ঢাকা , শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর সরকার

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৩:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪
  • 132

রমজান মাস এলেই আলোচনায় আসে বাজার ‘সিন্ডিকেট’। এই সিন্ডিকেট বলতে একাধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মিলে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া বা নির্দিষ্ট স্বার্থ হাসিলকে বোঝানো হয়। এ কাজ ভালো কিংবা খারাপ দুটোই হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে সিন্ডিকেট বলতে মূলত ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট বোঝায়। যেটি নেতিবাচক অর্থেই ব্যবহার হয় আসছে। যেখানে এক দল ব্যবসায়ী বাজারে আধিপত্য বিস্তার করে ইচ্ছামতো পণ্যের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে এবং দাম বাড়িয়ে অবৈধভাবে মুনাফা অর্জন করে।

অভিযোগ আছে, এরকম ব্যবসায়ীরা অনেক সময় বাজারে পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। অর্থাৎ পণ্যের উৎপাদনে কোনও ঘাটতি না থাকা এবং সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক থাকার পরও তারা গুদামজাত করে এবং সংকটের কথা বলে বেশি দামে বিক্রি করে। কিছুদিন পর পর কোন না কোন পণ্য সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ছে। কখনও মুরগী, পেঁয়াজ, আটা, সয়াবিন তেল, কাঁচা মরিচ, ডিম, খেজুর, এমনকি ডাব ও রোগীকে দেয়া স্যালাইনও বাদ যাচ্ছে না।

রমজান মাসে এই বাজার সিন্ডেকেট আরও বেশি সক্রিয় হয়। যদিও রমজান মাসটি পুণ্যের হলেও বেশি মুনাফার আশায় থাকেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। লাভ করতেও মরিয়া তারা। একটি রীতিতে পরিণত করেছে এসব ব্যবসায়ীরা। ব্যতিক্রম ঘটছে না এবারও। এবার মাসখানেক আগে থেকে নানা অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়াতে শুরু করেছেন তারা। সরকার এবার রোজায় বাজার নিয়ন্ত্রণে ভোক্তাদের নানা আশ্বাস দিলেও সম্ভব হচ্ছে না। ছোলা, বেগুন, লেবু, মাছ-মাংস প্রায় সবই চড়া দামে কিনতে হচ্ছে।

যদিও বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। রমজান মাসে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ অব্যাহত রাখতে মজুতদারির বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার প্রধান বলেছেন, ‘সরবরাহের ক্ষেত্রেও নানা সমস্যার সৃষ্টি হয় অথবা একটা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়। কেউ কেউ মজুতদারি করে পচিয়ে ফেলবে কিন্তু বাজারে দেবে না—এই জাতীয় অবস্থার সৃষ্টি করে। সেই দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি এবং কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেন সাধারণ মানুষের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছাতে পারে সেদিকে সবাইকে যথাযথভাবে নজর দিতে হবে।’

এ ছাড়া আটটি বিভাগে পর্যায়ক্রমে কৃষিপণ্য সংরক্ষণাগার তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে ভিন্ন ভিন্ন চেম্বার থাকবে। যাতে দীর্ঘ মেয়াদে পণ্যগুলো মেইনটেন করে বাজারের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা যায়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান, বাজারে নিত্যপণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় আলাদাভাবে কাজ করছে। মৎস্য মন্ত্রণালয় থেকে মাছ ও মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে বাজার মনিটিং কার্যক্রম চালাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া রমজান উপলক্ষে নিম্ন আয়ের এক কোটি উপকারভোগী কার্ডধারী পরিবারের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে চালসহ টিসিবির পণ্যাদি (ভোজ্য তেল ও ডাল) সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রয় কার্যক্রম বিক্রয় ৭ মার্চ থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘রমজান মাসে সরকারকে বিব্রত করার জন্য সিন্ডিকেট থাকতে পারে। এখন আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে এসব অপকর্মের সঙ্গে বিএনপির সম্পৃক্ততা আছে কি না।’

