ঢাকা , সোমবার, ০২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সদর ঘাটে যাত্রীদের স্বস্তি, বাড়েনি ভাড়া

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ১০:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫
  • 1

ঈদুল আজহা উদযাপিত হতে যাচ্ছে ৭ জুন। ঈদযাত্রা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক ও রেলস্টেশনে বেড়েছে ঘরমুখো মানুষের ভিড়। তবে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের দৃশ্যপট একেবারেই ভিন্ন। সড়ক ও রেলপথের মতো নৌ-পথে নেই যাত্রীর চাপ। গত এক সপ্তাহ ধরে যাত্রীদের নিয়মিত যাতায়াত তুলনামূলক বাড়লেও, ঈদ উপলক্ষে উপচেপড়া ভিড় এখনো সদরঘাটে শুরু হয়নি। নৌপথে এবার প্রস্তুত নেই বিশেষ লঞ্চ।

শনিবার (৩১ মে) বিকেল ৫টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে অন্যান্য সময়ের তুলনায় কোলাহলমুক্ত। কিছু কিছু লঞ্চে অল্পসংখ্যক যাত্রী দেখা গেলেও আগের মতো ভিড় ও তাড়াহুড়োর চিত্র চোখে পড়েনি। নেই কুলি-মজুরদের দরকষাকষিও। লঞ্চের স্টাফদের হাঁকডাক থাকলেও ঘাটে যাত্রী কম দেখা যায়।

এদিন রাত ৯টায় সদরঘাট থেকে ভাষাণচরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এম.ভি. রাজহংস-১০ লঞ্চ। লঞ্চটিতে ধারণ-ক্ষমতার তুলনায় যাত্রী ছিল অনেক কম। ডেকে যাত্রী থাকলেও ছিল না ভিড়। কেবিনের অর্ধেক ছিল খালি। লঞ্চটির কেরানি মো. নাজির জানান, এখন পর্যন্ত বাড়তি কোনো চাপ নেই। ৫ তারিখের পরে ঈদের জন্য চাপ বাড়বে বলে ধারণা করছি।

রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে সদরঘাট থেকে শৌলা-মুলদি নৌপথে ছেড়ে যায় এম.ভি. মহারাজ-৭ লঞ্চ। লঞ্চটির ধারণ-ক্ষমতা ৪২২ জন। তবুও যাত্রী সংকট। লঞ্চটির ৪২ সিঙ্গেল কেবিনের ২৭টিই ছিল খালি। ডাবল কেবিনের মাত্র ৯টিতে যাত্রী ছিল। ডেকের নিচতলায় কিছুসংখ্যক যাত্রী থাকলেও দ্বিতীয়তলায় ছিল একেবারেই কম।

লঞ্চটির সুপারভাইজার মো. তপন দাস বলেন, সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় যাত্রী নেওয়া হচ্ছে, মাঝে মাঝে কিছু কমও রাখা হয়। এখনও ঈদের যাত্রীর চাপ আসেনি।

ঢাকা-বেতুয়া রুটে চলাচলকারী এম.ভি. তাসরিফ-৪ এর সুপারভাইজার এম.এ. জামান বলেন, আমরা মাঝে মাঝে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম নিই, যেমন ৫০৩ টাকার ভাড়া অনেক সময় ৪০০ টাকা রাখা হচ্ছে। ঈদের সময় ৫০০ পর্যন্ত নেওয়া হয়।

তিনি বলেন, লঞ্চ দুইদিন বন্ধ থাকার কারণে সেই দুইদিনের যাত্রী আজ এসেছে, তবে ঈদের চাপ এখনও তেমন দেখা যাচ্ছে না। বরিশালগামী যাত্রী মন্টু ব্যাপারী বলেন, আমি প্রতি ঈদেই বাড়ি যাই, কিন্তু এবার লঞ্চঘাট অনেকটাই ফাঁকা মনে হচ্ছে। আগে ভালো জায়গা পেতে অনেক আগেই আসতে হতো। এবার হয়ত আবহাওয়ার কারণে অনেকে এখনো আসেননি। তবে ঈদের আগে শেষ দুই দিনে চাপ বাড়বে, এটা নিশ্চিত। এজন্য আগেই বাড়ি যাচ্ছি।

ঝালকাঠিগামী সোলাইমান হোসেন নামের এক যাত্রী বলেন, লঞ্চ ছাড়ার এক ঘণ্টা আগে এসে কেবিন পাবো ভাবিনি। অন্যান্য ঈদের তুলনায় লঞ্চে যাত্রীও কম। ভাড়াও আগের মতোই আছে। আবহাওয়া খারাপ হওয়ার কারণে যাত্রী আরেকটু কম।

সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল কনট্রোলার অফিস সূত্রে জানা যায়, আবহাওয়া খারাপ থাকায় গত তিনদিন দূরপাল্লার লঞ্চ চলাচল করেনি। তবে আজ সকাল থেকেই বিভিন্ন রুট থেকে লঞ্চ সদরঘাটে আসে।

