বেশ কয়েক বছর অনেকটাই ছন্দ ছাড়া ব্রাজিল। গতকাল (৭ জুলাই) উরুগুয়ের সঙ্গে হেরে কোপা থেকে বিদায় নিয়েছে দলটি। আজ থেকে ১০ বছর আগে ৮ জুলাই, ২০১৪। মারাকানা স্টেডিয়ামে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত স্বাগতিক হিসেবে ‘হট ফেভারিট’ ব্রাজিল। সেমিফাইনালে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ জার্মানি। ম্যাচের আগে সবাই ধরেই নিয়েছে জার্মানদের উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে যাবে ব্রাজিল। তবে কে জানতো, সেই দিন ব্রাজিলের ইতিহাসের অন্যতম বিভীষিকাময় দিন হতে চলেছে।
খেলা শুরু! স্টেডিয়ামে দর্শকরা তখনও নিজেদের সিটে ভালোভাবে বসেননি জোয়াকিম লোর শিষ্যরা প্রথম থেকেই মরিয়া গোলের জন্য। ম্যাচের ১১ মিনিট চলছে। জার্মানির হয়ে প্রথম গোল করেন টমাস মুলার।
চোখের সামনেই হলো ৫টি গোল! তাও আবার ম্যাচের ২৯ মিনিটের মধ্যে। জার্মানি ৫, ব্রাজিল ০! বিশ্বকাপ ইতিহাসেই কোনো সেমিফাইনালের প্রথমার্ধে ৫ গোল হয়নি।
২৩ মিনিটে মিরোস্লাভ ক্লোসা দ্বিতীয় গোল করার পরই পাশের গ্যালারিতে গায়ে হলুদ জার্সি, গালে জাতীয় পতাকা আঁকা এক তরুণীকে দেখা যায় হাউমাউ করে কাঁদতে। পরের ৭ মিনিটের মধ্যে জার্মানি আরও ৩ গোল করে ফেলার পর সেই কান্না সংক্রামক হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে গোটা মারাকানা স্টেডিয়ামে।
পাসিং ফুটবল দলগতভাবে কীভাবে খেলতে হয়, সেটাই যেন ব্রাজিলকে শেখাচ্ছিল জার্মানরা। বিশেষকরে, টনি ক্রুসের দ্বিতীয় গোলটি। ২৬ মিনিটে, ব্রাজিলের ডিফেন্ডারের থেকে বল কেড়ে নিয়ে আক্রমণে জার্মানরা। সেই গোলটি খুব সহজেই ৬ নম্বর জার্সির সামি কাদিরা করতে পারতেন। কিন্তু তিনি নিঃস্বার্থভাবে বলটি পাস দেন ক্রুসকে। বল পেয়ে ভুল করেননি ক্রুস।
জার্মানির সেই বিজয়ী দলের খেলোয়াড় ম্যাটস হামেলস পরে জানিয়েছিলেন, তারা ইচ্ছা করেই বিরতির পর আর কোনো জাদুকরী খেলা খেলতে চাননি। তারা শুধু চেয়েছিলেন ম্যাচটি শেষ করতে।
ম্যাটস হামেলস বলেন, ‘আমরা শুধু চেয়েছি খেলায় মনোযোগী থাকতে। খেলার মধ্যে সেলেসাওদের কোনোভাবেই অপমান করতে চাইনি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, খেলার মধ্যে সিরিয়াস থাকতে হবে। তবে ব্রাজিলকে অপমান করা হয়, এমন কিছু থেকে বিরত থাকব। খেলার মধ্যে জয়-পরাজয় থাকবে। তবে প্রতিপক্ষকে সম্মান দেখাতে হবে। আমরা সে কাজ করেছি। দ্বিতীয়ার্ধের পর আমরা কোনো জাদুকরি খেলা দেখাইনি।’
৯০ মিনিটের খেলা শেষে ম্যাচের স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৭-১। খেলার শেষে জার্মানিরা সেলেসাওদের সান্ত্বনা দিয়েছিল। বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে জার্মানির জয়টি ছিল সর্বকালের সবচেয়ে বড় জয়।