ঢাকা , বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম ও ইহুদিবিদ্বেষ সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনা-অপরাধ বেড়েছে

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০১:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৪
  • 131

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এবং উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যুদ্ধের জেরে গত চার মাসে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম ও ইহুদিবিদ্বেষ সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনা-অপরাধ ব্যাপক ভাবে বেড়েছে।

মার্কিন মুসলিমদের বৃহত্তম সংস্থা দ্য কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স (কেয়ার) সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর— তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে মুসলিম ও ইসলামবিদ্বেষী ঘটনা ও অপরাধ সংক্রান্ত ৩ হাজার ৫৭৮টি অভিযোগ এসেছে সংস্থাটির কাছে। চাকরিক্ষেত্রে বঞ্চনা-বৈষম্য ও চাকরিচ্যুতি, ঘৃণামূলক অপরাধ-ঘটনা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বৈষম্যমূলক নীতি ও ঘটনাসহ আরও বিভিন্ন বিদ্বেষপূর্ণ আচরণের বিবরণ রয়েছে এসব অভিযোগের মধ্যে।

‘অভিযোগের সংখ্যা বিশ্লেষণ করে আমরা দেখতে পেয়েছি যে ২০২২ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরের তুলনায় ২০২৩ সালের এই সময়সীমায় শতকরা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম বিদ্বেষপূর্ণ ঘটনা ও অপরাধ বেড়েছে ১৭৮ শতাংশ। এই সময়সীমার মধ্যে চাকরিক্ষেত্রে বৈষম্যের ঘটনা ঘটেছে ৬৬২টি, বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মুসলিমদের প্রতি ঘৃণামূলক আচরণ ও অপরাধ ঘটেছে অন্তত ৪৭২ বার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বঞ্চনা-বৈষম্য সংখ্রান্ত বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে ৪৪৮ বার। এসব ঘটনায় প্রমাণিত হয় যে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে মুসলিমবিদ্বেষ এবং ফিলিস্তিনবিদ্বেষের ঢেউ চলছে,’ বিবৃতিতে বলেছে কেয়ার।

এদিকে,গাজা যুদ্ধের গত প্রায় চার মাসে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমবিদ্বেষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ইহুদিবিদ্বেষী মনোভাবও। দেশটিতে বসবাসকারী ইহুদিদের বৃহত্তম সংস্থা অ্যান্টি ডিফেমেশন লীগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে যত ইহুদিবিদ্বেষী তৎপরাত ও ঘটনা ঘটেছে, শতকরা হিসেবে তা গত ২০২২ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়সীমার তুলনায় ৩৬০ শতাংশ বেশি।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালিয়ে সামরিক-বেসামরিক ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিকসহ ১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে হামাস যোদ্ধারা। সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় আরও ২৪০ জন ইসরায়েলি এবং অন্যান্য দেশের নাগরিককে।

বস্তুত, ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে সেদিন প্রথম একদিনে এতজন মানুষের হত্যা দেখেছে ইসরায়েল। অভূতপূর্ব সেই হামলার জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী এবং তার এক সপ্তাহ পর বিমান বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।

ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার বোমাবর্ষণে গত প্রায় সাড়ে চার মাসে গাজায় নিহত হয়েছেন ২৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার এবং ইসরায়েলি বাহিনীর বোমাবর্ষণে ধসে যাওয়া বিভিন্ন ভবনের ধ্বংস্তূপের নীচে এখন ও চাপা পড়ে আছেন অন্তত কয়েক হাজার মানুষ।

গত ২৫ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঘোষিত এক মানবিক বিরতির সাত দিনে মোট ১০৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। বাকি ১৩২ জন এখনও তাদের হাতে আটক রয়েছেন।

এই যুদ্ধের শুরু থেকেই ইসরায়েলকে রাজনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে এই যুদ্ধের শেষে মধ্যপ্রাচ্যের আল আকসা অঞ্চলে ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েল নামে স্বাধীন দু’টি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে ওয়াশিংটন।

তবে ওয়াশিংটনের এই অবস্থানকে সমর্থন করছে না ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা। কিছুদিন আগে সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেছেন, স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

