ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শেয়ারবাজারের রক্ষকই ছিলেন ভক্ষকের ভূমিকায়

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ১২:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • 8

সর্ষের মধ্যেই ভূত এই ভূতের নাম শিবলী রুবায়েত উল ইসলাম। দেশের শেয়ারবাজার থেকে ভূত তাড়ানোর দায়িত্ব নিয়ে তিনি হয়ে উঠেছলেন নষ্ট ভূতের চাঞ্চল্য প্রমাণ। ঋণখেলাপি হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে যখন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয় স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার, তখনই আতঙ্কে শিউরে উঠেছিলেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।

প্রভাবশালী কিছু আমলা ব্যবসায়ী আর আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে দুষ্টচক্র করে পুরো শেয়ারবাজারকে পরিণত করেন এক মগের মুল্লুকে। লুটে নেন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বহু কষ্টার্জিত সঞ্চয় ও বিনিয়োগের হাজার হাজার কোটি টাকা।

শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর সাথে সাথে পতন ঘটে শেয়ারবাজারের গডফাদার শিবলী রুবাইয়াতের। স্বৈরশাসনের আমলে বিএসইসির চেয়ারম্যান হয়ে আধিপত্য বিস্তার করেছিল শিবলী রুবায়াত। আইপিও অনুমোদন থেকে শুরু করে সেকেন্ডারি মার্কেটে শুধু নয়, বিদেশে রোড শো’র আয়োজনের নামে লুটপাট ও পাচার করেছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। শিবলী রুবায়াতের নেতৃত্বে বিএসইসি ১১টি দেশে কমপক্ষে ১৭টি রোড শো করেছে।

এসব করা হয়েছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম ও চীনে। বাধ্য করা হয় ডজনেরও বেশি কোম্পানিকে তথাকথিত রোড শো’র পৃষ্ঠপোষকতা করতে। এই স্পন্সরদের মধ্যে অন্যতম ছিলো ইউসিবি, ওয়ালটন, প্রাণ গ্রুপ, ইবিল সিকিউরিটিজ, গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স। রোড শো’র মাধ্যমে ৫০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবায়াত।

শেয়ারবাজারের কভার করার দায়িত্বে থাকা একদল সাংবাদিককে আমেরিকা, ব্রিটেনসহ নানা দেশে সফরসঙ্গী হিসাবে নিয়ে তিনি গণমাধ্যমের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করেন। শিবলীর বিদায়ের আগে পর্যন্ত দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের নামে এসব রোড শো চলে একের পর এক।

সেই সময়ের ভূমিমন্ত্রী এবং ইউসিবি ব্যাংকের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের প্রভাবে ২০২১ সালে ইউকে রোড শো’র জন্য ২.৫০ লাখ পাউন্ড ব্যয় করা হয়। এছাড়াও ২০২১ এর শুরুতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে রোড শো’র জন্য ১ কোটি ২০ লাখ টাকারও বেশি অর্থ দেওয়া হয়েছিল। বিএসইসিতে যোগ দেওয়ার সময়ে শিবলী রুবাইয়াত ছিলেন ঋণখেলাপি। তার সঙ্গে ওঠাবসা চক্র ছিল শেয়ারবাজারে লুটপাটকারী সহযোদ্ধা। তিনি বিএসইসির চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের স্বাধীনতাকে কবর দিয়েছিলেন। সেই সময়েও আড়ালে-আবডালে এসব ঘটনা ছিল শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের প্রধান আলোচ্য বিষয়।

শেয়ারবাজার ধ্বংসকারী শিবলী রুবাইয়াত ছিলেন সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের দুর্নীতি চক্রের সদস্য। বেক্সিমকো তিন হাজার কোটি টাকার সুকুক বন্ড অনুমোদন দেন এই শিবলী রুবাইয়াত। এরপর এসব বন্ডের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা তোলা হয় বাজার থেকে। এই বছরের শুরুতে আরও ২ হাজার ৫শ কোটি টাকার বন্ড জারিতে আংশিক সফলও হয় বেক্সিমকো।

শিবলি রুবাইয়াত ন্যাশনাল ব্যাংকের টাকা পরিশোধের জন্য সিটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। নীল দিগন্ত নামে ভুয়া একটি প্রতিষ্ঠানের কাগজ বানিয়ে ঋণ নেওয়ার মাধ্যমে হাতিয়ে নেন সিটি ব্যাংক থেকে ১০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। তাঁর স্ত্রীর নামে দুবাইতে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি পাহাড় করেন শিবলী রুবাইয়াত। যদিও স্ত্রী ছাড়াও অনেক নারীতে আসক্ত ছিলেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে জড়িয়ে ছিলেন নারী কেলেঙ্কারিতে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলেও শেয়ারবাজারে ধসের কুখ্যাত খলনায়ক শিবলী রুবায়েত হয়ে ওঠেন রাক্ষসের মতো এক ভয়ানক রাক্ষস।

