ঢাকা , শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিষিদ্ধ হওয়ার পর যা বললো জামায়াত

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৮:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ অগাস্ট ২০২৪
  • 25

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, দলের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির ও তাদের সব অঙ্গসংগঠনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বিকাল ৪টার দিকে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সরকারের এই প্রজ্ঞাপনের প্রতিবাদ জানিয়েছে জামায়াত।

বৃহস্পতিবার বিকালে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে সদ্য নিষিদ্ধ দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘‘সরকার নিজেদের অপকর্ম ঢাকার জন্য ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ ও ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির’ কে নির্বাহী আদেশবলে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে চলমান আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চাচ্ছে।’’

জামায়াত আমির উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জামায়াতের ঐতিহাসিক ভূমিকা রয়েছে। মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতির উদ্ভাবক জামায়াতে ইসলামী। এই কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে পরপর তিনবার সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।’

‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে ভূমিকা পালন করেছে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় জামায়াতের ছয় জন নেতাকে জঙ্গিদের বোমা হামলায় প্রাণ হারাতে হয়েছে। জামায়াতের সঙ্গে সন্ত্রাসবাাদ ও নৈরাজ্যবাদের কোনও সম্পর্ক নেই’, বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘‘সরকার বিগত ১৬ বছর যাবত জামায়াতের ওপর জুলুম-নিপীড়ন চালিয়েছে। জামায়াত ধৈর্যের সঙ্গে সব পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। বাংলাদেশের সংবিধান সব নাগরিককে সভা-সমাবেশ ও সংগঠন করার অধিকার দিয়েছে। সরকার ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ ও ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির’ কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। আমরা সরকারের এই অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক ও অন্যায় সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’

‘সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেই জামায়াতে ইসলামীর মূল কাজ ইসলামের দাওয়াত, মানুষের চরিত্র সংশোধন ও ইসলামের সুমহান আদর্শ প্রতিষ্ঠার কাজ কখনও বন্ধ হবে না,’ বলে উল্লেখ করেন শফিকুর রহমান।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সব স্তরের জনশক্তিকে ধৈর্য ও সহনশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

জামায়াত আমির বিবৃতিতে আরও বলেন, ‘সরকার বিভিন্ন অঘটন ঘটিয়ে জামায়াতের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা চালাতে পারে। এ ব্যাপারে দেশবাসী সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সরকারের পাতা ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামের সুমহান আদর্শ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে। যুগে যুগে ইসলামের ওপর কোনো আঘাতই এ আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দিতে পারেনি। বর্তমান সরকারসহ কারো আঘাতেই ইসলামী আন্দোলন স্তব্ধ হবে না, ইনশাআল্লাহ।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমি দেশের প্রতিটি নাগরিককে সরকারের গণহত্যা, মানুষের অধিকার হরণ, জুলুম-নিপীড়ন ও ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ও ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির’কে নিষিদ্ধ করার অসাংবিধানিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সাথে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশ, প্রতিষ্ঠান, মানবাধিকার সংস্থা ও সংগঠন এবং বিশ্ববিবেককে বাংলাদেশের ডামি সরকারের সকল অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।

প্রসঙ্গত, পাকিস্তান আমলে জামায়াত ইসলামী প্রথম নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছিল। ১৯৬২ সালে আইয়ুব খান প্রণীত মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশের বিরোধিতা করার কারণে ১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ওই সময় মওদুদী ও গোলাম আজমসহ দলটির অন্তত ৬০ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ওই বছর অক্টোবরেই আবার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। এরপর স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে। সর্বশেষ তৃতীয়বারের মতো শেখ হাসিনার সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলো।

ট্যাগস

নিষিদ্ধ হওয়ার পর যা বললো জামায়াত

আপডেট সময় ০৮:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ অগাস্ট ২০২৪

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, দলের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির ও তাদের সব অঙ্গসংগঠনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বিকাল ৪টার দিকে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সরকারের এই প্রজ্ঞাপনের প্রতিবাদ জানিয়েছে জামায়াত।

বৃহস্পতিবার বিকালে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে সদ্য নিষিদ্ধ দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘‘সরকার নিজেদের অপকর্ম ঢাকার জন্য ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ ও ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির’ কে নির্বাহী আদেশবলে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে চলমান আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চাচ্ছে।’’

জামায়াত আমির উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জামায়াতের ঐতিহাসিক ভূমিকা রয়েছে। মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতির উদ্ভাবক জামায়াতে ইসলামী। এই কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে পরপর তিনবার সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।’

‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে ভূমিকা পালন করেছে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় জামায়াতের ছয় জন নেতাকে জঙ্গিদের বোমা হামলায় প্রাণ হারাতে হয়েছে। জামায়াতের সঙ্গে সন্ত্রাসবাাদ ও নৈরাজ্যবাদের কোনও সম্পর্ক নেই’, বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘‘সরকার বিগত ১৬ বছর যাবত জামায়াতের ওপর জুলুম-নিপীড়ন চালিয়েছে। জামায়াত ধৈর্যের সঙ্গে সব পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। বাংলাদেশের সংবিধান সব নাগরিককে সভা-সমাবেশ ও সংগঠন করার অধিকার দিয়েছে। সরকার ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ ও ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির’ কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। আমরা সরকারের এই অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক ও অন্যায় সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’

‘সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেই জামায়াতে ইসলামীর মূল কাজ ইসলামের দাওয়াত, মানুষের চরিত্র সংশোধন ও ইসলামের সুমহান আদর্শ প্রতিষ্ঠার কাজ কখনও বন্ধ হবে না,’ বলে উল্লেখ করেন শফিকুর রহমান।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সব স্তরের জনশক্তিকে ধৈর্য ও সহনশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

জামায়াত আমির বিবৃতিতে আরও বলেন, ‘সরকার বিভিন্ন অঘটন ঘটিয়ে জামায়াতের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা চালাতে পারে। এ ব্যাপারে দেশবাসী সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সরকারের পাতা ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামের সুমহান আদর্শ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে। যুগে যুগে ইসলামের ওপর কোনো আঘাতই এ আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দিতে পারেনি। বর্তমান সরকারসহ কারো আঘাতেই ইসলামী আন্দোলন স্তব্ধ হবে না, ইনশাআল্লাহ।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমি দেশের প্রতিটি নাগরিককে সরকারের গণহত্যা, মানুষের অধিকার হরণ, জুলুম-নিপীড়ন ও ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ও ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির’কে নিষিদ্ধ করার অসাংবিধানিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সাথে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশ, প্রতিষ্ঠান, মানবাধিকার সংস্থা ও সংগঠন এবং বিশ্ববিবেককে বাংলাদেশের ডামি সরকারের সকল অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।

প্রসঙ্গত, পাকিস্তান আমলে জামায়াত ইসলামী প্রথম নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছিল। ১৯৬২ সালে আইয়ুব খান প্রণীত মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশের বিরোধিতা করার কারণে ১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ওই সময় মওদুদী ও গোলাম আজমসহ দলটির অন্তত ৬০ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ওই বছর অক্টোবরেই আবার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। এরপর স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে। সর্বশেষ তৃতীয়বারের মতো শেখ হাসিনার সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলো।