ঢাকা , রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ব্রোকারেজ হাউজের স্বচ্ছ জবাবদিহিতায় কঠোর হচ্ছে ডিএসই

শেয়ারবাজারে ব্রোকারেজ ফার্মগুলোর তদারকি জোরদার করতে এবং আর্থিক স্বচ্ছতা বাড়াতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। সম্প্রতি কিছু ব্রোকার-ডিলার ফার্মের আর্থিক অবস্থায় অসঙ্গতি ধরা পড়ার পর ডিএসই তার নিরীক্ষকদের প্যানেল আপগ্রেড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো অতীতের নিরীক্ষা ঘাটতিগুলো পূরণ করা, যা ব্রোকারেজ হাউসগুলোর প্রকৃত আর্থিক চিত্রকে অস্পষ্ট করে রেখেছিল।

ডিএসই গত ১লা জুলাই নিরীক্ষা সংস্থাগুলোকে তাদের প্যানেলে তালিকাভুক্ত করার জন্য নতুন নির্দেশিকা অনুমোদন করেছে। এই নির্দেশিকার মাধ্যমে ডিএসই ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট (TREC) ধারক অর্থাৎ ব্রোকার-ডিলার ফার্মগুলোর আর্থিক বিবরণী নিরীক্ষার মানদণ্ড আরও উন্নত করা হয়েছে।

নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি) এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর সাথে ইতিমধ্যে তালিকাভুক্ত নিরীক্ষকদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিএসইর প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পাশাপাশি ডিএসই অন্যান্য যোগ্য নিরীক্ষা সংস্থাগুলোকে ১৫ই জুলাইয়ের মধ্যে প্যানেলভুক্তির জন্য আবেদন করার আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সাধারণত বিবি এবং বিএসইসি তাদের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে থাকা ব্যাংক, নন-ব্যাংক এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর নিরীক্ষার জন্য পৃথক প্যানেল বজায় রাখে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেড, ব্যাঙ্কো সিকিউরিটিজ লিমিটেড, ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ লিমিটেড এবং শাহ মোহাম্মদ সগীর অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের মতো ব্রোকারেজ হাউসগুলোর বিরুদ্ধে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এই আত্মসাতের পেছনে একটি জালিয়াতিপূর্ণ সফটওয়্যার ডেটাবেসের ব্যবহার ধরা পড়ে। ডিএসই সন্দেহ করছে, এই আত্মসাতের ঘটনাগুলোতে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর প্রকৃত আর্থিক অবস্থা খুঁজে বের করতে নিরীক্ষকরা ব্যর্থ হয়েছিলেন।

ডিএসইর চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “ব্রোকারেজ হাউসগুলোর প্রকৃত আর্থিক অবস্থা বোঝা এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য একটি শক্তিশালী নিরীক্ষক প্যানেল অত্যাবশ্যক। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই নিরীক্ষকদের সঠিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কারণে ব্রোকারেজ ফার্মগুলোতে গ্রাহকদের তহবিল আত্মসাৎ হয়েছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই ধরনের ঘটনাগুলো শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমিয়ে দিয়েছে।

ডিএসই চেয়ারম্যান জোর দিয়ে বলেন, “এখন আমরা হাউসগুলোর আর্থিক অবস্থার একটি সঠিক ও ন্যায্য চিত্র পেতে ব্রোকারেজ ফার্মগুলোর জন্য নিরীক্ষক তালিকাভুক্তির নির্দেশিকা আপগ্রেড করেছি।”ডিএসই প্রাথমিকভাবে ২০২১ সালের জুনে ৬১টি নিরীক্ষা সংস্থা নিয়ে একটি নিরীক্ষক প্যানেল গঠন করেছিল। এই প্যানেলে বিবি এবং বিএসইসি দ্বারা তালিকাভুক্ত নিরীক্ষকদের পাশাপাশি আরও ছয়জন নিরীক্ষক অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ডিএসই-তালিকাভুক্ত ব্রোকারেজ ফার্মগুলোকে তাদের বার্ষিক আর্থিক বিবরণী নিরীক্ষার জন্য এই প্যানেল থেকে বিধিবদ্ধ নিরীক্ষক নিয়োগ করতে হবে। তবে কোনো নিরীক্ষক একটানা তিন বছরের বেশি সময়ের জন্য নিয়োগ পেতে পারবেন না।

