ঢাকা , শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যে শর্তে ইসরায়েলের সঙ্গে সশস্ত্র লড়াই বন্ধে ইচ্ছুক হামাস

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০২:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
  • 111

ইসরায়েলের সঙ্গে সশস্ত্র লড়াই বন্ধে ইচ্ছুক ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। সংগঠনটির কয়েকজন নেতা এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে তাদের একটি শর্ত রয়েছে। তা হলো, ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরায়েল যেসব অঞ্চল দখল করেছিল, ওই অঞ্চলগুলো নিয়ে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। সূত্র: সিএনএন

২০০৭ সাল থেকে গাজা শাসন করছে হামাস। ইসরায়েলের পতনের লক্ষ্যে বিলুপ্তির লক্ষ্য নিয়ে লড়াই করছে সংগঠনটি। তবে গাজায় ইসরায়েলের চলমান হামলা, তান্ডব ও গণহত্যায় উপত্যকাটির অনিশ্চিত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সংগঠনটির নেতাদের এ ইঙ্গিত থেকে মনে হচ্ছে তারা আগের কঠোর অবস্থান থেকে কিছুটা নমনীয় হয়েছেন।

হামাসের এই নেতাদের একজন তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বসবাসকারী বাসেম নাইম। তিনি হামাসের রাজনৈতিক শাখার সদস্য। বৃহস্পতিবার নাইম যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, জেরুজালেমকে রাজধানী করে যদি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করা হয়, আর শরণার্থীদের সেখানে ফেরার অধিকার দেওয়া হয়, তাহলে আল কাশেম ব্রিগেডকে (হামাসের সামরিক শাখা) ভবিষ্যতে জাতীয় সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

হামাসের শর্তগুলো মেনে নেওয়া হলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই ‘অবশ্যই’ বন্ধ করা হবে বলেও জানিয়েছেন বাসেম নাইম। তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) যদি তাদের গঠনতন্ত্র ও প্রশাসনে ‘সংস্কার’ আনে, তাহলে হামাসও পিএলওতে যোগ দিতে চায় ।

হামাসের নেতারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শর্ত সাপেক্ষে অস্ত্র প্রত্যাহারের কথা বললেও আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এখনো কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। আর বিদেশে অবস্থান করা হামাসের নেতাদের বক্তব্য গাজায় থাকা সংগঠনটির সামরিক শাখার নেতাদের চিন্তাভাবনার সঙ্গে মেলে কি না, তা স্পষ্ট নয়।

হামাস বরাবরই স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠায় দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের বিরোধিতা করে আসছে। দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান অনুযায়ী, ইসরায়েলের পাশাপাশি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করা হবে। এর বিপরীতে এত দিন ফিলিস্তিনের ঐতিহাসিক সব অঞ্চল নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে তোলার কথা বলে এসেছে হামাস। এসব অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে আজকের ইসরায়েল, অধিকৃত পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা।

হামাসের এই প্রস্তাব সম্পর্কে আগে কিছু শোনেননি ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক দল প্যালেস্টানিয়ান ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভের প্রেসিডেন্ট মুস্তফা বারগুতি মারওয়ান। তবে এ তথ্য সত্য হলে তা একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি বলে মনে করেন তিনি। মারওয়ান বলেন, এটি এই অর্থে গুরুত্বপূর্ণ যে দখলদারিত্বের মধ্যে থাকার কারণে ফিলিস্তিনিরা প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছেন। যদি দখলদারিত্ব না থাকে, তাহলে তাদের প্রতিরোধেরও প্রয়োজন পড়বে না।

১৯৬৭ সালের যুদ্ধে পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা দখল করে নেয় ইসরায়েল। এই অঞ্চলগুলো আন্তর্জাতিক আইনের অধীন বলে বিবেচনা করা হয়। আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অধিকাংশই এসব অঞ্চলকে দখলকৃত বলে মনে করে। এই অঞ্চলগুলো নিয়েই ভবিষ্যতে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করতে চান ফিলিস্তিনিরা। তবে দীর্ঘদিন ধরেই তাদের এমন আকাঙ্ক্ষার বিরোধিতা করে আসছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। তার দাবি, এতে ইসরায়েলের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে।

মুস্তফা বারগুতি মারওয়ান বলেন, হামাস ২০০৭ সালের অবস্থানে ফিরে যাওয়ার ইঙ্গিত করেছে। তখন ফিলিস্তিনি জাতীয় ঐক্যের সরকারের নেতৃত্বে ছিল তারা। ওই সময়েও হামাস ১৯৬৭ সালের সীমানা অনুযায়ী ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী ছিল। এ ছাড়া তারা পিএলওতে যোগ দেওয়ারও পক্ষে। তবে সংগঠনটির এমন কোনো পদক্ষেপে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইসরায়েল বা নব্বইয়ের দশকে পিএলওর সম্মতিতে হওয়া অসলো চুক্তি স্বীকৃতি পেয়ে যাবে না।

