেকটি সম্ভাব্য সমাধান হলো বৃহৎ ‘গিগ অর্থনীতি’। ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ চীনের এই খাতে ব্যাপক রূপান্তর ঘটাতে পারে।
গিগ অর্থনীতি হলো এমন একটি শ্রমবাজার, যেখানে অস্থায়ী, স্বল্পমেয়াদি, চুক্তিভিত্তিক বা ফ্রিল্যান্স কাজে যুক্ত শ্রমিকরা কাজ করে থাকেন এবং এই কাজগুলো সাধারণত অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পাওয়া যায়।
চীনের রাষ্ট্র পরিচালিত ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন জানিয়েছে, নতুন ধরনের কর্মসংস্থানে ৮ কোটি ৪০ লাখ মানুষ জড়িত, যার মধ্যে ডেলিভারি সেবা এবং রাইড হেলিং অন্তর্ভুক্ত। সরকার আরও একটি বড় পরিসংখ্যান উল্লেখ করেছে, ২০ কোটি ‘ফ্লেক্সিবল কর্মী’ আছেন, যারা স্বতন্ত্রভাবে বা আংশিক কর্মী হিসেবে কাজ করেন। এর মধ্যে ৫ কোটি ৪০ লাখ মানুষ শহরের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত, যা ৭৩ কোটি ৪০ লাখ কর্মশক্তির মধ্যে একটি বড় অংশ।
মেইটুয়ান নামে একটি ডেলিভারি কোম্পানির ৭৫ লাখ কুরিয়ার রয়েছে, যারা প্রতি বছর ১ হাজার ১০০ কোটি মাকিন ডলার উপার্জন করেন। কর্মীরা তাদের কঠোর কাজকে ‘গুওডু’ (একটি অন্তর্বর্তী কাজ) হিসেবে বর্ণনা করেন। এই গিগ অর্থনীতি সম্প্রসারিত হচ্ছে এবং মেইটুয়ানের কর্মী সংখ্যা ২০২১ সালের তুলনায় ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কোম্পানিটি ভবিষ্যতে খাদ্য ও শপিং ডেলিভারির ব্যবসায় যথেষ্ট বৃদ্ধির আশা করছে।
গিগ অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণে থাকা কোম্পানিগুলোকে রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। ২০২০ সালে একটি ব্যাপক দমন-পীড়নের অংশ হিসেবে এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে ‘অবৈধভাবে পুঁজি বৃদ্ধির’ অভিযোগ আনা হয়েছিল। তবে ২০২৩ সালে প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং এসব কোম্পানির কর্মসংস্থান এবং চাহিদায় ‘বৃদ্ধি’ নিয়ে প্রশংসা করেছেন। এখন, সরকার গিগ অর্থনীতিকে অর্থনীতির জন্য একটি নিরাপত্তা বলয়ে পরিণত করতে কাজ করছে।
তাদের জন্য সহায়ক হিসেবে, গিগ অর্থনীতি কোম্পানিগুলোকে একটি ছায়া কল্যাণ ব্যবস্থা গঠন করতে উৎসাহিত করছে। গত ফেব্রুয়ারিতে জেডি ডটকম তার চালকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা প্রস্তাব করেছে। মেইটুয়ান ঘোষণা করেছে, তারা ২০২৫ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে তাদের কুরিয়ারদের জন্য ধীরে ধীরে সামাজিক সুরক্ষা প্রদান করবে।
তবে, প্রশ্ন উঠছে—এসব সুবিধা কীভাবে অর্থায়ন হবে। কিছু চালক এই উদ্যোগ সম্পর্কে সন্দিহান এবং তারা মনে করেন, এই সুবিধাগুলোর খরচ তাদের পকেট থেকেই আসবে। দক্ষিণ চীনের কুয়ানঝো শহরে, যেখানে মেইটুয়ান তাদের পরীক্ষামূলক প্রকল্প চালু করেছে, ৩০ বছর বয়সী এক চালক বলেন, আমরা যখন বৃদ্ধ হব, তখন শ্রমশক্তি আরও কম হবে এবং পেনশনের অর্থ আমাদের প্রজন্মকে সাহায্য করতে পারবে না।
এছাড়া, প্রযুক্তি উন্নয়নও গিগ অর্থনীতির কর্মসংস্থানের জন্য হুমকি হতে পারে। মেইটুয়ান স্বয়ংক্রিয় যানবাহন এবং ড্রোনের মাধ্যমে ডেলিভারি পরীক্ষামূলকভাবে চালাচ্ছে। এগুলো যথাক্রমে ৪৯ লাখ এবং ১৪ লাখ ৫০ হাজার ডেলিভারি সম্পন্ন করেছে।
এটি দেখিয়ে দেয়, বাণিজ্যযুদ্ধ চীনের শাসকদের অভিযোজন করতে বাধ্য করছে। উচ্চ-প্রযুক্তির কর্মীদের নিয়ে আধুনিক শ্রমশক্তির স্বপ্ন দেখার পাশাপাশি তাদের হাতে এখন কম-প্রযুক্তির বিশাল বাহিনীও আছে।