ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এই বাজেট গণবিরোধীই নয়, দেশবিরোধীও: মির্জা ফখরুল

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০১:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ জুন ২০২৪
  • 33

২০২৪-২৫ অর্থবছরের উত্থাপিত বাজেটকে ‘ঋণনির্ভর ও লুটেরাবান্ধব’ আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। দলটি বলছে, এই বাজেট শুধু গণবিরোধীই নয়, দেশবিরোধীও।

রোববার (৯ জুন) বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপরে দলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, এ বাজেট করনির্ভর, ঋণনির্ভর ও লুটেরাবান্ধব। অসহনীয় মুদ্রাস্ফীতির চাপে সাধারণ জনগণের ত্রাহি অবস্থা, এর উপরে বাজেটে করের বোঝা। এ বাজেট কল্পনার এক ফানুস, ফোকলা অর্থনীতির উপরে দাঁড়িয়ে আছে।

‘লুটেরা সরকারের এ বাজেট শুধু দেশের গুটিকয়েক মানুষের জন্য, যারা শুধু চুরিই করছে না, ব্যবসা করছে, পলিসি প্রণয়ন করছে, আবার পুরো দেশও চালাচ্ছে। জবাবদিহিহীন এ সরকারের কাছ থেকে জনকল্যাণমূলক বাজেট আশা করাটাই বোকামি। আমরা এ বাজেট প্রত্যাখ্যান করছি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, এ বাজেট পুরোপুরি ঋণনির্ভর। তার ওপর ঘাটতি বাজেট। সেই ঘাটতি মেটানো হচ্ছে ঋণ দিয়ে। একদিকে বৈদেশিক ঋণ, অনদিকে ডোমেস্টিক লোন। যে মানুষগুলো অলিরেডি খাদের মধ্যে পড়ে গেছে, তাদের ওপরে তথাকথিত হাতি চেপে বসেছে। তাদের কাছ থেকেও ঋণ নেওয়া হয়। পুরো বাজেটটিই করা হয়েছে মেগা প্রকল্প, মেগা চুরির জন্য, দুর্নীতি জন্য।

মেগা প্রকল্পের অর্থায়ন বন্ধ করা উচিত ছিল
বিএনপি মহাসচিব বলেন, অর্থনীতির এই ত্রিশঙ্কু অবস্থায় উচিত ছিল অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্পসমূহ বা অর্থহীন, অনুৎপাদক দৃশ্যমান অবকাঠামোগুলো বন্ধ রাখা। সেই অর্থ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিখাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ জনকল্যাণমুখী খাতে ব্যবহার করা যেতো। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আরও সম্প্রসারণ করা যেতো। কিন্তু সেগুলা বন্ধ করলে তো দুর্নীতির পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। তাই বোধগম্য কারণেই সেটা করা হয়নি।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ার সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে অত্যন্ত অপ্রতুল। কৃষিতেও বরাদ্দ কমানো হয়েছে। অথচ করোনাকালে পুনরায় প্রমাণিত হয়েছে আমাদের অর্থনীতির মূল ভিত্তি কৃষি। সরকার কৃষিকে সহায়তা না করে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে লাখো কোটি টাকা ভর্তুকির অর্থ তুলে দিয়েছে বিদ্যুৎ খাতের অলিগার্কদের হাতে, অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ না কিনেই।

বাজেট দিক-নির্দেশনাহীন
মির্জা ফখরুল বলেন, এ বাজেটে কর্মসংস্থান তৈরির কোনো দিকনির্দেশনা নেই। ডলার সংকটের কথা বলে আমদানি সংকুচিত করায় ক্যাপিটাল মেশিনারিজ এবং কাঁচামাল আমদানি প্রায় অবরুদ্ধ। যার ফলে শিল্প কারখানা বন্ধের পথে। ব্যাংকগুলো শূন্য। সুদের হার অনেক বেশি। সরকার নিজেই ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ নেওয়ায় বেসরকারি খাতে ঋণ প্রাপ্তির সুযোগ কমে গেছে। ডিএফআই (ডাইরেক্ট ফরেন ইনভেস্টমেন্ট) শূন্যের কোঠায়। নতুন কর্মসংস্থান না থাকায় শ্রমিকরা গ্রামে চলে যাচ্ছে, সেখানেও কর্মের সংস্থান নেই।

