ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রেকর্ড লেনদেনের পরদিনই কেন বড় দরপতন?

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ১১:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৪
  • 23

টানা চারদিন রুদ্ধশ্বাস দৌঁড়ের পর থেমেছে পুঁজিবাজারের পাগলা ঘোড়া। শুধু থামা-ই নয়, কিছুটা পিছিয়েও এসেছে বাজার। কমেছে মূল্যসূচক ও লেনদেনের পরিমাণ। অথচ আগের দিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) রেকর্ড ২ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। গত কয়েক বছরে এত লেনদেন আর হয়নি।

অনেক বিনিয়োগকারীরই মনে উদ্বেগ, রেকর্ড লেনদেনের পরদিনই বাজার নিম্নমুখী হল কেন?

বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাজার নিয়ে তেমন উদ্বেগের কিছু নেই। টানা চারদিনে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম ১০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশের কাছাকাছি বেড়েছিল। তাই অনেক বিনিয়োগকারী, বিশেষ করে গত মঙ্গল ও বুধবার শেয়ার কিনেছিলেন তাদের উল্লেখযোগ্য অংশ আজ শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নিয়েছেন। এটি স্বাভাবিক ও সুস্থতার লক্ষন। বরং মূল্যসংশোধন না হয়ে আজও গণহারে সব শেয়ারের দাম ও সূচক বাড়লে সেটি হতো বাজারের জন্য বিপজ্জনক।

গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর মঙ্গলবার লেনদেন শুরু হয় বাজারে। পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রথম দিনেই বাজারে মূল্যসূচকের বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটে। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স এক লাফে ৫ হাজার ২২৯ দশমিক ২৬ পয়েন্ট থেকে ৫ হাজার ৪২৬ দশমিক ৪২ পয়েন্টে ওঠে যায়। সূচক বৃদ্ধি পায় ১৯৭ দশমিক ১৬ পয়েন্ট। পরদিন এই সূচক বাড়ে ১৯২ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট। বুধবার, লেনদেন শুরুর তৃতীয় দিনে সূচকের বৃদ্ধি হয় আগের দু’দিনের চেয়েও বেশি। এদিন ডিএসইএক্স বাড়ে ৩০৬ দশমিক ০২ পয়েন্ট। চতুর্থ দিনে সূচকটি আরও ৯১ দশমিক ০৯ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ১১৫ দশমিক ৯০ পয়েন্টে উন্নীত হয়। ডিএসইএক্সের এই অবস্থান গত ২ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

আগের চার দিনে ডিএসইএক্স বেড়েছে ৭৮৬ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট। শতকরা হিসেবে বৃদ্ধির হার ১৫ দশমিক ০৪ শতাংশ। তবে এরচেয়েও বেশি হারে বৃদ্ধি পায় বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম।

এদিকে আজ সোমবারও সূচকের উর্ধমুখী ধারায় লেনদেন শুরু হয় বাজারে। মাত্র দুই মিনিটে ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৪১ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৫৭ দশমিক ৪৬ পয়েন্টে উন্নীত হয়। তবে সেখান থেকে সূচকটি খাড়া নিমে নেমে আসে। পরবর্তী ৭ মিনিটের মধ্যে এটি ১৪২ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৯১৪ দশমিক ৮২ পয়েন্টে নেমে আসে। এরপর এটি ওঠা-নামার মধ্য দিয়ে এগিয়ে দিনশেষে ৫ হাজার ৯৩২ দশমিক ২৭ এসে স্থির হয়। সূচকটি কমে ৮৩ দশমিক ৬৩।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কয়েকটি কারণে আজ বাজারে এমন দর পতন হয়েছে। প্রথমতঃ বাজারের এমন উল্লম্ফনটিই স্বাভাবিক ছিল না। মাত্রই সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখনো অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ার মত অবস্থা হয়নি। তাই এত অল্প সময়ে সূচক এতটা বৃদ্ধি পাওয়া যৌক্তিক ছিল না। তবে এটিকে আবার বেশি অস্বাভাবিকও বলা যাবে না। পুঁজিবাজার হচ্ছে এমন জায়গা যেখানে গণমনস্তত্ত্বের তীব্র প্রভাব পড়ে। বিদায়ী আওয়ামীলীগ সরকারের মেয়াদে গত ১৫ বছরে বাজার ছিল নিম্নমুখী। বিশেষ করে গত দুই বছর ধরে বাজারের অবস্থা ছিল খুবই নাজুক। দেশের অর্থনীতি নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ ছিল। সরকার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে দেশের জনসাধারণের মতো বিনিয়োগকারীরাও দমবন্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছে। রুদ্ধশ্বাস অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার কারণে তাদের আবেগও বেশী ছিল। বাজারে তারই প্রভাব পড়েছিল।

