ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সোয়াইন ফ্লু শনাক্ত

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ১০:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩
  • 108

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রাণঘাতী আফ্রিকান সোয়াইন ফেভার (এএসএফ) শনাক্ত হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। এই ঘটনার পর বাংলাদেশি শূকরের মাংসের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে সতর্কতা জারি করেছে তাইওয়ান। পার্বত্য চট্টগ্রামে সোয়াইন ফ্লু শনাক্ত হওয়ায় তাইওয়ানের সেন্ট্রাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার (সিইওসি) নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বাংলাদেশ থেকে শূকরের মাংস আমদানি করা হলে ২ লাখ তাইওয়ানিজ ডলার জরিমানা করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার খামারে সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে একটি শূকর মারা যায়। মানিকছড়িতে শূকরের মৃত্যুর পরপরই তাইওয়ানের সেন্ট্রাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ওই সতর্কতা জারি করেছে। সিঙ্গাপুরের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম চ্যানেল নিউজ এশিয়ার (সিএনএ) বরাত দিয়ে তাইওয়ানের সংবাদমাধ্যম ফোকাস তাইওয়ানের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

সিইওসি বলেছে, চট্টগ্রামে আফ্রিকান সোয়াইন ফ্লুর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। সেখানকার একটি খামারের ৪১৪টি শূকরের মাঝে ২৭৪টিই এই রোগে আক্রান্ত হয়। পরে সেগুলোর মাঝে অন্তত ২২৭টি মারা যায়। বাংলাদেশে সোয়াইন ফ্লুর এটাই প্রথম কোনও প্রাদুর্ভাব। এর মানে এশিয়ায় এই রোগটির বিস্তার এখনও ঘটছে।

গত বৃহস্পতিবারের আগে পর্যন্ত বাংলাদেশকে এএসএফ মুক্ত বলে বিবেচনা করা হতো। বাংলাদেশ থেকে শূকর এবং শূকরের মাংস রপ্তানির অনুমতিও নেই। যে কারণে বাংলাদেশ থেকে শূকরের মাংসের পণ্য আমদানি করা হলে ৩০ হাজার নিউ তাইওয়ানিজ ডলার জরিমানা করতো তাইওয়ানের সেন্ট্রাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার।

শুক্রবার তাইওয়ানের প্রাণী ও উদ্ভিদ স্বাস্থ্য পরিদর্শন সংস্থা (এপিএইচআইএ) এএসএফ শনাক্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশকে যুক্ত করেছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে শূকরের মাংসের পণ্য আমদানিকারকের জরিমানার পরিমাণ পূর্বের তুলনায় কয়েক গুণ বাড়িয়ে ২ লাখ নিউ তাইওয়ানিজ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের সাথে তাইওয়ানের আকাশপথে সরাসরি কোনও ফ্লাইট নেই। তবে বাংলাদেশ থেকে শূকরের মাংস আমদানি ঠেকাতে এপিএইচআইএ বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে। এতে এপিএইচআইএর চারটি শাখার পাশাপাশি তাইওয়ানের অর্থ মন্ত্রণালয়ের শুল্ক প্রশাসন এবং ওশান অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিলের কোস্ট গার্ড প্রশাসনকে কোয়ারেন্টাইন বৃদ্ধি এবং তদন্ত জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রামের বিভাগীয় প্রাণি সম্পদ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে শূকরের মাংস রপ্তানি হয় না। পাহাড়ি এলাকায় কিছু ক্ষুদ্র উপজাতি গোষ্ঠী তাদের নিজেদের খাওয়ার জন্য শূকর পালন করে। ফলে বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে এ পশুর মাংস রপ্তানির কোনও সুযোগ নেই।

তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের সীমান্ত লাগোয়া ভারত ও মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশ থেকে অন্যান্য দেশে শূকরের মাংস যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। দুর্গম পার্বত্য অঞ্চল— বিশেষ করে মিজোরাম সীমান্তে তেমন নজরদারি নেই। তাই এই সীমান্ত পথ দিয়ে অবৈধভাবে শূকরের মাংস পাচারের সুযোগ রয়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেছেন, এএসএফে মৃত্যুর হার প্রায় শতভাগ।

আফ্রিকান সোয়াইন ফেভার (এএসএফ) অত্যন্ত সংক্রামক এবং প্রাণঘাতী ভাইরাস। সব বয়সী গৃহপালিত ও বন্য শূকরের শরীরে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে। তবে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য এই ভাইরাস হুমকি নয় এবং শূকর থেকে মানুষের শরীরেও এর সংক্রমণ হয় না। পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তার জন্যও সমস্যা নয় এই ভাইরাস।

