পরিবেশ সচেতন কৃষি এবং মৌমাছি পালনে সকলকে উৎসাহিত করতে একসাথে কাজ করছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ এবং বিএএসএ ফাউন্ডেশন। এই সহযোগীতাটি মধু হতে তৈরি পণ্য বিক্রি ও বাজারজাতকরণে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের সু্যােগ সৃষ্টি এবং মধু উৎপাদনকারীদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। মৌমাছি কৃষি খাতের একটি অপরিহার্য অংশ। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড মৌমাছি পালনে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে দেশের কৃষি খাতকে সুরক্ষিত রাখতে মৌমাছির সংখ্যা বৃদ্ধির উপর জোর প্রদান করে। পরাগায়নকারী হিসেবে মৌমাছি লালন-পালন টেকসই বাস্তুতন্ত্র গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এই উদ্যোগটি মানুষের খাদ্যতালিকায় মধু এবং মধু-ভিত্তিক পণ্য যোগ করে দৈনন্দিন পুষ্টি তালিকায় নতুন মাত্রা যোগ করবে। এই যৌথ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে সহায়তা, টেকসই যান্ত্রিকীকরণ, পরাগায়ন রক্ষা, টেকসই কৃষি প্রচার এবং স্থানীয় উদ্যোক্তাদের জীবিকা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে ক্ষমতায়ন করতে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ২৯ মিলিয়ন টাকার অনুদান ঘোষণা করেছে।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড এবং বিএএসএ ফাউন্ডেশনের মধ্যে এই উদ্যোগটির তিনটি লক্ষ্য রয়েছে। প্রথমত, প্রায় ৮০০ জন মধু চাষীকে স্বাস্থ্যবিধির নিয়ম মেনে মধু উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে শেখানো। দ্বিতীয় লক্ষ্য হল মধু উৎপাদনে যান্ত্রিকীকরণ ও গুণমান ব্যবস্থাপনার সরঞ্জাম ক্রয়ে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা প্রদান করা এবং তৃতীয়ত, ফরোয়ার্ড মার্কেট লিঙ্কেজের মাধ্যমে মধু ও এর দ্বারা উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাতকরণ নিশ্চিত করা। এছাড়াও, প্রকল্পটি মৌমাছি পালনের বাক্স, মৌচাক তৈরির শিট মেশিন, মধু আহরণের যন্ত্রাদি, মধু প্রক্রিয়াজাতকরণ মেশিন এবং সংরক্ষণের জন্য ফুডগ্রেড পাত্র সরবরাহ করবে। এর ফলে মধু উৎপাদনের সাথে নিয়োজিত ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডিং এবং বিপণন সহায়তা নিশ্চিত হবে।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার নাসের এজাজ বিজয় বলেন, “মৌমাছি পালনে আমাদের এই বিনিয়োগ শুধুমাত্র মৌমাছির জনসংখ্যার বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে না বরং ফসলের পরাগায়ন, জীববৈচিত্র্য এবং সামগ্রিক কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমাদের দেশের কৃষিখাতকে সমৃদ্ধশালী করতে সহযোগীতা করে। আমরা ৮০০ মৌ-চাষী এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের জীবনমান উন্নয়নে অংশীদার হতে পেরে আনন্দিত। তাছাড়া, বিএএসএ ফাউন্ডেশনের সাথে পরিবেশ সংরক্ষণ ও পরিবেশগত সম্প্রীতির বৃহত্তর লক্ষ্য পূরণের সম্মিলিত প্রয়াসে অবদান রাখতে পেরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড গর্বিত।“
বিএএসএ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক একেএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, “বিএএসএ ফাউন্ডেশন গত দুই দশক ধরে মৌমাছি লালন-পালন সংক্রান্ত ব্যবসা ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষের উন্নয়নে কাজ করে আসছে। মৌচাষ কার্যক্রমে আমাদের বাস্তুতন্ত্র বজায় রাখা, কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, পুষ্টির ঘাটতি দূর করা, মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি-সহ নানাবিধ সম্ভাবনার সুযোগ রয়েছে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ এবং বিএএসএ ফাউন্ডেশনের মধ্যকার এই চুক্তিটি কৃষি খাতে প্রান্তিক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ অবদান রাখবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।”
দেশের দীর্ঘমেয়াদী অংশীদার হিসাবে, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি এবং স্থিতিস্থাপকতার অনুপ্রেরণামূলক গল্পের সাথে যুক্ত হয়েছে। ১১৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে, ব্যাংক এই দেশে বিনিয়োগের মাধ্যমে বাণিজ্য ও উন্নয়নের জন্য, বৃহত্তর অন্তর্ভুক্তি প্রচারের জন্য পরিষেবা প্রসারিত করা এবং স্টেকহোল্ডারদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করার জন্য নিবেদিত রয়েছে। বিগত বছরগুলোয় সামাজিক কল্যাণে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের সম্পৃক্ততা ও টেকসই উদ্যোগগুলো অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের দিকে ফোকাস করেছে, বিশেষ করে; স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আর্থিক শিক্ষা, কৃষি উদ্ভাবনে সমর্থন, খেলাধুলা, শিল্পকলা, সাংস্কৃতিক প্রচার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই ইত্যাদি।
বিএএসএ ফাউন্ডেশন একটি উন্নয়ন সংস্থা যা দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে চায়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে, বিএএসএ ফাউন্ডেশন মৌলিক শিক্ষার ব্যবস্থা, ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা, জল, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি, পরিবেশ জলবায়ুজনিত সমস্যা এবং টেকসই উন্নয়নের দিকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে নজর দিয়ে আসছে। বর্তমানে, প্রতিষ্ঠানটি সারা বাংলাদেশে ২০টি জেলায় কাজ করছে।