নতুন নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক বা বিএসইসি-এর প্যানেল থেকে বাদ পড়া কোনো নিরীক্ষক, যারা ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের তালিকাভুক্তি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়, অথবা যারা অনৈতিক কার্যকলাপের সাথে জড়িত থাকে, তাদের ডিএসইর প্যানেলে তালিকাভুক্ত করা হবে না। এছাড়াও, যদি কোনো স্টক ব্রোকার-ডিলারের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী আইনি বিধান এবং সিকিউরিটিজ আইন অনুসরণ না করে প্রস্তুত করা হয়েছে বলে প্রমাণিত হয় এবং প্রকৃত ও ন্যায্য আর্থিক অবস্থান প্রতিফলিত না করে, তবে সেই নিরীক্ষককেও প্যানেল থেকে বাদ দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে ডিএসই একজন কর্মকর্তা জানান, “অতীতে মশিহর সিকিউরিটিজ লিমিটেড, ব্যাঙ্কো সিকিউরিটিজ, ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ এবং তামহা সিকিউরিটিজ ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে, অথচ নিরীক্ষকদের প্রতিবেদনে কোনো উল্লেখযোগ্য অনিয়ম প্রকাশ পায়নি।” এর ফলে ডিএসই ব্রোকারেজ হাউসগুলোর প্রকৃত অবস্থা বুঝতে পারেনি, যা শেষ পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের বড় ক্ষতির কারণ হয়েছিল। তিনি আরও যোগ করেন, “সেই ক্ষতিগুলো পূরণের জন্য বিনিয়োগকারী সুরক্ষা তহবিল থেকে বিতরণ করা পরিমাণ ছিল খুবই নগণ্য।”

এই প্রেক্ষাপটে, ডিএসই এখন বিনিয়োগকারী সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ব্রোকারেজ হাউসগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার উপর অধিক জোর দিচ্ছে। এর লক্ষ্য হলো, ভবিষ্যতে আর কোনো বিনিয়োগকারীকে এমন ক্ষতির শিকার হতে না হয়।

ট্যাগস

ব্রোকারেজ হাউজের স্বচ্ছ জবাবদিহিতায় কঠোর হচ্ছে ডিএসই

আপডেট সময় ৫ ঘন্টা আগে

শেয়ারবাজারে ব্রোকারেজ ফার্মগুলোর তদারকি জোরদার করতে এবং আর্থিক স্বচ্ছতা বাড়াতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। সম্প্রতি কিছু ব্রোকার-ডিলার ফার্মের আর্থিক অবস্থায় অসঙ্গতি ধরা পড়ার পর ডিএসই তার নিরীক্ষকদের প্যানেল আপগ্রেড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো অতীতের নিরীক্ষা ঘাটতিগুলো পূরণ করা, যা ব্রোকারেজ হাউসগুলোর প্রকৃত আর্থিক চিত্রকে অস্পষ্ট করে রেখেছিল।

ডিএসই গত ১লা জুলাই নিরীক্ষা সংস্থাগুলোকে তাদের প্যানেলে তালিকাভুক্ত করার জন্য নতুন নির্দেশিকা অনুমোদন করেছে। এই নির্দেশিকার মাধ্যমে ডিএসই ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট (TREC) ধারক অর্থাৎ ব্রোকার-ডিলার ফার্মগুলোর আর্থিক বিবরণী নিরীক্ষার মানদণ্ড আরও উন্নত করা হয়েছে।

নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি) এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর সাথে ইতিমধ্যে তালিকাভুক্ত নিরীক্ষকদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিএসইর প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পাশাপাশি ডিএসই অন্যান্য যোগ্য নিরীক্ষা সংস্থাগুলোকে ১৫ই জুলাইয়ের মধ্যে প্যানেলভুক্তির জন্য আবেদন করার আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সাধারণত বিবি এবং বিএসইসি তাদের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে থাকা ব্যাংক, নন-ব্যাংক এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর নিরীক্ষার জন্য পৃথক প্যানেল বজায় রাখে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেড, ব্যাঙ্কো সিকিউরিটিজ লিমিটেড, ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ লিমিটেড এবং শাহ মোহাম্মদ সগীর অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের মতো ব্রোকারেজ হাউসগুলোর বিরুদ্ধে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এই আত্মসাতের পেছনে একটি জালিয়াতিপূর্ণ সফটওয়্যার ডেটাবেসের ব্যবহার ধরা পড়ে। ডিএসই সন্দেহ করছে, এই আত্মসাতের ঘটনাগুলোতে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর প্রকৃত আর্থিক অবস্থা খুঁজে বের করতে নিরীক্ষকরা ব্যর্থ হয়েছিলেন।

