সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত মুখ রোবাইয়াত ফাতেমা তনির মালিকানাধীন গুলশানের ‘সানভীস বাই তনি’ শোরুম সিলগালা করা কেন অবৈধ হবে না, এ মর্মে জারি করা রুলের বিষয়ে আজ আদেশ দেবেন হাইকোর্ট।
সোমবার (১০ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে আদেশের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৬ জুন) হাইকোর্টের একই বেঞ্চ আদেশের জন্য এদিন ধার্য করেছিলেন। আদালতে ওইদিন তনির পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. খালেকুজ্জামান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ ও আনিচ উল মাওয়া।
এর আগে ২৭ মে ‘সানভীস বাই তনি’র শোরুম সিলগালা করা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
এদিকে রিটে ‘সানভীস বাই তনি’র স্বত্বাধিকারী রোবাইয়াত ফাতিমা তনি অভিযোগ করেন যে, তাকে কোনো প্রকার নোটিশ না দিয়ে এবং শুনানি না করে ভোক্তা অধিকার হয়রানি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের হুমকি দিয়েছে। একই সঙ্গে ভোক্তা অধিকারের নামে শুধু টাকা দেওয়ার রশিদ দিয়ে এবং কোনো প্রকার দালিলিক প্রমাণ না দিয়ে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে, যা অবৈধ ও বেআইনি বলে প্রতিকার চাওয়া হয়েছে রিটে।
হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট করা হয় বলে ২৬ মে রিটকারীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ খালেকুজ্জামান অরুন জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন।
রিট পিটিশন থেকে জানা গেছে, ১৪ মে সানভীস বাইকে দুটি অপরাধের দায়ে ৫০ হাজার ও দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। লুবনা ইয়াসমিন নামের এক নারীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইন্দ্রানী রায়।
লুবনা ইয়াসমিন সানভীস বাই থেকে একটি পোশাক কিনেছিলেন ৯ ফেব্রুয়ারি। এর ৫৩ দিন পর ৩ এপ্রিল ভোক্তা অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন। পরে ১২ মে সানভীস বাইয়ের প্রধান শোরুমে অভিযান চালিয়ে সেটি সিলগালা করে দেন ভোক্তার সহকারী পরিচালক জব্বার মন্ডল।
রিটে বলা হয়, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৬০ ধারা অনুযায়ী অধিদপ্তরে অভিযোগ করতে হয় ঘটনার ৩০ দিনের মধ্যে। কিন্তু লুবনা ইয়াসমিন অভিযোগ করেছেন ৫৩ দিন পর। ফলে তিনি অভিযোগ আমলে নেওয়ার বৈধতা হারিয়েছেন। এই ৫৩ দিন তিনি ওই কাপড় ব্যবহার করে নষ্ট করেছেন কি না সেটিও নিশ্চিত নয় কেউ। কিন্তু এমন অবৈধ অভিযোগ আমলে নিয়ে ৪৫ ধরা মতে সর্বোচ্চ শাস্তি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় সানভীস বাইকে। এমন অবৈধ অভিযোগে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান আইনের প্রয়োগকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে মনে করছেন তনির পক্ষে রিটকারী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ খালেকুজ্জামান অরুন।
অন্যদিকে মিথ্যা বিজ্ঞাপনের অভিযোগে ৪৪ ধারায় সানভীস বাইকে দ্বিতীয় জরিমানা (দুই লাখ টাকা) করেন ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল। দ্বিতীয় জরিমানার টাকা আদায়ের রশিদে অভিযোগকারী হিসেবে রাজু নামের এক ব্যক্তিকে দেখানো হয়। কিন্তু রাজু নামে কোনো ব্যক্তি সানভীস বাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেননি। এমনকি এই অভিযোগের বিষয়ে সানভীস বাইকে কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি বা শুনানিও হয়নি।
রিটে আরও বলা হয়, লুবনা ইয়াসমিনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সানভীস বাইয়ের মালিক তনিকে তলব করেন ইন্দ্রানী রানি। তিনি ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তা। কিন্তু সেই তলবের শুনানিতে অযাচিতভাবে হাজির হন ভোক্তা অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল এবং ভুয়া অভিযোগকারীর নামে নোটিশ বা শুনানি ছাড়াই বেআইনিভাবে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেন।
আইনজীবী সৈয়দ খালেকুজ্জামান অরুন বলেন, দুটি জরিমানার ক্ষেত্রেই তনিকে কোনো আদেশের কপি দেওয়া হয়নি, যা রীতিমতো বেআইনি। শুধু জরিমানার টাকা গ্রহণের রশিদ দেওয়া হয়।