দ্বিতীয়ত: গত ৪দিনে টানা উর্ধগতির ফলে অনেক বিনিয়োগকারীর কেনা শেয়ারে উল্লেখযোগ্য মুনাফা হয়েছে। তারা এসব শেয়ারের একটি অংশ বিক্রি করে মুনাফা তুলে নিয়েছেন।

তৃতীয়তঃ সময় যত যাচ্ছে আবেগ তত কমছে। বিনিয়োগকারীরা আবেগের চেয়ে যৌক্তিকতাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

চতুর্থতঃ পুঁজিবাজারে ৬টি কোম্পানির ফ্লোরপ্রাইস প্রত্যাহার করা, না করা নিয়ে রোববার যে বিভ্রান্তি ও জটিলতা দেখা গেছে, তাতে অনেক বিনিয়োগকারীর আস্থায় কিছুটা হলেও চিঁড় ধরেছে। তারা মনে করছেন, নেতৃত্বশুন্য সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত বাজার পরিচালনা মসৃন হবে না।

তবে বিশ্লেষকরা এটিও মনে করেন, বাজার নিয়ে আপাতত উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। চারদিনের টাকা উর্ধগতির পরও তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম যৌক্তিক পর্যায়ের অনেক নিচে আছে। অন্যদিকে রেমিটেন্স প্রবাহে ইতিবাচক বাতাস লেগেছে। একজন সফল সাবেক গভর্নর অর্থ উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়েছেন, যিনি আর্থিক খাত ও পুঁজিবাজার সংস্কারে কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারবেন। অর্থনীতিতে গতি ফিরলে পুঁজিবাজারেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

ট্যাগস

রেকর্ড লেনদেনের পরদিনই কেন বড় দরপতন?

আপডেট সময় ১১:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৪

টানা চারদিন রুদ্ধশ্বাস দৌঁড়ের পর থেমেছে পুঁজিবাজারের পাগলা ঘোড়া। শুধু থামা-ই নয়, কিছুটা পিছিয়েও এসেছে বাজার। কমেছে মূল্যসূচক ও লেনদেনের পরিমাণ। অথচ আগের দিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) রেকর্ড ২ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। গত কয়েক বছরে এত লেনদেন আর হয়নি।

অনেক বিনিয়োগকারীরই মনে উদ্বেগ, রেকর্ড লেনদেনের পরদিনই বাজার নিম্নমুখী হল কেন?

বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাজার নিয়ে তেমন উদ্বেগের কিছু নেই। টানা চারদিনে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম ১০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশের কাছাকাছি বেড়েছিল। তাই অনেক বিনিয়োগকারী, বিশেষ করে গত মঙ্গল ও বুধবার শেয়ার কিনেছিলেন তাদের উল্লেখযোগ্য অংশ আজ শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নিয়েছেন। এটি স্বাভাবিক ও সুস্থতার লক্ষন। বরং মূল্যসংশোধন না হয়ে আজও গণহারে সব শেয়ারের দাম ও সূচক বাড়লে সেটি হতো বাজারের জন্য বিপজ্জনক।

গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর মঙ্গলবার লেনদেন শুরু হয় বাজারে। পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রথম দিনেই বাজারে মূল্যসূচকের বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটে। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স এক লাফে ৫ হাজার ২২৯ দশমিক ২৬ পয়েন্ট থেকে ৫ হাজার ৪২৬ দশমিক ৪২ পয়েন্টে ওঠে যায়। সূচক বৃদ্ধি পায় ১৯৭ দশমিক ১৬ পয়েন্ট। পরদিন এই সূচক বাড়ে ১৯২ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট। বুধবার, লেনদেন শুরুর তৃতীয় দিনে সূচকের বৃদ্ধি হয় আগের দু’দিনের চেয়েও বেশি। এদিন ডিএসইএক্স বাড়ে ৩০৬ দশমিক ০২ পয়েন্ট। চতুর্থ দিনে সূচকটি আরও ৯১ দশমিক ০৯ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ১১৫ দশমিক ৯০ পয়েন্টে উন্নীত হয়। ডিএসইএক্সের এই অবস্থান গত ২ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