ডিএসইর চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “ব্রোকারেজ হাউসগুলোর প্রকৃত আর্থিক অবস্থা বোঝা এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য একটি শক্তিশালী নিরীক্ষক প্যানেল অত্যাবশ্যক। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই নিরীক্ষকদের সঠিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কারণে ব্রোকারেজ ফার্মগুলোতে গ্রাহকদের তহবিল আত্মসাৎ হয়েছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই ধরনের ঘটনাগুলো শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমিয়ে দিয়েছে।

ডিএসই চেয়ারম্যান জোর দিয়ে বলেন, “এখন আমরা হাউসগুলোর আর্থিক অবস্থার একটি সঠিক ও ন্যায্য চিত্র পেতে ব্রোকারেজ ফার্মগুলোর জন্য নিরীক্ষক তালিকাভুক্তির নির্দেশিকা আপগ্রেড করেছি।”ডিএসই প্রাথমিকভাবে ২০২১ সালের জুনে ৬১টি নিরীক্ষা সংস্থা নিয়ে একটি নিরীক্ষক প্যানেল গঠন করেছিল। এই প্যানেলে বিবি এবং বিএসইসি দ্বারা তালিকাভুক্ত নিরীক্ষকদের পাশাপাশি আরও ছয়জন নিরীক্ষক অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ডিএসই-তালিকাভুক্ত ব্রোকারেজ ফার্মগুলোকে তাদের বার্ষিক আর্থিক বিবরণী নিরীক্ষার জন্য এই প্যানেল থেকে বিধিবদ্ধ নিরীক্ষক নিয়োগ করতে হবে। তবে কোনো নিরীক্ষক একটানা তিন বছরের বেশি সময়ের জন্য নিয়োগ পেতে পারবেন না।

নতুন নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক বা বিএসইসি-এর প্যানেল থেকে বাদ পড়া কোনো নিরীক্ষক, যারা ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের তালিকাভুক্তি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়, অথবা যারা অনৈতিক কার্যকলাপের সাথে জড়িত থাকে, তাদের ডিএসইর প্যানেলে তালিকাভুক্ত করা হবে না। এছাড়াও, যদি কোনো স্টক ব্রোকার-ডিলারের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী আইনি বিধান এবং সিকিউরিটিজ আইন অনুসরণ না করে প্রস্তুত করা হয়েছে বলে প্রমাণিত হয় এবং প্রকৃত ও ন্যায্য আর্থিক অবস্থান প্রতিফলিত না করে, তবে সেই নিরীক্ষককেও প্যানেল থেকে বাদ দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে ডিএসই একজন কর্মকর্তা জানান, “অতীতে মশিহর সিকিউরিটিজ লিমিটেড, ব্যাঙ্কো সিকিউরিটিজ, ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ এবং তামহা সিকিউরিটিজ ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে, অথচ নিরীক্ষকদের প্রতিবেদনে কোনো উল্লেখযোগ্য অনিয়ম প্রকাশ পায়নি।” এর ফলে ডিএসই ব্রোকারেজ হাউসগুলোর প্রকৃত অবস্থা বুঝতে পারেনি, যা শেষ পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের বড় ক্ষতির কারণ হয়েছিল। তিনি আরও যোগ করেন, “সেই ক্ষতিগুলো পূরণের জন্য বিনিয়োগকারী সুরক্ষা তহবিল থেকে বিতরণ করা পরিমাণ ছিল খুবই নগণ্য।”

এই প্রেক্ষাপটে, ডিএসই এখন বিনিয়োগকারী সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ব্রোকারেজ হাউসগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার উপর অধিক জোর দিচ্ছে। এর লক্ষ্য হলো, ভবিষ্যতে আর কোনো বিনিয়োগকারীকে এমন ক্ষতির শিকার হতে না হয়।