ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এক বছরে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে রেকর্ড

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০১:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই ২০২৪
  • 48

নানান উন্নয়ন প্রকল্পে যেমন বিদেশি ঋণ প্রবাহ বেড়েছে, ঠিক একইভাবে বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের চাপও বেড়ে চলেছে। সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) বিদেশি ঋণের সুদ বাবদ প্রায় ১৩৫ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে, যা এ যাবৎকালের মধ্যে রেকর্ড।

অন্যদিকে সুদ ও আসল মিলিয়ে বাংলাদেশকে প্রায় ৩৩৬ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে। ফলে এই প্রথমবারের মতো এক বছরে বিদেশি ঋণ পরিশোধ ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। পরিশোধ করা অর্থের মধ্যে আসল ২০১ কোটি ডলার, আর সুদের পরিমাণ প্রায় ১৩৫ কোটি ডলার।

সম্প্রতি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) বিদায়ী অর্থবছরের বৈদেশিক ঋণের হালনাগাদ পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এক বছরের ব্যবধানে ঋণের আসল ও সুদ পরিশোধ-দুটোই বেশ বেড়েছে। গত অর্থবছরের তুলনায় এই বৃদ্ধি ২৫ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সুদ ও আসল মিলিয়ে ২৬৮ কোটি ডলার পরিশোধ করেছিল বাংলাদেশ।

কয়েক বছর ধরেই বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। ঋণ পরিশোধ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে গত দুই বছরে। বিদেশি ঋণ পরিশোধের এই চাপ শুরু হয়েছে এমন এক সময়ে, যখন দেশে দীর্ঘদিন ধরে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট চলছে। বিদেশি ঋণ পরিশোধ বাবদ অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও বাজেটে বাড়তি চাপের সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে বিদেশি ঋণের আসল পরিশোধ যে গতিতে বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি গতিতে বেড়েছে সুদ বাবদ খরচ। গত অর্থবছরে আগের অর্থবছরের তুলনায় আসল পরিশোধ বেড়েছে ২৮ কোটি ডলার বা ১৬ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আসল পরিশোধ করতে হয়েছিল ১৭৩ কোটি ডলার।

অন্যদিকে এক বছরের ব্যবধানে সুদ পরিশোধ বেড়েছে ৪৫ শতাংশ। গত অর্থবছরে সুদ খাতে অতিরিক্ত খরচ করতে হয়েছে ৪২ কোটি ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরের সুদ বাবদ ৯৩ কোটি ডলার খরচ করতে হয়েছিল। বিদায়ী অর্থবছরে প্রথমবারের মতো শুধু সুদ বাবদ খরচও এক বিলিয়ন ডলার বা ১০০ কোটি ডলার ছাড়ালো।

ইআরডির তথ্য বলছে, গত অর্থবছরের জুলাই থেকে জুন সময়ে ৯৮৬ কোটি ডলারের বিদেশি ঋণ এসেছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ছাড় বেড়েছে ৫৫ কোটি ডলার। আগের অর্থবছর, অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৯২১ কোটি ডলার ছাড় করেছিল উন্নয়ন সহযোগীরা।

এদিকে, গত অর্থবছরে ঋণদাতা সংস্থা ও দেশগুলো ১ হাজার ৭২ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। প্রতিশ্রুতি দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে ভারত, চীন ও রাশিয়া গত এক বছরে এক ডলারের অর্থছাড়ও করেনি। যদিও এ তিন দেশ গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অনেক বড় বড় প্রকল্পের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছে।

তবে এ বছর এ তিন দেশ আগের ঋণের অর্থছাড় দিয়েছে। ভারত প্রায় ৩০ কোটি ডলার, চীন ৩৯ কোটি ডলার ও রাশিয়া ১২৯ কোটি ডলারের বেশি অর্থছাড় করেছে। বাংলাদেশের পাইপলাইনে এ বছর ১১ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ পড়ে ছিল।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, কিছু মেগা প্রকল্পের মূল অর্থ পরিশোধ শুরু হবে ২০২৬-২৭ অর্থবছরে এবং সেই বছরে ৫৩১ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করার কথা রয়েছে। এরপর ২০২৭-২৮ অর্থবছরে ৫১৯ মিলিয়ন ডলার এবং ২০২৮-২৯ সালে ৫০৭ মিলিয়ন ডলার শোধ করার আশা করছে সরকার।

সরকারি হিসাবমতে, জুলাই থেকে শুরু হওয়া নতুন অর্থবছরে বিদেশি ঋণ হিসাবে ৪ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার শোধের পরিকল্পনা আছে সরকারের।

এরপর ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সুদসহ বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ দাঁড়াবে অন্তত সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারে।

বাংলাদেশ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে মূলত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, বিশ্বব্যাংক, ভারত, চীন এবং রাশিয়ার কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে বেশি। এসব প্রকল্প সময়মতো শেষ না করতে পারলে ঋণ আরও বাড়তে পারে।