আগের চার দিনে ডিএসইএক্স বেড়েছে ৭৮৬ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট। শতকরা হিসেবে বৃদ্ধির হার ১৫ দশমিক ০৪ শতাংশ। তবে এরচেয়েও বেশি হারে বৃদ্ধি পায় বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম।

এদিকে আজ সোমবারও সূচকের উর্ধমুখী ধারায় লেনদেন শুরু হয় বাজারে। মাত্র দুই মিনিটে ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৪১ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৫৭ দশমিক ৪৬ পয়েন্টে উন্নীত হয়। তবে সেখান থেকে সূচকটি খাড়া নিমে নেমে আসে। পরবর্তী ৭ মিনিটের মধ্যে এটি ১৪২ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৯১৪ দশমিক ৮২ পয়েন্টে নেমে আসে। এরপর এটি ওঠা-নামার মধ্য দিয়ে এগিয়ে দিনশেষে ৫ হাজার ৯৩২ দশমিক ২৭ এসে স্থির হয়। সূচকটি কমে ৮৩ দশমিক ৬৩।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কয়েকটি কারণে আজ বাজারে এমন দর পতন হয়েছে। প্রথমতঃ বাজারের এমন উল্লম্ফনটিই স্বাভাবিক ছিল না। মাত্রই সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখনো অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ার মত অবস্থা হয়নি। তাই এত অল্প সময়ে সূচক এতটা বৃদ্ধি পাওয়া যৌক্তিক ছিল না। তবে এটিকে আবার বেশি অস্বাভাবিকও বলা যাবে না। পুঁজিবাজার হচ্ছে এমন জায়গা যেখানে গণমনস্তত্ত্বের তীব্র প্রভাব পড়ে। বিদায়ী আওয়ামীলীগ সরকারের মেয়াদে গত ১৫ বছরে বাজার ছিল নিম্নমুখী। বিশেষ করে গত দুই বছর ধরে বাজারের অবস্থা ছিল খুবই নাজুক। দেশের অর্থনীতি নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ ছিল। সরকার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে দেশের জনসাধারণের মতো বিনিয়োগকারীরাও দমবন্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছে। রুদ্ধশ্বাস অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার কারণে তাদের আবেগও বেশী ছিল। বাজারে তারই প্রভাব পড়েছিল।

দ্বিতীয়ত: গত ৪দিনে টানা উর্ধগতির ফলে অনেক বিনিয়োগকারীর কেনা শেয়ারে উল্লেখযোগ্য মুনাফা হয়েছে। তারা এসব শেয়ারের একটি অংশ বিক্রি করে মুনাফা তুলে নিয়েছেন।

তৃতীয়তঃ সময় যত যাচ্ছে আবেগ তত কমছে। বিনিয়োগকারীরা আবেগের চেয়ে যৌক্তিকতাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

চতুর্থতঃ পুঁজিবাজারে ৬টি কোম্পানির ফ্লোরপ্রাইস প্রত্যাহার করা, না করা নিয়ে রোববার যে বিভ্রান্তি ও জটিলতা দেখা গেছে, তাতে অনেক বিনিয়োগকারীর আস্থায় কিছুটা হলেও চিঁড় ধরেছে। তারা মনে করছেন, নেতৃত্বশুন্য সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত বাজার পরিচালনা মসৃন হবে না।

তবে বিশ্লেষকরা এটিও মনে করেন, বাজার নিয়ে আপাতত উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। চারদিনের টাকা উর্ধগতির পরও তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম যৌক্তিক পর্যায়ের অনেক নিচে আছে। অন্যদিকে রেমিটেন্স প্রবাহে ইতিবাচক বাতাস লেগেছে। একজন সফল সাবেক গভর্নর অর্থ উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়েছেন, যিনি আর্থিক খাত ও পুঁজিবাজার সংস্কারে কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারবেন। অর্থনীতিতে গতি ফিরলে পুঁজিবাজারেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।