সিন্ডিকেটের প্রভাব বিস্তারের পেছনে বাংলাদেশের ইনফরমাল বাজার ব্যবস্থাপনাকে দুষছেন অর্থনীতিবিদ ও বাজার বিশ্লেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, ‘সাধারণত, ফরমাল বাজার সিস্টেমে পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তার হাত পর্যন্ত পৌঁছাতে যতো এজেন্ট কাজ করে তাদের সবাই নিবন্ধিত থাকেন বা প্রত্যেকের আলাদা বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর থাকে। অনিবন্ধিত কেউ এই বাজারে লেনদেন করতে পারে না। সেইসাথে, সরকারের নজরদারি সংস্থা, বাজারের প্রতিটি পর্যায়ে লেনদেনের তথ্য খতিয়ে দেখতে পারে। কে কী পরিমাণ পণ্য মজুদ রাখছেন, কে কী পরিমাণ পণ্য আমদানি করছেন বা বিক্রি করছেন, কী দামে বিক্রি করছেন। সব তথ্য সরকারের হাতে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থাপনায় এর কোন সুযোগ সুবিধা নেই। এ কারণে সরকারের কোন সংস্থা বাজারের কোন লেনদেন নজরদারি করতে বা তথ্য রেকর্ড করতে পারে না। ফলে নিয়ন্ত্রণ আরোপও সম্ভব হয় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা সরকারের ঘোষিত দামে বিক্রি করছে না, লেনদেনের রিসিট রাখছে না। মজুদের তথ্য গোপন করছে। এভাবে তারা বাজারে একটি অযাচিত প্রভাব বিস্তার করছে। এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সমন্বয়ে আলাদাভাবে টাস্কফোর্স গঠন করা এবং সেই টাস্কফোর্সের পরামর্শে পূর্ণাঙ্গ সুপারিশমালা তৈরি করা এবং সে অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করা।’

ট্যাগস

বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর সরকার

আপডেট সময় ০৩:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪

রমজান মাস এলেই আলোচনায় আসে বাজার ‘সিন্ডিকেট’। এই সিন্ডিকেট বলতে একাধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মিলে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া বা নির্দিষ্ট স্বার্থ হাসিলকে বোঝানো হয়। এ কাজ ভালো কিংবা খারাপ দুটোই হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে সিন্ডিকেট বলতে মূলত ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট বোঝায়। যেটি নেতিবাচক অর্থেই ব্যবহার হয় আসছে। যেখানে এক দল ব্যবসায়ী বাজারে আধিপত্য বিস্তার করে ইচ্ছামতো পণ্যের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে এবং দাম বাড়িয়ে অবৈধভাবে মুনাফা অর্জন করে।

অভিযোগ আছে, এরকম ব্যবসায়ীরা অনেক সময় বাজারে পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। অর্থাৎ পণ্যের উৎপাদনে কোনও ঘাটতি না থাকা এবং সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক থাকার পরও তারা গুদামজাত করে এবং সংকটের কথা বলে বেশি দামে বিক্রি করে। কিছুদিন পর পর কোন না কোন পণ্য সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ছে। কখনও মুরগী, পেঁয়াজ, আটা, সয়াবিন তেল, কাঁচা মরিচ, ডিম, খেজুর, এমনকি ডাব ও রোগীকে দেয়া স্যালাইনও বাদ যাচ্ছে না।

রমজান মাসে এই বাজার সিন্ডেকেট আরও বেশি সক্রিয় হয়। যদিও রমজান মাসটি পুণ্যের হলেও বেশি মুনাফার আশায় থাকেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। লাভ করতেও মরিয়া তারা। একটি রীতিতে পরিণত করেছে এসব ব্যবসায়ীরা। ব্যতিক্রম ঘটছে না এবারও। এবার মাসখানেক আগে থেকে নানা অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়াতে শুরু করেছেন তারা। সরকার এবার রোজায় বাজার নিয়ন্ত্রণে ভোক্তাদের নানা আশ্বাস দিলেও সম্ভব হচ্ছে না। ছোলা, বেগুন, লেবু, মাছ-মাংস প্রায় সবই চড়া দামে কিনতে হচ্ছে।