ট্যাগস

এক বছরে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে রেকর্ড

আপডেট সময় ০১:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই ২০২৪

নানান উন্নয়ন প্রকল্পে যেমন বিদেশি ঋণ প্রবাহ বেড়েছে, ঠিক একইভাবে বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের চাপও বেড়ে চলেছে। সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) বিদেশি ঋণের সুদ বাবদ প্রায় ১৩৫ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে, যা এ যাবৎকালের মধ্যে রেকর্ড।

অন্যদিকে সুদ ও আসল মিলিয়ে বাংলাদেশকে প্রায় ৩৩৬ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে। ফলে এই প্রথমবারের মতো এক বছরে বিদেশি ঋণ পরিশোধ ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। পরিশোধ করা অর্থের মধ্যে আসল ২০১ কোটি ডলার, আর সুদের পরিমাণ প্রায় ১৩৫ কোটি ডলার।

সম্প্রতি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) বিদায়ী অর্থবছরের বৈদেশিক ঋণের হালনাগাদ পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এক বছরের ব্যবধানে ঋণের আসল ও সুদ পরিশোধ-দুটোই বেশ বেড়েছে। গত অর্থবছরের তুলনায় এই বৃদ্ধি ২৫ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সুদ ও আসল মিলিয়ে ২৬৮ কোটি ডলার পরিশোধ করেছিল বাংলাদেশ।

কয়েক বছর ধরেই বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। ঋণ পরিশোধ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে গত দুই বছরে। বিদেশি ঋণ পরিশোধের এই চাপ শুরু হয়েছে এমন এক সময়ে, যখন দেশে দীর্ঘদিন ধরে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট চলছে। বিদেশি ঋণ পরিশোধ বাবদ অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও বাজেটে বাড়তি চাপের সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে বিদেশি ঋণের আসল পরিশোধ যে গতিতে বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি গতিতে বেড়েছে সুদ বাবদ খরচ। গত অর্থবছরে আগের অর্থবছরের তুলনায় আসল পরিশোধ বেড়েছে ২৮ কোটি ডলার বা ১৬ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আসল পরিশোধ করতে হয়েছিল ১৭৩ কোটি ডলার।

অন্যদিকে এক বছরের ব্যবধানে সুদ পরিশোধ বেড়েছে ৪৫ শতাংশ। গত অর্থবছরে সুদ খাতে অতিরিক্ত খরচ করতে হয়েছে ৪২ কোটি ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরের সুদ বাবদ ৯৩ কোটি ডলার খরচ করতে হয়েছিল। বিদায়ী অর্থবছরে প্রথমবারের মতো শুধু সুদ বাবদ খরচও এক বিলিয়ন ডলার বা ১০০ কোটি ডলার ছাড়ালো।

ইআরডির তথ্য বলছে, গত অর্থবছরের জুলাই থেকে জুন সময়ে ৯৮৬ কোটি ডলারের বিদেশি ঋণ এসেছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ছাড় বেড়েছে ৫৫ কোটি ডলার। আগের অর্থবছর, অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৯২১ কোটি ডলার ছাড় করেছিল উন্নয়ন সহযোগীরা।

এদিকে, গত অর্থবছরে ঋণদাতা সংস্থা ও দেশগুলো ১ হাজার ৭২ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। প্রতিশ্রুতি দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে ভারত, চীন ও রাশিয়া গত এক বছরে এক ডলারের অর্থছাড়ও করেনি। যদিও এ তিন দেশ গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অনেক বড় বড় প্রকল্পের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছে।

তবে এ বছর এ তিন দেশ আগের ঋণের অর্থছাড় দিয়েছে। ভারত প্রায় ৩০ কোটি ডলার, চীন ৩৯ কোটি ডলার ও রাশিয়া ১২৯ কোটি ডলারের বেশি অর্থছাড় করেছে। বাংলাদেশের পাইপলাইনে এ বছর ১১ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ পড়ে ছিল।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, কিছু মেগা প্রকল্পের মূল অর্থ পরিশোধ শুরু হবে ২০২৬-২৭ অর্থবছরে এবং সেই বছরে ৫৩১ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করার কথা রয়েছে। এরপর ২০২৭-২৮ অর্থবছরে ৫১৯ মিলিয়ন ডলার এবং ২০২৮-২৯ সালে ৫০৭ মিলিয়ন ডলার শোধ করার আশা করছে সরকার।

সরকারি হিসাবমতে, জুলাই থেকে শুরু হওয়া নতুন অর্থবছরে বিদেশি ঋণ হিসাবে ৪ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার শোধের পরিকল্পনা আছে সরকারের।

এরপর ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সুদসহ বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ দাঁড়াবে অন্তত সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারে।

বাংলাদেশ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে মূলত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, বিশ্বব্যাংক, ভারত, চীন এবং রাশিয়ার কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে বেশি। এসব প্রকল্প সময়মতো শেষ না করতে পারলে ঋণ আরও বাড়তে পারে।