ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সমন্বয়ক আরিফের জামিন, আসিফ মাহতাবের নামঞ্জুর

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৬:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৪
  • 19

রাজধানীর বনানীর সেতু ভবনে হামলার ঘটনায় করা মামলায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক আরিফ সোহেলের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। অন্যদিকে এ মামলায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎসর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

শনিবার (৩ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শান্ত ইসলাম মল্লিক এ আদেশ দেন।

এদিন ছয় দিনের রিমান্ড শেষে তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের পরিদর্শক আবু সাইদ মিয়া তাদের মামলার তদন্ত শেষে না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। এ সময় তাদের আইনজীবী জয়নাল আবেদীন মেজবাহ জামিন চেয়ে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরোধিতা করে। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আরিফ সোহেলের জামিন মঞ্জুর করেন এবং আসিফ মাহতাবের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এর আগে সোমবার (২৯ জুলাই) তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আবু সাইদ মিয়া। অন্যদিকে তাদের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাঈনুল ইসলাম তাদের জামিন নামঞ্জুর করে ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৮ জুলাই প্রতিদিনের মতো সেতু ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যথারীতি অফিসের কার্যক্রম করতে থাকেন। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অজ্ঞাতপরিচয়ের ২৫০/৩০০ জন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও নাশকতা করার লক্ষে বেআইনি জনতাবদ্ধে আবদ্ধ হয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল নিয়ে অফিসের সামনে এসে সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। সেতু ভবনের সিনিয়র সচিবসহ কর্মকর্তাদের পদ পদবি উল্লেখ করে খোঁজাখুঁজি করে হুমকি প্রদর্শন ও ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে অন্তর্ঘাতমূলক ভীতি সৃষ্টি করে সেতু ভবন লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে।

একপর্যায়ে আসামিরা অফিসের মূল ফটক ভেঙে অনধিকার প্রবেশ করে সেতু ভবনের নিচ তলায় ভবনের সামনে রক্ষিত জিপ, কার, বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, পিকআপ, মোটরসাইকেল, নিরাপত্তা ভবন, সিসি ক্যামেরা, পার্কিং শেড, ক্যানটিন, গাড়িচালকদের কক্ষ, আনসার শেড, মুজিব কর্নার, জেনারেটরস কক্ষসহ মূল ভবন ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ ঘটায়।

এসময়ে সেতু ভবনের সিনিয়র সচিব ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরাসহ সেতু ভবনের ভেতরে থাকা অফিস স্টাফ ও নিরাপত্তাকর্মী আসামিদের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম থেকে সরে যেতে অনুরোধ করলে আসামিরা তাদের হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে সেতু ভবনের সিনিয়র সচিব, অন্য অফিস স্টাফ ও নিরাপত্তাকর্মীদের এলোপাথাড়ি মারধর করে সাধারণ ও গুরুতর জখম করে।

মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, পরবর্তীতে আসামিরা নিচ তলার আনসার শেড, ড্রাইভার শেড থেকে চেয়ার টেবিলসহ অন্যান্য আসবাবপত্র এবং সেতু ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে নিচতলা থেকে ১১ তলা পর্যন্ত অফিসে ভাঙচুর করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে অফিসে রক্ষিত কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ফাইল কেবিনেট, এসি, ফ্যান, পানির ফিল্টার, চেয়ার, টেবিল, আসবাবপত্রসহ অন্যান্য সরকারি ও ব্যক্তিগত মালামালসামগ্রী চুরি করে এবং প্রত্যেক ফ্লোরে অগ্নিসংযোগ ঘটায়।

আসামিদের এরূপ ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ও অগ্নিসংযোগে সেতু ভবনের নিচতলা থেকে ১২ তলা পর্যন্ত ফ্লোরে রক্ষিত সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, পদ্মা সেতু প্রকল্প, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বহুলেন সড়ক টানেল- প্রকল্প, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প সেতু বিভাগের আওতাধীন সব প্রকল্পের প্রধান কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দলিলাদি, এফডিআর ইনস্ট্রুমেন্ট, টেন্ডার সিকিউরিটি ডকুমেন্টস, ইন্টারনেট সার্ভার, শতাধিক কম্পিউটার ও কম্পিউটারসামগ্রী, আসবাব, কম্পিউটার, জেনারেটর, ফায়ার এক্সটিংগুইশারসারসহ যাবতীয় নথিপত্র এবং সেতু ভবনের পার্কিংয়ে থাকা ৩২টি জিপ গাড়ি, ৯টি পিকআপ, ৭টি মাইক্রোবাস, ১টি মিনিবাস, ৫টি মোটরসাইকেল, ১টি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দেওয়া হলে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার মালামাল ভস্মীভূত হয়।

তাৎক্ষণিক বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মারফত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ইউনিটকে সংবাদ দেওয়া হয়। এ ঘটনায় সেতু ভবনের কেয়ারটেকার রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে বনানী থানায় একটি মামলা করেন।

