ঢাকা , শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করের বোঝা মাথাই পড়লো নিঃস্ব বিনিয়োগকারীদের

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০১:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জুন ২০২৪
  • 55

গত এক মাস থেকে শেয়ারবাজারে গুঞ্জন চলছে আসন্ন বাজেটে শেয়ারবাজারে ক্যাপিটাল গেইনের ওপর কর আরোপ করা হবে। এই গুঞ্জনে এক মাসের টানা পতনে শেয়ারবাজারের সূচক কমেছে ৫০০ পয়েন্টের বেশি এবং বিনিয়োগকারীদের মূলধন কমেছে প্রায় ৬৭ হাজার কোটি টাকা।

গুঞ্জনের এই বিপরীতে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি’র কর্মকর্তারা জোর গলায় বলেছেন, ক্যাপিটাল গেইনের ওপর সরকার কর আরোপ করবে না। এই বিষয়ে বিএসইসি কাজ করছে।

তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তারা এই বিষয়ে কাজ করছেন-এমন দাবি করলেও দৃশ্যত কোন কর্মকান্ড বিনিয়োগকারীরা দেখেনি। এমনকি দুই স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকেও কার্যত কোন উদ্যেগ দেখা যায়নি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তাদের কোন পক্ষকেই এনবিআর বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কোন ধরনের দেন-তদবির করতে দেখা যায়নি।

তবে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে রীতি মোতাবেক বাজেট ঘোষণার দুই-চার দিন আগে সংবাদ সম্মেলনে কিছু প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তাদের প্রচার-প্রচারণাই কেবল হয়েছে, কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তারা প্রচার-প্রচারণার জন্যই সংবাদ সম্মেলনে তাদের প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেছেন। সংবাদ সম্মেলনে যেসব প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে, তার বাস্তবায়ন তারাও হয়তো চায়নি। চাইলে-তো এনবিআর বা অর্থ মন্ত্রণালয়ে শরীরে হাজির হয়েই তাদের প্রস্তাবগুলো তুলে ধরতেন।

তবে শেয়ারবাজারে এতদিন যা খবর গুঞ্জন ছিল, আজ (বৃহস্পতিবার) তা সত্যি হয়ে আসছে। শেয়ার কেনাবেচায় নির্দিষ্ট অর্থবছরে ৫০ লাখ টাকার বেশি যত টাকা মুনাফা হবে, তার ওপর সরকারকে ১৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে বলে আজকের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রস্তাব করা হবে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ক্যাপিটাল গেইনের ওপর কর আরোপ ছাড়া আরও কিছু খারাপ প্রস্তাব আজকের বাজেটে দেখা যেতে পারে। যেমন-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার অপরিবর্তিত থাকলেও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে আড়াই শতাংশ কমানোর প্রস্তাব। এতে করহার ব্যবধান বর্তমানের সাড়ে ৭ শতাংশের স্থলে ৫ শতাংশে নামবে।

এছাড়া, আইপিও প্রক্রিয়ায় ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার ছেড়ে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানির বর্তমান করপোরেট করহার ২০ শতাংশ। এর কম শেয়ার বিক্রি করে তালিকাভুক্ত হলে, তাদের করহার সাড়ে ২২ শতাংশ। নতুন অর্থবছরে এই করহার আড়াই শতাংশ হারে বাড়িয়ে যথাক্রমে সাড়ে ২২ শতাংশ এবং ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব আসছে। তবে ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন সম্পন্ন করার শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে উভয় ধরনের কোম্পানির করপোরেট করহার থেকে আড়াই শতাংশ করে ছাড় দেওয়ারও প্রস্তাব করবেন অর্থমন্ত্রী।

এদিকে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার না কমালেও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহার আড়াই শতাংশ কমিয়ে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। বর্তমানে শেয়ারবাজারে অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার সাড়ে ২৭ শতাংশ। তবে তালিকাভুক্ত কোম্পানির মতো ব্যাংকের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন না করলে ৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হয়েছে। এবার এই শর্ত পূরণ করতে না পারলে সাড়ে ২৭ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।

শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারে নতুন করে কোম্পানি আসা যখন প্রায় বন্ধের পথে, তখন তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত করহার ব্যবধান কমানো হচ্ছে। কয়েক বছর আগেও এই ব্যবধান ছিল ১০ শতাংশ। পরে তা সাড়ে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। এখন তা ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে নতুন করে কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হতে আরও নিরুৎসাহিত হবে। সরকারের এই নীতির ফলে শেয়ারবাজার সার্বিক অর্থনীতির তুলনায় আরও পিছিয়ে পড়বে ও সংকুচিত হবে।

সরকারের এমন সিদ্ধান্ত শেয়ারবাজারের প্রতি ‘বিমাতাসুলভ’ ও ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ বলে মন্তব্য করেছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, শেয়ারবাজারকে স্বাভাবিক করতে বিনিয়োগকারীরা যেখানে সরকারের কাছে নীতি-সহায়তা চান,সেখানে সরকার উল্টো করের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। দীর্ঘদিন যাবত পতনের তান্ডবে যেখানে শেয়ারবাজার প্রায় তলানিতে, সেখানে শেয়ারবাজার বিমূখ এসব প্রস্তাবনা শেয়ারবাজারকে আরও নিঃশেষ করে দেবে।