যদিও বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। রমজান মাসে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ অব্যাহত রাখতে মজুতদারির বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার প্রধান বলেছেন, ‘সরবরাহের ক্ষেত্রেও নানা সমস্যার সৃষ্টি হয় অথবা একটা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়। কেউ কেউ মজুতদারি করে পচিয়ে ফেলবে কিন্তু বাজারে দেবে না—এই জাতীয় অবস্থার সৃষ্টি করে। সেই দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি এবং কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেন সাধারণ মানুষের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছাতে পারে সেদিকে সবাইকে যথাযথভাবে নজর দিতে হবে।’

এ ছাড়া আটটি বিভাগে পর্যায়ক্রমে কৃষিপণ্য সংরক্ষণাগার তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে ভিন্ন ভিন্ন চেম্বার থাকবে। যাতে দীর্ঘ মেয়াদে পণ্যগুলো মেইনটেন করে বাজারের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা যায়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান, বাজারে নিত্যপণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় আলাদাভাবে কাজ করছে। মৎস্য মন্ত্রণালয় থেকে মাছ ও মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে বাজার মনিটিং কার্যক্রম চালাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া রমজান উপলক্ষে নিম্ন আয়ের এক কোটি উপকারভোগী কার্ডধারী পরিবারের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে চালসহ টিসিবির পণ্যাদি (ভোজ্য তেল ও ডাল) সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রয় কার্যক্রম বিক্রয় ৭ মার্চ থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘রমজান মাসে সরকারকে বিব্রত করার জন্য সিন্ডিকেট থাকতে পারে। এখন আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে এসব অপকর্মের সঙ্গে বিএনপির সম্পৃক্ততা আছে কি না।’

সিন্ডিকেটের প্রভাব বিস্তারের পেছনে বাংলাদেশের ইনফরমাল বাজার ব্যবস্থাপনাকে দুষছেন অর্থনীতিবিদ ও বাজার বিশ্লেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, ‘সাধারণত, ফরমাল বাজার সিস্টেমে পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তার হাত পর্যন্ত পৌঁছাতে যতো এজেন্ট কাজ করে তাদের সবাই নিবন্ধিত থাকেন বা প্রত্যেকের আলাদা বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর থাকে। অনিবন্ধিত কেউ এই বাজারে লেনদেন করতে পারে না। সেইসাথে, সরকারের নজরদারি সংস্থা, বাজারের প্রতিটি পর্যায়ে লেনদেনের তথ্য খতিয়ে দেখতে পারে। কে কী পরিমাণ পণ্য মজুদ রাখছেন, কে কী পরিমাণ পণ্য আমদানি করছেন বা বিক্রি করছেন, কী দামে বিক্রি করছেন। সব তথ্য সরকারের হাতে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থাপনায় এর কোন সুযোগ সুবিধা নেই। এ কারণে সরকারের কোন সংস্থা বাজারের কোন লেনদেন নজরদারি করতে বা তথ্য রেকর্ড করতে পারে না। ফলে নিয়ন্ত্রণ আরোপও সম্ভব হয় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা সরকারের ঘোষিত দামে বিক্রি করছে না, লেনদেনের রিসিট রাখছে না। মজুদের তথ্য গোপন করছে। এভাবে তারা বাজারে একটি অযাচিত প্রভাব বিস্তার করছে। এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সমন্বয়ে আলাদাভাবে টাস্কফোর্স গঠন করা এবং সেই টাস্কফোর্সের পরামর্শে পূর্ণাঙ্গ সুপারিশমালা তৈরি করা এবং সে অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করা।’