ঢাকা , শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাতিসংঘের প্রস্তাবে হতাশা : কিছুতেই থামছে না ইসরায়েলের বোমা

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৫:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩
  • 141

হামাসের অস্তিত্ব মুছে ফেলার নামে গাজার অসহায় মানুষের ওপর বেপরোয়া বোমাবর্ষণ চালিয়েই যাচ্ছে ইসরায়েল। অব্যাহতভাবে ঝরছে বেসামরিক লোকের প্রাণ। এমন অবস্থায়ও শুক্রবার গৃহীত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহবান না থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছে ফিলিস্তিনিরা। তাদের মতে, নিরাপত্তা পরিষদের এ প্রস্তাব নির্মম বাস্তবতার পরিবর্তনে কোনো ভূমিকা রাখবে না।

গাজা উপত্যকায় গতকাল শনিবারও তুমুল বোমাবর্ষণ করে ইসরায়েল। এদিন নুসাইরাত শরণার্থী ক্যাম্প ও খান ইউনিসে হামলার খবর মিলেছে। গতকাল ইসরায়েলি হামলায় দক্ষিণের খান ইউনিসে সকালবেলার আকাশ কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। উত্তর গাজায়ও কালো ধোঁয়া দেখা যায়।

হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, নুসাইরাত ক্যাম্পে হামলায় অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া গাজার অন্যান্য এলাকায়ও হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। নির্বিচার গুলি আর বোমার কারণে সব লাশ দাফনও করা যাচ্ছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জীবন বাঁচাতে প্রিয়জনের লাশ ফেলেই পালাতে হয়েছে স্বজনদের।

গাজার সিভিল ডিফেন্স গতকাল জানায়, তারা উত্তর গাজার বেইত লাহিয়া শহরের বিভিন্ন সড়কে পচাগলা বহু লাশ সংগ্রহ করেছে।


গাজার কোনো জায়গাই নিরাপদ নয়

ইসরায়েল আবার গাজার মধ্যাঞ্চল থেকে বাসিন্দাদের সরে যেতে নির্দেশ দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরডাব্লিউএ)। জাতিসংঘের সংস্থাটির প্রধান টমাস হোয়াইট গতকাল বলেছেন, ইসরায়েলের এমন নির্দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এদের অনেকে এরই মধ্যে উত্তর গাজা থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে এসেছিল।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি জানান, গত শুক্রবার ইসরায়েল গাজার মধ্যাঞ্চল থেকে লোকজনকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

তাদের যেখানে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, সেখানেও বিমান হামলা হচ্ছে। কোথাও নিরাপদ জায়গা নেই।
২০০ হামাস ও জিহাদ সদস্য গ্রেপ্তার

হামাস ও ইসলামিক জিহাদ সংগঠনের ২০০ সদস্যকে গত সপ্তাহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে, সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে লুকিয়ে ছিল। তারা স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেছে। ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ৭০০ ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। তবে ইসরায়েলের এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি বলে সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে।

‘আধুনিক যুগের গণহত্যা’

গাজা সংঘাতকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, নেতানিয়াহুর এই মন্তব্য ‘বর্বরতাকে ন্যায্যতা’ দেওয়া ছাড়া আর কিছু নয়।

ইসরায়েলের সমর্থকরাও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সঙ্গে এই সংঘাতের তুলনা করে চলেছে। কিন্তু জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলাকে আধুনিক যুগের গণহত্যা বলে আখ্যা দিয়েছে।

হামাসের হামলার প্রতিশোধ নিতে গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ব্যাপক আক্রমণ শুরু করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত গাজায় ২০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

সূত্র : আলজাজিরা, বিবিসি,

ট্যাগস

জাতিসংঘের প্রস্তাবে হতাশা : কিছুতেই থামছে না ইসরায়েলের বোমা

আপডেট সময় ০৫:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩

হামাসের অস্তিত্ব মুছে ফেলার নামে গাজার অসহায় মানুষের ওপর বেপরোয়া বোমাবর্ষণ চালিয়েই যাচ্ছে ইসরায়েল। অব্যাহতভাবে ঝরছে বেসামরিক লোকের প্রাণ। এমন অবস্থায়ও শুক্রবার গৃহীত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহবান না থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছে ফিলিস্তিনিরা। তাদের মতে, নিরাপত্তা পরিষদের এ প্রস্তাব নির্মম বাস্তবতার পরিবর্তনে কোনো ভূমিকা রাখবে না।

গাজা উপত্যকায় গতকাল শনিবারও তুমুল বোমাবর্ষণ করে ইসরায়েল। এদিন নুসাইরাত শরণার্থী ক্যাম্প ও খান ইউনিসে হামলার খবর মিলেছে। গতকাল ইসরায়েলি হামলায় দক্ষিণের খান ইউনিসে সকালবেলার আকাশ কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। উত্তর গাজায়ও কালো ধোঁয়া দেখা যায়।

হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, নুসাইরাত ক্যাম্পে হামলায় অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া গাজার অন্যান্য এলাকায়ও হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। নির্বিচার গুলি আর বোমার কারণে সব লাশ দাফনও করা যাচ্ছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জীবন বাঁচাতে প্রিয়জনের লাশ ফেলেই পালাতে হয়েছে স্বজনদের।

গাজার সিভিল ডিফেন্স গতকাল জানায়, তারা উত্তর গাজার বেইত লাহিয়া শহরের বিভিন্ন সড়কে পচাগলা বহু লাশ সংগ্রহ করেছে।


গাজার কোনো জায়গাই নিরাপদ নয়

ইসরায়েল আবার গাজার মধ্যাঞ্চল থেকে বাসিন্দাদের সরে যেতে নির্দেশ দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরডাব্লিউএ)। জাতিসংঘের সংস্থাটির প্রধান টমাস হোয়াইট গতকাল বলেছেন, ইসরায়েলের এমন নির্দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এদের অনেকে এরই মধ্যে উত্তর গাজা থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে এসেছিল।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি জানান, গত শুক্রবার ইসরায়েল গাজার মধ্যাঞ্চল থেকে লোকজনকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

তাদের যেখানে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, সেখানেও বিমান হামলা হচ্ছে। কোথাও নিরাপদ জায়গা নেই।
২০০ হামাস ও জিহাদ সদস্য গ্রেপ্তার

হামাস ও ইসলামিক জিহাদ সংগঠনের ২০০ সদস্যকে গত সপ্তাহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে, সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে লুকিয়ে ছিল। তারা স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেছে। ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ৭০০ ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। তবে ইসরায়েলের এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি বলে সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে।

‘আধুনিক যুগের গণহত্যা’

গাজা সংঘাতকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, নেতানিয়াহুর এই মন্তব্য ‘বর্বরতাকে ন্যায্যতা’ দেওয়া ছাড়া আর কিছু নয়।

ইসরায়েলের সমর্থকরাও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সঙ্গে এই সংঘাতের তুলনা করে চলেছে। কিন্তু জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলাকে আধুনিক যুগের গণহত্যা বলে আখ্যা দিয়েছে।

হামাসের হামলার প্রতিশোধ নিতে গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ব্যাপক আক্রমণ শুরু করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত গাজায় ২০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

সূত্র : আলজাজিরা, বিবিসি,