রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রথম কার্যদিবসে দেশের শেয়ারবাজারে মূল্যসূচকের বড় উল্লম্ফন ঘটেছে। বেড়েছেন লেনদেনের পরিমাণ। কিন্তু এমন চাঙ্গা দিনেও সালমান এফ রহমানের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারের দর পতন হয়েছে। অন্যদিকে এসব কোম্পানির শেয়ারের কেনাবেচাও ছিল নামমাত্র।
গতকাল সোমবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তুমুল গণআন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে গেছেন। আগেরদিন রাতে পালিয়ে যান তার শিল্প ও বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা বিতর্কিত ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমান। এ ঘটনার প্রভাব পড়েছে সালমান এফ রহমানের সঙ্গে সম্পর্কিত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দামে।
তিনি দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠি বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার। এই গ্রুপের তিনটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত আছে। কোম্পানিগুলো হচ্ছে-বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও শাইনপুকুর সিরামিকস। বেক্সিমকোর ইস্যু করা ইসলামী শরীয়াহসম্মত বন্ড বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক আল ইস্তেনা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। অন্যদিকে সালমান এফ রহমান তালিকাভুক্ত আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান।
মঙ্গলবার সরকার পরিবর্তন পরবর্তী প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ৩৯৭ কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে ৩২৮টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে মাত্র ৬০টি কোম্পানির দাম। এদিন বাজারে ৮৩ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়লেও সালমান এফ রহমানের সঙ্গে সম্পর্কিত সিকিউরিটিজগুলোর শেয়ারের দামে ছিল নেতিবাচক অবস্থা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আজ বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ারের দাম ২ দশমিক ৯৫ শতাংশ কমে ১০২ টাকা ১০ পয়সায় নেমেছে। বিদ্যমান সার্কিটব্রেকার অনুসারে, একদিনে কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। সে হিসেবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ারের দরপতন সার্কিটব্রেকার স্পর্শ করেছে।
এদিন শাইনপুকুর সিরামিকসের শেয়ারের দাম কমেছে ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ। শেয়ারটির দাম ৯০ পয়সা কমেছে ৩০ টাকা ৪০ পয়সা হয়েছে।
মঙ্গলবার ডিএসইতে বেক্সিমকো সুকুকের দাম ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ কমে ৭০ টাকা ৫০ পয়সা নেমেছে।
তবে এদিন ফ্লোরপ্রাইসে আটকে থাকা বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারের দামে কোনো পরিবর্তন আসেনি। ফ্লোরপ্রাইস থাকায় শেয়ারটির দাম কমার সুযোগ নেই।
আজ এসব কোম্পানির শেয়ার ও বন্ডের ইউনিটের কেনাবেচার পরিমাণও ছিল নামেমাত্র।
অন্যদিকে মঙ্গলবার ডিএসইতে আইএফআইসি ব্যাংকের শেয়ারের দাম ২ দশমিক ২৫ শতাংশ কমে ৮ টাকা ৭০ পয়সায় নেমেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিগুলোর ব্যবসায় রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে-এমন আশংকা করছেন। বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা খুবই স্বাভাবিক। এছাড়া বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধারদের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থাও অনেক কম। তারা তাদের প্রয়োজন অনুসারে কোম্পানির পারফরম্যান্স দেখিয়ে থাকেন বলে মনে করেন বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী। সরকার পরির্ব্তনের কারণে বাস্তবে কোম্পানিগুলোর ব্যবসা যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তারচেয়ে বেশি ক্ষতি দেখিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ঠকানোর চেষ্টা করা হতে পারে বলে আশংকা তাদের। এসবেরই প্রভাব ছিল আজ কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দামে।