তিনি বলেন, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির কোনো আশা বাজেটে নেই। নেই চাকুরিহারা এবং দুর্দশাগ্রস্ত শ্রমিকদের পুনর্বাসন রোডম্যাপ। বাজেট বক্তৃতায় সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলো উন্নয়নের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলা হলেও তার বাস্তবিক কোনো পথনির্দেশনা বাজেটে নেই।

‘এই বাজেট শুধু গণবিরোধী নয়, এই বাজেট বাংলাদেশ বিরোধীও। যে গণমানুষ নিয়ে বাংলাদেশ, সেই গণমানুষের অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়েছে। পুরো বাজেটটা করা হয়েছে লুটেরাদের জন্য।’

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো পথনির্দেশনা নেই উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, মূল্যস্ফীতির চরম চাপে মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। কীভাবে এটি কমানো যাবে তার কোনো কথা নেই বাজেটে।

তিনি বলেন, কে না জানে, সরকারি আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তাদের আশীর্বাদপুষ্ট কিছু সিন্ডিকেটের কারণেই নিত্যপণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে। এসব সিন্ডিকেট কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, বাজেটে সে বিষয়ে কোনো আলোচনা স্থান পায়নি।

ঋণ পাবে কি
মির্জা ফখরুল বলেন, এই বাজেট ঋণনির্ভর। আয়ের চেয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে বেশি। পুরো বোঝাটা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে সাধারণ মানুষের ওপর। ঋণ ও ঘাটতিভিত্তিক বাজেট অতীতেও বাস্তবায়ন হয়নি, আগামীতেও হবে না।

তিনি বলেন, বাজেটের এক-তৃতীয়াংশ ঘাটতি, যা মেটানোর প্রস্তাব করা হয়েছে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণ নিয়ে। ঋণ দিয়ে ঋণ পরিশোধের ফন্দি। অর্থাৎ, কৈ এর তেলে কৈ ভাজা আর কি। এই ঋণ নেওয়া হবে সোভারেন গ্যারেন্টির কভারে। কারণ, কো-লেটারেল দেওয়ার সক্ষমতা বাংলাদেশ হারিয়েছে। আন্তর্জাতিক ঋণ সংস্থা ফ্রিটচ রেটিংস অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি ঋণমান আবারও অবনমন করেছে। এর আগে মুডিস ও এস অ্যান্ড পিও বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে দিয়েছে। প্রশ্ন হলো- দেউলিয়া সরকারের ওপর কার আস্থা হবে ঋণ দিতে?

খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি এবং আদায় না হওয়া, অর্থপাচার, ধনী-দরিদ্র বৈষম্য রোধে সরকারের ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব।

বাজেট প্রস্তাবে মোবাইল ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট পরিষেবার বিল এবং ল্যাপটপের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাবের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, মুখে ‘ডিজিটাল’ কথা বললেও তথ্যপ্রযুক্তিকে সহজলভ্য করার সরকারি ঘোষণাকে মিথ্যা আশ্বাস ও ফাঁপা বুলিই প্রতীয়মান হয়।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, যে সরকার নিজেরাই আইনকানুন ও সংবিধান লঙ্ঘন করে তারা কীভাবে আর্থিক শৃঙ্খলা ফেরাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক কতিপয় অর্থপিপাসু অরিগার্ক ও দুষ্ট রাজনীতিকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সরকারি কাজে ব্যয় সংকোচন, ব্যাংকিং খাতে নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা স্থাপন কিংবা আর্থিক খাতে মৌলিক সংস্কার নিয়ে এ বাজেটে কোনো উদ্যোগ নেই।

কালো টাকা সাদা করতে বাজেট প্রস্তাবের সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, দেশ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে নিপতিত। এর মূল কারণ এই মাফিয়া সরকারের সুশাসনের অভাব ও জবাবদিহিহীনতা।

মির্জা ফখরুল বলেন, এ মহাসংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। অবিলম্বে একটি জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যা একমাত্র অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সম্ভব। ‘আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র’- এই ধাপ্পাবাজির অবসান ঘটিয়ে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের অবাধ ও নিরপেক্ষ সুযোগ সৃষ্টি করতেই হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