ট্যাগস

যে শর্তে ইসরায়েলের সঙ্গে সশস্ত্র লড়াই বন্ধে ইচ্ছুক হামাস

আপডেট সময় ০২:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

ইসরায়েলের সঙ্গে সশস্ত্র লড়াই বন্ধে ইচ্ছুক ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। সংগঠনটির কয়েকজন নেতা এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে তাদের একটি শর্ত রয়েছে। তা হলো, ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরায়েল যেসব অঞ্চল দখল করেছিল, ওই অঞ্চলগুলো নিয়ে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। সূত্র: সিএনএন

২০০৭ সাল থেকে গাজা শাসন করছে হামাস। ইসরায়েলের পতনের লক্ষ্যে বিলুপ্তির লক্ষ্য নিয়ে লড়াই করছে সংগঠনটি। তবে গাজায় ইসরায়েলের চলমান হামলা, তান্ডব ও গণহত্যায় উপত্যকাটির অনিশ্চিত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সংগঠনটির নেতাদের এ ইঙ্গিত থেকে মনে হচ্ছে তারা আগের কঠোর অবস্থান থেকে কিছুটা নমনীয় হয়েছেন।

হামাসের এই নেতাদের একজন তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বসবাসকারী বাসেম নাইম। তিনি হামাসের রাজনৈতিক শাখার সদস্য। বৃহস্পতিবার নাইম যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, জেরুজালেমকে রাজধানী করে যদি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করা হয়, আর শরণার্থীদের সেখানে ফেরার অধিকার দেওয়া হয়, তাহলে আল কাশেম ব্রিগেডকে (হামাসের সামরিক শাখা) ভবিষ্যতে জাতীয় সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

হামাসের শর্তগুলো মেনে নেওয়া হলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই ‘অবশ্যই’ বন্ধ করা হবে বলেও জানিয়েছেন বাসেম নাইম। তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) যদি তাদের গঠনতন্ত্র ও প্রশাসনে ‘সংস্কার’ আনে, তাহলে হামাসও পিএলওতে যোগ দিতে চায় ।

হামাসের নেতারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শর্ত সাপেক্ষে অস্ত্র প্রত্যাহারের কথা বললেও আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এখনো কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। আর বিদেশে অবস্থান করা হামাসের নেতাদের বক্তব্য গাজায় থাকা সংগঠনটির সামরিক শাখার নেতাদের চিন্তাভাবনার সঙ্গে মেলে কি না, তা স্পষ্ট নয়।

হামাস বরাবরই স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠায় দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের বিরোধিতা করে আসছে। দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান অনুযায়ী, ইসরায়েলের পাশাপাশি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করা হবে। এর বিপরীতে এত দিন ফিলিস্তিনের ঐতিহাসিক সব অঞ্চল নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে তোলার কথা বলে এসেছে হামাস। এসব অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে আজকের ইসরায়েল, অধিকৃত পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা।

হামাসের এই প্রস্তাব সম্পর্কে আগে কিছু শোনেননি ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক দল প্যালেস্টানিয়ান ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভের প্রেসিডেন্ট মুস্তফা বারগুতি মারওয়ান। তবে এ তথ্য সত্য হলে তা একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি বলে মনে করেন তিনি। মারওয়ান বলেন, এটি এই অর্থে গুরুত্বপূর্ণ যে দখলদারিত্বের মধ্যে থাকার কারণে ফিলিস্তিনিরা প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছেন। যদি দখলদারিত্ব না থাকে, তাহলে তাদের প্রতিরোধেরও প্রয়োজন পড়বে না।

১৯৬৭ সালের যুদ্ধে পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা দখল করে নেয় ইসরায়েল। এই অঞ্চলগুলো আন্তর্জাতিক আইনের অধীন বলে বিবেচনা করা হয়। আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অধিকাংশই এসব অঞ্চলকে দখলকৃত বলে মনে করে। এই অঞ্চলগুলো নিয়েই ভবিষ্যতে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করতে চান ফিলিস্তিনিরা। তবে দীর্ঘদিন ধরেই তাদের এমন আকাঙ্ক্ষার বিরোধিতা করে আসছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। তার দাবি, এতে ইসরায়েলের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে।

মুস্তফা বারগুতি মারওয়ান বলেন, হামাস ২০০৭ সালের অবস্থানে ফিরে যাওয়ার ইঙ্গিত করেছে। তখন ফিলিস্তিনি জাতীয় ঐক্যের সরকারের নেতৃত্বে ছিল তারা। ওই সময়েও হামাস ১৯৬৭ সালের সীমানা অনুযায়ী ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী ছিল। এ ছাড়া তারা পিএলওতে যোগ দেওয়ারও পক্ষে। তবে সংগঠনটির এমন কোনো পদক্ষেপে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইসরায়েল বা নব্বইয়ের দশকে পিএলওর সম্মতিতে হওয়া অসলো চুক্তি স্বীকৃতি পেয়ে যাবে না।