প্রবল গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে-পরে তাঁর বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি দেশ থেকে পালিয়েছেন। পালিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) শিল্প ও বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমানও, যিনি সাধারণের কাছে সালমান এফ রহমান নামেই বেশি পরিচিত।
শেয়ারবাজার ও ব্যাংকিং খাতে অসংখ্য কেলেঙ্কারির জন্মদাতা বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমান আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একই বিমানে করে পালিয়েছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোটা সংস্কার আন্দোলনের এক পর্যায়ে গত ১৭ ছাত্রলীগের হামলা এবং পরবর্তীতে পুলিশের গুলিতে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদের মৃত্যুর পর আন্দোলন সাধারণ মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। সরকারের দমনপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ বাড়তে থাকায় ওই আন্দোলন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে পরিণত হয়। আন্দোলন মোকাবেলায় পুলিশ, র্যাব, বর্ডার গার্ড ও সেনাবাহিনীকে মাঠে নামানোর পরও তা নিয়ন্ত্রণে আসায় ভয়ে সরকারের অনেক মন্ত্রী, এমপি ও আওয়ামীলীগ নেতা রোববার রাতের মধ্যে বিদেশে পালিয়ে যান।
বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস-চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানও রোববার রাতে বিদেশ পালিয়েছেন বলে নানা গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছিল। কিন্তু বার্তা সংস্থা বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ করা পর্যন্ত তিনি দেশেই ছিলেন। প্রতিবেদন অনুসারে, সোমবার (৫ আগস্ট) দুপুরে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর তাকে, তার বোন রেহানা ও সালমান এফ রহমানকে হেলিকপ্টারে করে কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি পরিবহন বিমানে করে তাদেরকে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির কাছে গজিয়াবাদ হিন্দন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে। তখন থেকে তাঁরা বিমানঘাঁটির কাছের একটি নিরাপদ স্থানে অবস্থান করছিলেন।
এদিকে আজ ভারতের ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার সঙ্গীরা একে একে দিল্লী ছাড়তে শুরু করেছেন। তবে কে কে দিল্লী ছেড়েছেন, তাদের গন্তব্য কোথায় তা জানাতে পারেনি পত্রিকাটি। দিল্লী ছেড়ে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সালমান এফ রহমান আছেন কিনা, নাকি তিনি হাসিনার সঙ্গে দিল্লীতেই অবস্থান করছেন তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সালমান এফ রহমান হচ্ছেন ১৯৭৫ সালে জাতিরজনকের সঙ্গে ঘাতকের গুলিতে নিহত শেখ হাসিনার ভাই শেখ কামালের বন্ধু। দেশের পরিস্থিতি যে ক্রমেই সরকারের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে, সেটি তিনি ৫ আগস্টের আগেই বুঝতে পেরেছিলেন। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুসারে, তিনি শেখ হাসিনাকে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে নিরাপদে সরে যাওয়ার অনুরোধও করেছিলেন। কিন্তু একরোখা শেখ হাসিনা তাতে কর্ণপাত করেননি। তবে পরবর্তীতে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার বিশাল মিছিল গণভবনের দিকে এগিয়ে আসতে থাকলে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের পরামর্শ এবং শেখ রেহানা ও সজিব ওয়াজেদ জয়ের অনুরোধে তিনি পদত্যাগে সম্মত হন। সালমান এফ রহমান আন্দোলনে নিহতদের প্রতিও কিছুটা সহমর্মী ছিলেন।