ট্যাগস

শেয়ারবাজারের রক্ষকই ছিলেন ভক্ষকের ভূমিকায়

আপডেট সময় ১২:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সর্ষের মধ্যেই ভূত এই ভূতের নাম শিবলী রুবায়েত উল ইসলাম। দেশের শেয়ারবাজার থেকে ভূত তাড়ানোর দায়িত্ব নিয়ে তিনি হয়ে উঠেছলেন নষ্ট ভূতের চাঞ্চল্য প্রমাণ। ঋণখেলাপি হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে যখন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয় স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার, তখনই আতঙ্কে শিউরে উঠেছিলেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।

প্রভাবশালী কিছু আমলা ব্যবসায়ী আর আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে দুষ্টচক্র করে পুরো শেয়ারবাজারকে পরিণত করেন এক মগের মুল্লুকে। লুটে নেন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বহু কষ্টার্জিত সঞ্চয় ও বিনিয়োগের হাজার হাজার কোটি টাকা।

শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর সাথে সাথে পতন ঘটে শেয়ারবাজারের গডফাদার শিবলী রুবাইয়াতের। স্বৈরশাসনের আমলে বিএসইসির চেয়ারম্যান হয়ে আধিপত্য বিস্তার করেছিল শিবলী রুবায়াত। আইপিও অনুমোদন থেকে শুরু করে সেকেন্ডারি মার্কেটে শুধু নয়, বিদেশে রোড শো’র আয়োজনের নামে লুটপাট ও পাচার করেছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। শিবলী রুবায়াতের নেতৃত্বে বিএসইসি ১১টি দেশে কমপক্ষে ১৭টি রোড শো করেছে।

এসব করা হয়েছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম ও চীনে। বাধ্য করা হয় ডজনেরও বেশি কোম্পানিকে তথাকথিত রোড শো’র পৃষ্ঠপোষকতা করতে। এই স্পন্সরদের মধ্যে অন্যতম ছিলো ইউসিবি, ওয়ালটন, প্রাণ গ্রুপ, ইবিল সিকিউরিটিজ, গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স। রোড শো’র মাধ্যমে ৫০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবায়াত।

শেয়ারবাজারের কভার করার দায়িত্বে থাকা একদল সাংবাদিককে আমেরিকা, ব্রিটেনসহ নানা দেশে সফরসঙ্গী হিসাবে নিয়ে তিনি গণমাধ্যমের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করেন। শিবলীর বিদায়ের আগে পর্যন্ত দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের নামে এসব রোড শো চলে একের পর এক।

সেই সময়ের ভূমিমন্ত্রী এবং ইউসিবি ব্যাংকের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের প্রভাবে ২০২১ সালে ইউকে রোড শো’র জন্য ২.৫০ লাখ পাউন্ড ব্যয় করা হয়। এছাড়াও ২০২১ এর শুরুতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে রোড শো’র জন্য ১ কোটি ২০ লাখ টাকারও বেশি অর্থ দেওয়া হয়েছিল। বিএসইসিতে যোগ দেওয়ার সময়ে শিবলী রুবাইয়াত ছিলেন ঋণখেলাপি। তার সঙ্গে ওঠাবসা চক্র ছিল শেয়ারবাজারে লুটপাটকারী সহযোদ্ধা। তিনি বিএসইসির চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের স্বাধীনতাকে কবর দিয়েছিলেন। সেই সময়েও আড়ালে-আবডালে এসব ঘটনা ছিল শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের প্রধান আলোচ্য বিষয়।

শেয়ারবাজার ধ্বংসকারী শিবলী রুবাইয়াত ছিলেন সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের দুর্নীতি চক্রের সদস্য। বেক্সিমকো তিন হাজার কোটি টাকার সুকুক বন্ড অনুমোদন দেন এই শিবলী রুবাইয়াত। এরপর এসব বন্ডের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা তোলা হয় বাজার থেকে। এই বছরের শুরুতে আরও ২ হাজার ৫শ কোটি টাকার বন্ড জারিতে আংশিক সফলও হয় বেক্সিমকো।

শিবলি রুবাইয়াত ন্যাশনাল ব্যাংকের টাকা পরিশোধের জন্য সিটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। নীল দিগন্ত নামে ভুয়া একটি প্রতিষ্ঠানের কাগজ বানিয়ে ঋণ নেওয়ার মাধ্যমে হাতিয়ে নেন সিটি ব্যাংক থেকে ১০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। তাঁর স্ত্রীর নামে দুবাইতে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি পাহাড় করেন শিবলী রুবাইয়াত। যদিও স্ত্রী ছাড়াও অনেক নারীতে আসক্ত ছিলেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে জড়িয়ে ছিলেন নারী কেলেঙ্কারিতে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলেও শেয়ারবাজারে ধসের কুখ্যাত খলনায়ক শিবলী রুবায়েত হয়ে ওঠেন রাক্ষসের মতো এক ভয়ানক রাক্ষস।