ট্যাগস

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সোয়াইন ফ্লু শনাক্ত

আপডেট সময় ১০:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রাণঘাতী আফ্রিকান সোয়াইন ফেভার (এএসএফ) শনাক্ত হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। এই ঘটনার পর বাংলাদেশি শূকরের মাংসের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে সতর্কতা জারি করেছে তাইওয়ান। পার্বত্য চট্টগ্রামে সোয়াইন ফ্লু শনাক্ত হওয়ায় তাইওয়ানের সেন্ট্রাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার (সিইওসি) নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বাংলাদেশ থেকে শূকরের মাংস আমদানি করা হলে ২ লাখ তাইওয়ানিজ ডলার জরিমানা করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার খামারে সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে একটি শূকর মারা যায়। মানিকছড়িতে শূকরের মৃত্যুর পরপরই তাইওয়ানের সেন্ট্রাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ওই সতর্কতা জারি করেছে। সিঙ্গাপুরের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম চ্যানেল নিউজ এশিয়ার (সিএনএ) বরাত দিয়ে তাইওয়ানের সংবাদমাধ্যম ফোকাস তাইওয়ানের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

সিইওসি বলেছে, চট্টগ্রামে আফ্রিকান সোয়াইন ফ্লুর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। সেখানকার একটি খামারের ৪১৪টি শূকরের মাঝে ২৭৪টিই এই রোগে আক্রান্ত হয়। পরে সেগুলোর মাঝে অন্তত ২২৭টি মারা যায়। বাংলাদেশে সোয়াইন ফ্লুর এটাই প্রথম কোনও প্রাদুর্ভাব। এর মানে এশিয়ায় এই রোগটির বিস্তার এখনও ঘটছে।

গত বৃহস্পতিবারের আগে পর্যন্ত বাংলাদেশকে এএসএফ মুক্ত বলে বিবেচনা করা হতো। বাংলাদেশ থেকে শূকর এবং শূকরের মাংস রপ্তানির অনুমতিও নেই। যে কারণে বাংলাদেশ থেকে শূকরের মাংসের পণ্য আমদানি করা হলে ৩০ হাজার নিউ তাইওয়ানিজ ডলার জরিমানা করতো তাইওয়ানের সেন্ট্রাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার।

শুক্রবার তাইওয়ানের প্রাণী ও উদ্ভিদ স্বাস্থ্য পরিদর্শন সংস্থা (এপিএইচআইএ) এএসএফ শনাক্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশকে যুক্ত করেছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে শূকরের মাংসের পণ্য আমদানিকারকের জরিমানার পরিমাণ পূর্বের তুলনায় কয়েক গুণ বাড়িয়ে ২ লাখ নিউ তাইওয়ানিজ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের সাথে তাইওয়ানের আকাশপথে সরাসরি কোনও ফ্লাইট নেই। তবে বাংলাদেশ থেকে শূকরের মাংস আমদানি ঠেকাতে এপিএইচআইএ বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে। এতে এপিএইচআইএর চারটি শাখার পাশাপাশি তাইওয়ানের অর্থ মন্ত্রণালয়ের শুল্ক প্রশাসন এবং ওশান অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিলের কোস্ট গার্ড প্রশাসনকে কোয়ারেন্টাইন বৃদ্ধি এবং তদন্ত জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রামের বিভাগীয় প্রাণি সম্পদ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে শূকরের মাংস রপ্তানি হয় না। পাহাড়ি এলাকায় কিছু ক্ষুদ্র উপজাতি গোষ্ঠী তাদের নিজেদের খাওয়ার জন্য শূকর পালন করে। ফলে বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে এ পশুর মাংস রপ্তানির কোনও সুযোগ নেই।

তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের সীমান্ত লাগোয়া ভারত ও মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশ থেকে অন্যান্য দেশে শূকরের মাংস যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। দুর্গম পার্বত্য অঞ্চল— বিশেষ করে মিজোরাম সীমান্তে তেমন নজরদারি নেই। তাই এই সীমান্ত পথ দিয়ে অবৈধভাবে শূকরের মাংস পাচারের সুযোগ রয়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেছেন, এএসএফে মৃত্যুর হার প্রায় শতভাগ।

আফ্রিকান সোয়াইন ফেভার (এএসএফ) অত্যন্ত সংক্রামক এবং প্রাণঘাতী ভাইরাস। সব বয়সী গৃহপালিত ও বন্য শূকরের শরীরে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে। তবে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য এই ভাইরাস হুমকি নয় এবং শূকর থেকে মানুষের শরীরেও এর সংক্রমণ হয় না। পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তার জন্যও সমস্যা নয় এই ভাইরাস।