ট্যাগস

সমন্বয়ক আরিফের জামিন, আসিফ মাহতাবের নামঞ্জুর

আপডেট সময় ০৬:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৪

রাজধানীর বনানীর সেতু ভবনে হামলার ঘটনায় করা মামলায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক আরিফ সোহেলের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। অন্যদিকে এ মামলায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎসর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

শনিবার (৩ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শান্ত ইসলাম মল্লিক এ আদেশ দেন।

এদিন ছয় দিনের রিমান্ড শেষে তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের পরিদর্শক আবু সাইদ মিয়া তাদের মামলার তদন্ত শেষে না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। এ সময় তাদের আইনজীবী জয়নাল আবেদীন মেজবাহ জামিন চেয়ে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরোধিতা করে। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আরিফ সোহেলের জামিন মঞ্জুর করেন এবং আসিফ মাহতাবের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এর আগে সোমবার (২৯ জুলাই) তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আবু সাইদ মিয়া। অন্যদিকে তাদের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাঈনুল ইসলাম তাদের জামিন নামঞ্জুর করে ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৮ জুলাই প্রতিদিনের মতো সেতু ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যথারীতি অফিসের কার্যক্রম করতে থাকেন। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অজ্ঞাতপরিচয়ের ২৫০/৩০০ জন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও নাশকতা করার লক্ষে বেআইনি জনতাবদ্ধে আবদ্ধ হয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল নিয়ে অফিসের সামনে এসে সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। সেতু ভবনের সিনিয়র সচিবসহ কর্মকর্তাদের পদ পদবি উল্লেখ করে খোঁজাখুঁজি করে হুমকি প্রদর্শন ও ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে অন্তর্ঘাতমূলক ভীতি সৃষ্টি করে সেতু ভবন লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে।

একপর্যায়ে আসামিরা অফিসের মূল ফটক ভেঙে অনধিকার প্রবেশ করে সেতু ভবনের নিচ তলায় ভবনের সামনে রক্ষিত জিপ, কার, বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, পিকআপ, মোটরসাইকেল, নিরাপত্তা ভবন, সিসি ক্যামেরা, পার্কিং শেড, ক্যানটিন, গাড়িচালকদের কক্ষ, আনসার শেড, মুজিব কর্নার, জেনারেটরস কক্ষসহ মূল ভবন ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ ঘটায়।

এসময়ে সেতু ভবনের সিনিয়র সচিব ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরাসহ সেতু ভবনের ভেতরে থাকা অফিস স্টাফ ও নিরাপত্তাকর্মী আসামিদের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম থেকে সরে যেতে অনুরোধ করলে আসামিরা তাদের হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে সেতু ভবনের সিনিয়র সচিব, অন্য অফিস স্টাফ ও নিরাপত্তাকর্মীদের এলোপাথাড়ি মারধর করে সাধারণ ও গুরুতর জখম করে।

মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, পরবর্তীতে আসামিরা নিচ তলার আনসার শেড, ড্রাইভার শেড থেকে চেয়ার টেবিলসহ অন্যান্য আসবাবপত্র এবং সেতু ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে নিচতলা থেকে ১১ তলা পর্যন্ত অফিসে ভাঙচুর করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে অফিসে রক্ষিত কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ফাইল কেবিনেট, এসি, ফ্যান, পানির ফিল্টার, চেয়ার, টেবিল, আসবাবপত্রসহ অন্যান্য সরকারি ও ব্যক্তিগত মালামালসামগ্রী চুরি করে এবং প্রত্যেক ফ্লোরে অগ্নিসংযোগ ঘটায়।

আসামিদের এরূপ ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ও অগ্নিসংযোগে সেতু ভবনের নিচতলা থেকে ১২ তলা পর্যন্ত ফ্লোরে রক্ষিত সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, পদ্মা সেতু প্রকল্প, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বহুলেন সড়ক টানেল- প্রকল্প, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প সেতু বিভাগের আওতাধীন সব প্রকল্পের প্রধান কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দলিলাদি, এফডিআর ইনস্ট্রুমেন্ট, টেন্ডার সিকিউরিটি ডকুমেন্টস, ইন্টারনেট সার্ভার, শতাধিক কম্পিউটার ও কম্পিউটারসামগ্রী, আসবাব, কম্পিউটার, জেনারেটর, ফায়ার এক্সটিংগুইশারসারসহ যাবতীয় নথিপত্র এবং সেতু ভবনের পার্কিংয়ে থাকা ৩২টি জিপ গাড়ি, ৯টি পিকআপ, ৭টি মাইক্রোবাস, ১টি মিনিবাস, ৫টি মোটরসাইকেল, ১টি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দেওয়া হলে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার মালামাল ভস্মীভূত হয়।

তাৎক্ষণিক বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মারফত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ইউনিটকে সংবাদ দেওয়া হয়। এ ঘটনায় সেতু ভবনের কেয়ারটেকার রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে বনানী থানায় একটি মামলা করেন।