সদরঘাট কন্ট্রোল রুম অফিসার আসাদুজ্জামান বলেন, শনিবার সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মোট ২৫টি লঞ্চ ঢাকায় এসেছে। সদরঘাট থেকে বিভিন্ন অঞ্চলে রাত ৯টা পর্যন্ত ৩৮টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। গত তিনদিন লঞ্চ চলাচল করেনি। ঈদ উপলক্ষে যাত্রীর চাপ এখনো বাড়েনি।

ঈদ উপলক্ষে সার্বিক বিষয়ে সদরঘাট লঞ্চ মালিক সমিতির সদস্য সচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ঈদ উপলক্ষে লঞ্চের ভাড়া নতুন করে বাড়ানো হয়নি এবং অতিরিক্ত কোনো লঞ্চও নামানো হয়নি। বর্তমানে ৩৮টি রুটে ১২০টি লঞ্চ রোটেশনে চলাচল করছে। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে ৩ জুনের পর অতিরিক্ত লঞ্চ নামানো হতে পারে। গত তিন দিন আবহাওয়াজনিত কারণে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল, তবে আজ থেকে স্বাভাবিকভাবে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে।

ঢাকা ইংল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মামুনুর রশীদ বলেন, আমাদের প্রধান যাত্রী হচ্ছেন পোশাকশিল্পের শ্রমিকরা। গার্মেন্টসে ছুটি শুরু হলে যাত্রীসংখ্যা বেড়ে যাবে। এছাড়া কিছু নিয়মিত যাত্রীও আছেন, যারা কেবিনে ভ্রমণ করেন—তাদের চাপ ৩ জুন থেকে বাড়তে পারে।

লঞ্চে চলাচলকারী যাত্রীদের ভাড়া ও নিরাপত্তার বিষয়ে সদরঘাট লঞ্চ মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ আবদুল হান্নান জানান, সদরঘাটে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে আবহাওয়া খারাপ থাকায় যাত্রীর সংখ্যা কিছুটা কম। নিরাপত্তার বিষয়টিকে আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি। এবার ঈদ যাত্রা উপলক্ষে ভাড়া বাড়েনি।

নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মোবারক হোসেন বলেন, ঈদ উপলক্ষে ঘাটে যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। লঞ্চ মালিক ও শ্রমিক সমিতির সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করা হয়েছে। যাত্রীদের যেন কোনো ভোগান্তি না হয়, সেজন্য আমরা তৎপর।

ট্যাগস

সদর ঘাটে যাত্রীদের স্বস্তি, বাড়েনি ভাড়া

আপডেট সময় ১০:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫

ঈদুল আজহা উদযাপিত হতে যাচ্ছে ৭ জুন। ঈদযাত্রা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক ও রেলস্টেশনে বেড়েছে ঘরমুখো মানুষের ভিড়। তবে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের দৃশ্যপট একেবারেই ভিন্ন। সড়ক ও রেলপথের মতো নৌ-পথে নেই যাত্রীর চাপ। গত এক সপ্তাহ ধরে যাত্রীদের নিয়মিত যাতায়াত তুলনামূলক বাড়লেও, ঈদ উপলক্ষে উপচেপড়া ভিড় এখনো সদরঘাটে শুরু হয়নি। নৌপথে এবার প্রস্তুত নেই বিশেষ লঞ্চ।

শনিবার (৩১ মে) বিকেল ৫টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে অন্যান্য সময়ের তুলনায় কোলাহলমুক্ত। কিছু কিছু লঞ্চে অল্পসংখ্যক যাত্রী দেখা গেলেও আগের মতো ভিড় ও তাড়াহুড়োর চিত্র চোখে পড়েনি। নেই কুলি-মজুরদের দরকষাকষিও। লঞ্চের স্টাফদের হাঁকডাক থাকলেও ঘাটে যাত্রী কম দেখা যায়।

এদিন রাত ৯টায় সদরঘাট থেকে ভাষাণচরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এম.ভি. রাজহংস-১০ লঞ্চ। লঞ্চটিতে ধারণ-ক্ষমতার তুলনায় যাত্রী ছিল অনেক কম। ডেকে যাত্রী থাকলেও ছিল না ভিড়। কেবিনের অর্ধেক ছিল খালি। লঞ্চটির কেরানি মো. নাজির জানান, এখন পর্যন্ত বাড়তি কোনো চাপ নেই। ৫ তারিখের পরে ঈদের জন্য চাপ বাড়বে বলে ধারণা করছি।

রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে সদরঘাট থেকে শৌলা-মুলদি নৌপথে ছেড়ে যায় এম.ভি. মহারাজ-৭ লঞ্চ। লঞ্চটির ধারণ-ক্ষমতা ৪২২ জন। তবুও যাত্রী সংকট। লঞ্চটির ৪২ সিঙ্গেল কেবিনের ২৭টিই ছিল খালি। ডাবল কেবিনের মাত্র ৯টিতে যাত্রী ছিল। ডেকের নিচতলায় কিছুসংখ্যক যাত্রী থাকলেও দ্বিতীয়তলায় ছিল একেবারেই কম।

লঞ্চটির সুপারভাইজার মো. তপন দাস বলেন, সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় যাত্রী নেওয়া হচ্ছে, মাঝে মাঝে কিছু কমও রাখা হয়। এখনও ঈদের যাত্রীর চাপ আসেনি।

ঢাকা-বেতুয়া রুটে চলাচলকারী এম.ভি. তাসরিফ-৪ এর সুপারভাইজার এম.এ. জামান বলেন, আমরা মাঝে মাঝে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম নিই, যেমন ৫০৩ টাকার ভাড়া অনেক সময় ৪০০ টাকা রাখা হচ্ছে। ঈদের সময় ৫০০ পর্যন্ত নেওয়া হয়।

তিনি বলেন, লঞ্চ দুইদিন বন্ধ থাকার কারণে সেই দুইদিনের যাত্রী আজ এসেছে, তবে ঈদের চাপ এখনও তেমন দেখা যাচ্ছে না। বরিশালগামী যাত্রী মন্টু ব্যাপারী বলেন, আমি প্রতি ঈদেই বাড়ি যাই, কিন্তু এবার লঞ্চঘাট অনেকটাই ফাঁকা মনে হচ্ছে। আগে ভালো জায়গা পেতে অনেক আগেই আসতে হতো। এবার হয়ত আবহাওয়ার কারণে অনেকে এখনো আসেননি। তবে ঈদের আগে শেষ দুই দিনে চাপ বাড়বে, এটা নিশ্চিত। এজন্য আগেই বাড়ি যাচ্ছি।

ঝালকাঠিগামী সোলাইমান হোসেন নামের এক যাত্রী বলেন, লঞ্চ ছাড়ার এক ঘণ্টা আগে এসে কেবিন পাবো ভাবিনি। অন্যান্য ঈদের তুলনায় লঞ্চে যাত্রীও কম। ভাড়াও আগের মতোই আছে। আবহাওয়া খারাপ হওয়ার কারণে যাত্রী আরেকটু কম।

সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল কনট্রোলার অফিস সূত্রে জানা যায়, আবহাওয়া খারাপ থাকায় গত তিনদিন দূরপাল্লার লঞ্চ চলাচল করেনি। তবে আজ সকাল থেকেই বিভিন্ন রুট থেকে লঞ্চ সদরঘাটে আসে।

সদরঘাট কন্ট্রোল রুম অফিসার আসাদুজ্জামান বলেন, শনিবার সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মোট ২৫টি লঞ্চ ঢাকায় এসেছে। সদরঘাট থেকে বিভিন্ন অঞ্চলে রাত ৯টা পর্যন্ত ৩৮টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। গত তিনদিন লঞ্চ চলাচল করেনি। ঈদ উপলক্ষে যাত্রীর চাপ এখনো বাড়েনি।

ঈদ উপলক্ষে সার্বিক বিষয়ে সদরঘাট লঞ্চ মালিক সমিতির সদস্য সচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ঈদ উপলক্ষে লঞ্চের ভাড়া নতুন করে বাড়ানো হয়নি এবং অতিরিক্ত কোনো লঞ্চও নামানো হয়নি। বর্তমানে ৩৮টি রুটে ১২০টি লঞ্চ রোটেশনে চলাচল করছে। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে ৩ জুনের পর অতিরিক্ত লঞ্চ নামানো হতে পারে। গত তিন দিন আবহাওয়াজনিত কারণে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল, তবে আজ থেকে স্বাভাবিকভাবে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে।

ঢাকা ইংল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মামুনুর রশীদ বলেন, আমাদের প্রধান যাত্রী হচ্ছেন পোশাকশিল্পের শ্রমিকরা। গার্মেন্টসে ছুটি শুরু হলে যাত্রীসংখ্যা বেড়ে যাবে। এছাড়া কিছু নিয়মিত যাত্রীও আছেন, যারা কেবিনে ভ্রমণ করেন—তাদের চাপ ৩ জুন থেকে বাড়তে পারে।

লঞ্চে চলাচলকারী যাত্রীদের ভাড়া ও নিরাপত্তার বিষয়ে সদরঘাট লঞ্চ মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ আবদুল হান্নান জানান, সদরঘাটে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে আবহাওয়া খারাপ থাকায় যাত্রীর সংখ্যা কিছুটা কম। নিরাপত্তার বিষয়টিকে আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি। এবার ঈদ যাত্রা উপলক্ষে ভাড়া বাড়েনি।

নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মোবারক হোসেন বলেন, ঈদ উপলক্ষে ঘাটে যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। লঞ্চ মালিক ও শ্রমিক সমিতির সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করা হয়েছে। যাত্রীদের যেন কোনো ভোগান্তি না হয়, সেজন্য আমরা তৎপর।