ট্যাগস

এই বাজেট গণবিরোধীই নয়, দেশবিরোধীও: মির্জা ফখরুল

আপডেট সময় ০১:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ জুন ২০২৪

২০২৪-২৫ অর্থবছরের উত্থাপিত বাজেটকে ‘ঋণনির্ভর ও লুটেরাবান্ধব’ আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। দলটি বলছে, এই বাজেট শুধু গণবিরোধীই নয়, দেশবিরোধীও।

রোববার (৯ জুন) বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপরে দলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, এ বাজেট করনির্ভর, ঋণনির্ভর ও লুটেরাবান্ধব। অসহনীয় মুদ্রাস্ফীতির চাপে সাধারণ জনগণের ত্রাহি অবস্থা, এর উপরে বাজেটে করের বোঝা। এ বাজেট কল্পনার এক ফানুস, ফোকলা অর্থনীতির উপরে দাঁড়িয়ে আছে।

‘লুটেরা সরকারের এ বাজেট শুধু দেশের গুটিকয়েক মানুষের জন্য, যারা শুধু চুরিই করছে না, ব্যবসা করছে, পলিসি প্রণয়ন করছে, আবার পুরো দেশও চালাচ্ছে। জবাবদিহিহীন এ সরকারের কাছ থেকে জনকল্যাণমূলক বাজেট আশা করাটাই বোকামি। আমরা এ বাজেট প্রত্যাখ্যান করছি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, এ বাজেট পুরোপুরি ঋণনির্ভর। তার ওপর ঘাটতি বাজেট। সেই ঘাটতি মেটানো হচ্ছে ঋণ দিয়ে। একদিকে বৈদেশিক ঋণ, অনদিকে ডোমেস্টিক লোন। যে মানুষগুলো অলিরেডি খাদের মধ্যে পড়ে গেছে, তাদের ওপরে তথাকথিত হাতি চেপে বসেছে। তাদের কাছ থেকেও ঋণ নেওয়া হয়। পুরো বাজেটটিই করা হয়েছে মেগা প্রকল্প, মেগা চুরির জন্য, দুর্নীতি জন্য।

মেগা প্রকল্পের অর্থায়ন বন্ধ করা উচিত ছিল
বিএনপি মহাসচিব বলেন, অর্থনীতির এই ত্রিশঙ্কু অবস্থায় উচিত ছিল অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্পসমূহ বা অর্থহীন, অনুৎপাদক দৃশ্যমান অবকাঠামোগুলো বন্ধ রাখা। সেই অর্থ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিখাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ জনকল্যাণমুখী খাতে ব্যবহার করা যেতো। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আরও সম্প্রসারণ করা যেতো। কিন্তু সেগুলা বন্ধ করলে তো দুর্নীতির পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। তাই বোধগম্য কারণেই সেটা করা হয়নি।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ার সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে অত্যন্ত অপ্রতুল। কৃষিতেও বরাদ্দ কমানো হয়েছে। অথচ করোনাকালে পুনরায় প্রমাণিত হয়েছে আমাদের অর্থনীতির মূল ভিত্তি কৃষি। সরকার কৃষিকে সহায়তা না করে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে লাখো কোটি টাকা ভর্তুকির অর্থ তুলে দিয়েছে বিদ্যুৎ খাতের অলিগার্কদের হাতে, অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ না কিনেই।

বাজেট দিক-নির্দেশনাহীন
মির্জা ফখরুল বলেন, এ বাজেটে কর্মসংস্থান তৈরির কোনো দিকনির্দেশনা নেই। ডলার সংকটের কথা বলে আমদানি সংকুচিত করায় ক্যাপিটাল মেশিনারিজ এবং কাঁচামাল আমদানি প্রায় অবরুদ্ধ। যার ফলে শিল্প কারখানা বন্ধের পথে। ব্যাংকগুলো শূন্য। সুদের হার অনেক বেশি। সরকার নিজেই ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ নেওয়ায় বেসরকারি খাতে ঋণ প্রাপ্তির সুযোগ কমে গেছে। ডিএফআই (ডাইরেক্ট ফরেন ইনভেস্টমেন্ট) শূন্যের কোঠায়। নতুন কর্মসংস্থান না থাকায় শ্রমিকরা গ্রামে চলে যাচ্ছে, সেখানেও কর্মের সংস্থান নেই।