ট্যাগস

করের বোঝা মাথাই পড়লো নিঃস্ব বিনিয়োগকারীদের

আপডেট সময় ০১:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জুন ২০২৪

গত এক মাস থেকে শেয়ারবাজারে গুঞ্জন চলছে আসন্ন বাজেটে শেয়ারবাজারে ক্যাপিটাল গেইনের ওপর কর আরোপ করা হবে। এই গুঞ্জনে এক মাসের টানা পতনে শেয়ারবাজারের সূচক কমেছে ৫০০ পয়েন্টের বেশি এবং বিনিয়োগকারীদের মূলধন কমেছে প্রায় ৬৭ হাজার কোটি টাকা।

গুঞ্জনের এই বিপরীতে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি’র কর্মকর্তারা জোর গলায় বলেছেন, ক্যাপিটাল গেইনের ওপর সরকার কর আরোপ করবে না। এই বিষয়ে বিএসইসি কাজ করছে।

তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তারা এই বিষয়ে কাজ করছেন-এমন দাবি করলেও দৃশ্যত কোন কর্মকান্ড বিনিয়োগকারীরা দেখেনি। এমনকি দুই স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকেও কার্যত কোন উদ্যেগ দেখা যায়নি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তাদের কোন পক্ষকেই এনবিআর বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কোন ধরনের দেন-তদবির করতে দেখা যায়নি।

তবে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে রীতি মোতাবেক বাজেট ঘোষণার দুই-চার দিন আগে সংবাদ সম্মেলনে কিছু প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তাদের প্রচার-প্রচারণাই কেবল হয়েছে, কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তারা প্রচার-প্রচারণার জন্যই সংবাদ সম্মেলনে তাদের প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেছেন। সংবাদ সম্মেলনে যেসব প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে, তার বাস্তবায়ন তারাও হয়তো চায়নি। চাইলে-তো এনবিআর বা অর্থ মন্ত্রণালয়ে শরীরে হাজির হয়েই তাদের প্রস্তাবগুলো তুলে ধরতেন।

তবে শেয়ারবাজারে এতদিন যা খবর গুঞ্জন ছিল, আজ (বৃহস্পতিবার) তা সত্যি হয়ে আসছে। শেয়ার কেনাবেচায় নির্দিষ্ট অর্থবছরে ৫০ লাখ টাকার বেশি যত টাকা মুনাফা হবে, তার ওপর সরকারকে ১৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে বলে আজকের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রস্তাব করা হবে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ক্যাপিটাল গেইনের ওপর কর আরোপ ছাড়া আরও কিছু খারাপ প্রস্তাব আজকের বাজেটে দেখা যেতে পারে। যেমন-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার অপরিবর্তিত থাকলেও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে আড়াই শতাংশ কমানোর প্রস্তাব। এতে করহার ব্যবধান বর্তমানের সাড়ে ৭ শতাংশের স্থলে ৫ শতাংশে নামবে।

এছাড়া, আইপিও প্রক্রিয়ায় ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার ছেড়ে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানির বর্তমান করপোরেট করহার ২০ শতাংশ। এর কম শেয়ার বিক্রি করে তালিকাভুক্ত হলে, তাদের করহার সাড়ে ২২ শতাংশ। নতুন অর্থবছরে এই করহার আড়াই শতাংশ হারে বাড়িয়ে যথাক্রমে সাড়ে ২২ শতাংশ এবং ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব আসছে। তবে ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন সম্পন্ন করার শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে উভয় ধরনের কোম্পানির করপোরেট করহার থেকে আড়াই শতাংশ করে ছাড় দেওয়ারও প্রস্তাব করবেন অর্থমন্ত্রী।

এদিকে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার না কমালেও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহার আড়াই শতাংশ কমিয়ে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। বর্তমানে শেয়ারবাজারে অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার সাড়ে ২৭ শতাংশ। তবে তালিকাভুক্ত কোম্পানির মতো ব্যাংকের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন না করলে ৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হয়েছে। এবার এই শর্ত পূরণ করতে না পারলে সাড়ে ২৭ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।

শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারে নতুন করে কোম্পানি আসা যখন প্রায় বন্ধের পথে, তখন তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত করহার ব্যবধান কমানো হচ্ছে। কয়েক বছর আগেও এই ব্যবধান ছিল ১০ শতাংশ। পরে তা সাড়ে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। এখন তা ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে নতুন করে কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হতে আরও নিরুৎসাহিত হবে। সরকারের এই নীতির ফলে শেয়ারবাজার সার্বিক অর্থনীতির তুলনায় আরও পিছিয়ে পড়বে ও সংকুচিত হবে।

সরকারের এমন সিদ্ধান্ত শেয়ারবাজারের প্রতি ‘বিমাতাসুলভ’ ও ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ বলে মন্তব্য করেছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, শেয়ারবাজারকে স্বাভাবিক করতে বিনিয়োগকারীরা যেখানে সরকারের কাছে নীতি-সহায়তা চান,সেখানে সরকার উল্টো করের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। দীর্ঘদিন যাবত পতনের তান্ডবে যেখানে শেয়ারবাজার প্রায় তলানিতে, সেখানে শেয়ারবাজার বিমূখ এসব প্রস্তাবনা শেয়ারবাজারকে আরও নিঃশেষ করে দেবে।