ট্যাগস

যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম ও ইহুদিবিদ্বেষ সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনা-অপরাধ বেড়েছে

আপডেট সময় ০১:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৪

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এবং উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যুদ্ধের জেরে গত চার মাসে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম ও ইহুদিবিদ্বেষ সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনা-অপরাধ ব্যাপক ভাবে বেড়েছে।

মার্কিন মুসলিমদের বৃহত্তম সংস্থা দ্য কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স (কেয়ার) সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর— তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে মুসলিম ও ইসলামবিদ্বেষী ঘটনা ও অপরাধ সংক্রান্ত ৩ হাজার ৫৭৮টি অভিযোগ এসেছে সংস্থাটির কাছে। চাকরিক্ষেত্রে বঞ্চনা-বৈষম্য ও চাকরিচ্যুতি, ঘৃণামূলক অপরাধ-ঘটনা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বৈষম্যমূলক নীতি ও ঘটনাসহ আরও বিভিন্ন বিদ্বেষপূর্ণ আচরণের বিবরণ রয়েছে এসব অভিযোগের মধ্যে।

‘অভিযোগের সংখ্যা বিশ্লেষণ করে আমরা দেখতে পেয়েছি যে ২০২২ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরের তুলনায় ২০২৩ সালের এই সময়সীমায় শতকরা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম বিদ্বেষপূর্ণ ঘটনা ও অপরাধ বেড়েছে ১৭৮ শতাংশ। এই সময়সীমার মধ্যে চাকরিক্ষেত্রে বৈষম্যের ঘটনা ঘটেছে ৬৬২টি, বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মুসলিমদের প্রতি ঘৃণামূলক আচরণ ও অপরাধ ঘটেছে অন্তত ৪৭২ বার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বঞ্চনা-বৈষম্য সংখ্রান্ত বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে ৪৪৮ বার। এসব ঘটনায় প্রমাণিত হয় যে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে মুসলিমবিদ্বেষ এবং ফিলিস্তিনবিদ্বেষের ঢেউ চলছে,’ বিবৃতিতে বলেছে কেয়ার।

এদিকে,গাজা যুদ্ধের গত প্রায় চার মাসে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমবিদ্বেষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ইহুদিবিদ্বেষী মনোভাবও। দেশটিতে বসবাসকারী ইহুদিদের বৃহত্তম সংস্থা অ্যান্টি ডিফেমেশন লীগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে যত ইহুদিবিদ্বেষী তৎপরাত ও ঘটনা ঘটেছে, শতকরা হিসেবে তা গত ২০২২ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়সীমার তুলনায় ৩৬০ শতাংশ বেশি।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালিয়ে সামরিক-বেসামরিক ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিকসহ ১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে হামাস যোদ্ধারা। সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় আরও ২৪০ জন ইসরায়েলি এবং অন্যান্য দেশের নাগরিককে।

বস্তুত, ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে সেদিন প্রথম একদিনে এতজন মানুষের হত্যা দেখেছে ইসরায়েল। অভূতপূর্ব সেই হামলার জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী এবং তার এক সপ্তাহ পর বিমান বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।

ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার বোমাবর্ষণে গত প্রায় সাড়ে চার মাসে গাজায় নিহত হয়েছেন ২৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার এবং ইসরায়েলি বাহিনীর বোমাবর্ষণে ধসে যাওয়া বিভিন্ন ভবনের ধ্বংস্তূপের নীচে এখন ও চাপা পড়ে আছেন অন্তত কয়েক হাজার মানুষ।

গত ২৫ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঘোষিত এক মানবিক বিরতির সাত দিনে মোট ১০৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। বাকি ১৩২ জন এখনও তাদের হাতে আটক রয়েছেন।

এই যুদ্ধের শুরু থেকেই ইসরায়েলকে রাজনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে এই যুদ্ধের শেষে মধ্যপ্রাচ্যের আল আকসা অঞ্চলে ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েল নামে স্বাধীন দু’টি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে ওয়াশিংটন।

তবে ওয়াশিংটনের এই অবস্থানকে সমর্থন করছে না ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা। কিছুদিন আগে সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেছেন, স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।