তিনি বলেন, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির কোনো আশা বাজেটে নেই। নেই চাকুরিহারা এবং দুর্দশাগ্রস্ত শ্রমিকদের পুনর্বাসন রোডম্যাপ। বাজেট বক্তৃতায় সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলো উন্নয়নের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলা হলেও তার বাস্তবিক কোনো পথনির্দেশনা বাজেটে নেই।

‘এই বাজেট শুধু গণবিরোধী নয়, এই বাজেট বাংলাদেশ বিরোধীও। যে গণমানুষ নিয়ে বাংলাদেশ, সেই গণমানুষের অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়েছে। পুরো বাজেটটা করা হয়েছে লুটেরাদের জন্য।’

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো পথনির্দেশনা নেই উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, মূল্যস্ফীতির চরম চাপে মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। কীভাবে এটি কমানো যাবে তার কোনো কথা নেই বাজেটে।

তিনি বলেন, কে না জানে, সরকারি আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তাদের আশীর্বাদপুষ্ট কিছু সিন্ডিকেটের কারণেই নিত্যপণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে। এসব সিন্ডিকেট কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, বাজেটে সে বিষয়ে কোনো আলোচনা স্থান পায়নি।

ঋণ পাবে কি
মির্জা ফখরুল বলেন, এই বাজেট ঋণনির্ভর। আয়ের চেয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে বেশি। পুরো বোঝাটা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে সাধারণ মানুষের ওপর। ঋণ ও ঘাটতিভিত্তিক বাজেট অতীতেও বাস্তবায়ন হয়নি, আগামীতেও হবে না।

তিনি বলেন, বাজেটের এক-তৃতীয়াংশ ঘাটতি, যা মেটানোর প্রস্তাব করা হয়েছে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণ নিয়ে। ঋণ দিয়ে ঋণ পরিশোধের ফন্দি। অর্থাৎ, কৈ এর তেলে কৈ ভাজা আর কি। এই ঋণ নেওয়া হবে সোভারেন গ্যারেন্টির কভারে। কারণ, কো-লেটারেল দেওয়ার সক্ষমতা বাংলাদেশ হারিয়েছে। আন্তর্জাতিক ঋণ সংস্থা ফ্রিটচ রেটিংস অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি ঋণমান আবারও অবনমন করেছে। এর আগে মুডিস ও এস অ্যান্ড পিও বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে দিয়েছে। প্রশ্ন হলো- দেউলিয়া সরকারের ওপর কার আস্থা হবে ঋণ দিতে?

খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি এবং আদায় না হওয়া, অর্থপাচার, ধনী-দরিদ্র বৈষম্য রোধে সরকারের ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব।

বাজেট প্রস্তাবে মোবাইল ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট পরিষেবার বিল এবং ল্যাপটপের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাবের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, মুখে ‘ডিজিটাল’ কথা বললেও তথ্যপ্রযুক্তিকে সহজলভ্য করার সরকারি ঘোষণাকে মিথ্যা আশ্বাস ও ফাঁপা বুলিই প্রতীয়মান হয়।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, যে সরকার নিজেরাই আইনকানুন ও সংবিধান লঙ্ঘন করে তারা কীভাবে আর্থিক শৃঙ্খলা ফেরাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক কতিপয় অর্থপিপাসু অরিগার্ক ও দুষ্ট রাজনীতিকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সরকারি কাজে ব্যয় সংকোচন, ব্যাংকিং খাতে নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা স্থাপন কিংবা আর্থিক খাতে মৌলিক সংস্কার নিয়ে এ বাজেটে কোনো উদ্যোগ নেই।

কালো টাকা সাদা করতে বাজেট প্রস্তাবের সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, দেশ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে নিপতিত। এর মূল কারণ এই মাফিয়া সরকারের সুশাসনের অভাব ও জবাবদিহিহীনতা।

মির্জা ফখরুল বলেন, এ মহাসংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। অবিলম্বে একটি জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যা একমাত্র অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সম্ভব। ‘আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র’- এই ধাপ্পাবাজির অবসান ঘটিয়ে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের অবাধ ও নিরপেক্ষ সুযোগ সৃষ্টি করতেই হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।