ছাগলকান্ডে দেশজুড়ে ভাইরাল ইফাতের বাবা ড. মতিউর রহমানের একের পর এক দুর্নীতি ও অনিয়মের খবর বেরিয়ে আসছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এবং তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়ায় থাকা ২০টি কোম্পানিতে মতিউরের প্লেসমেন্ট বাণিজ্যের খবর জানা গেছে।
এসব কোম্পানিতে প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় নিজ নামে এবং তার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, বোন-সহ নিকটাত্মীয় এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোম্পানির নামে ২০১০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত শেয়ার নেওয়ার তথ্য মিলেছে। শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি অনুমোদিত আইপিও প্রসপেক্টাস থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ি, মতিউর রহমান নিজের ও আত্মীয়স্বজনের নামে যে পরিমাণ প্লেসমেন্ট শেয়ার নিয়েছেন, অভিহিত বা প্রকৃত মূল্য হিসাবে এসব শেয়ারের দাম অন্তত অর্ধশত কোটি টাকা। এর দু-একটি বাদে সব কোম্পানির শেয়ারই শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। তালিকাভুক্তির পর প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় নেওয়া এসব শেয়ার উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে কয়েকশ কোটি টাকা মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছেন মতিউর রহমান।
বিভিন্ন সূত্রে থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, মতিউর রহমান প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় যেসব কোম্পানির শেয়ার নিয়েছেন, সেগুলো হলো– এক্মি পেসটিসাইডস (৩৮ লাখ শেয়ার), অনিক ট্রিমস (৫৩.১৯ লাখ), অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন (১০ লাখ), বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার (৭৫ হাজার), সিএনএটেক্স (১০.৩০ লাখ), ডমিনেজ স্টিল (১৫.৮০ লাখ), ই-জেনারেশন (৫০ হাজার), ফরচুন সুজ (৪৩.১০ লাখ), কাট্টলী টেক্সটাইল (২১ লাখ), ল্যুবরেফ (৮ লাখ), মামুন এগ্রো (৩৭.৮৭ লাখ), এমএল ডাইং (১৬ লাখ), রিং সাইন (১০ লাখ), এসকে ট্রিমস (৯০ লাখ), টেকনো ড্রাগস (১.৫০ লাখ), ওয়েব কোস্টস (১৩.৯৭ লাখ) শেয়ার। প্যাসিফিক ডেনিম এবং সিলভা ফার্মারও কিছু শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে এসকে ট্রিমস কোম্পানি নিজেই গড়েছেন মতিউর। তবে এর বাইরেও তার নামে আরও শেয়ার থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রাইভেট প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় এখন পর্যন্ত মতিউর নিজ নামে ১১টি কোম্পানির শেয়ার নিয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এসব শেয়ার নিতে আইল্যান্ড ও ইমতিয়াজ হোসাইন নামের দুইটি ব্রোকারেজ হাউস এবং শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট নামে একটি মার্চেন্ট ব্যাংকে খোলা তিনটি বিও অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেছেন তিনি।
এনআরবি ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের মালিক এবং শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের মালিকদের একজনসহ চার-পাঁচজন নিয়ে মতিউর গড়ে তোলেন একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই প্লেসমেন্ট শেয়ার বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির মালিকপক্ষকে ব্লাকমেইল করে শেয়ার হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মতিউর রহমান নিজেই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, ফরচুন সুজের মালিক মিজানুর তাঁর বন্ধু। তাঁকে ১০ টাকা দামের শেয়ার ৮ টাকা দরে দিয়েছেন। এই শেয়ার বিক্রি করেই ১৪ কোটি টাকা মুনাফা করেছিলেন তিনি।
জানা গেছে, মতিউর রহমান শুধু তাঁর নিজের নামে নেওয়া শেয়ার বিক্রি করেই অন্তত ৫০ কোটি টাকা মুনাফা করেছেন। প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় স্ত্রীর নামে নেওয়া শেয়ারগুলো মতিউর রহমান এরই মধ্যে বিক্রি করে থাকলে অন্তত ২৫ কোটি টাকা আয় করেছেন।
মতিউর রহমান তাঁর মেয়ে ফারজানা রহমান ঈপ্সিতার নামে তিন ব্রোকারেজ হাউসে তিনটি বিও অ্যাকাউন্ট খুলে প্লেসমেন্ট শেয়ার নিয়েছেন। প্রাইভেট প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় আট কোম্পানির ৬৪ লাখ শেয়ার নিয়েছেন মতিউর। অভিহিত মূল্যে এসব শেয়ারের মোট মূল্য ৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এছাড়া তাঁর বোন নূর বেগমের নামে দুটি বিও অ্যাকাউন্ট খুলে প্রাইভেট প্লেসমেন্ট শেয়ার নিয়েছেন। যার অভিহিত মূল্য ১০ টাকা দরে মোট ৫ কোটি টাকা।