ঢাকা , রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সচিব পদে পদোন্নতিতে নতুন শর্ত

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ১২:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • 25

গত ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে প্রশাসনের শীর্ষ তিন পদ উপ-সচিব, যুগ্ন-সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে প্রায় ৪৫০ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অতিরিক্ত সচিব হয়েছেন প্রায় দেড় শতাধিক কর্মকর্তা।

এরপর সচিব পদে পদোন্নতির জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় একটি নতুন শর্ত আরো করেছে।সেটি হলো- অতিরিক্ত সচিব হিসেবে প্রত্যক্ষভাবে অন্তত এক বছরের কাজের অভিজ্ঞতা ছাড়া সচিব পদোন্নতি দেওয়া হবে না।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এর মাধ্যমে সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিবদের নূন্যতম অভিজ্ঞতা নিয়ে সচিব হতে হবে।

‘ভূতাপেক্ষ’তার ভিত্তিতে পদোন্নতি পাওয়া এসব কর্মকর্তার মধ্যে অনেকে বিদ্যমান বিধিমালা অনুযায়ী সচিব হওয়ার যোগ্যতাও অর্জন করেছেন। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী অতিরিক্ত সচিব থেকে সচিব পদোন্নতি পেতে দুই বছরের অভিজ্ঞতার দরকার হয়। সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্তদের মধ্যে কিছু কর্মকর্তা আছেন, তাদের সেই শর্তও পূরণ হয়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত সচিব হিসেবে কোনো কাজের অভিজ্ঞতা তাদের নেই।

এই কারণেই সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্তদের মধ্য থেকে সচিব পদোন্নতি দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা ও যোগ্যতা যাচাই করতে এক বছরের ‘ওয়ার্কিং এক্সপেরিয়েন্স’ দেখতে চাচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, ‘বৈষম্যের শিকার’ বেসামরিক কর্মচারীদের কাছ থেকে পদোন্নতির জন্য প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অন্যদিকে শীর্ষ পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মকর্তা বাছাই করা না গেলে সরকারকেই সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।

অন্তবর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টা এই বিষয়ে বলেন, সম্প্রতি সময়ে গণহারে যেসব পদোন্নতি হয়েছে, তার প্রতিফলন সচিব পদের পদোন্নতিতে দেখতে চায় না সরকার। কারণ, সচিবরা মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রশাসনিক প্রধান। তাদের ওপর সেই মন্ত্রণালয়ের সাফল্য-ব্যর্থতা নির্ভর করে। আর সচিবদের সামগ্রিক কাজের ফলের ওপর নির্ভর করে সরকারের ভাবমূর্তি। তাই সরকার এই বিষয়টিতে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জনপ্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে কিছু যোগ্য কর্মকর্তা পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ওইসব কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিতে গিয়ে অনেক অযোগ্য, শাস্তিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও পদোন্নতি পেয়েছেন। যারা সরকারের জন্য এখন অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এদের অনেকেই আবার সচিব পদে পদোন্নতির জন্য তদবির শুরু করেছেন।

মাত্র এক সপ্তাহে সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব হয়েছেন, এমন নজিরও রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে প্রশাসনের ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা বাবুল মিয়ার ঘটনাটি উল্লেখ করা যায়। তাকে ১৩ আগস্ট উপসচিব, ১৫ আগস্ট যুগ্ম সচিব ও ১৮ আগস্ট অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এই কর্মকর্তা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানের ক্রেস্টে স্বর্ণ জালিয়াতির ঘটনায় শাস্তি পেয়েছিলেন।

সরকারের সাবেক সচিব একেএম আব্দুল আউয়াল মজুমদার এই বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়েছে। তাদের মধ্যে কিছু কর্মকর্তা সত্যিই পদোন্নতির যোগ্য ছিলেন, কারণ তারা দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত। তবে, অনেকে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছেন। এটা সত্য।’

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি সচিব বা কোনো বিভাগের প্রধানের মতো উচ্চ পদে পদোন্নতির জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের অভিজ্ঞতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই সচিব হওয়ার আগে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে অন্তত এক বছর কর্মকালীন অভিজ্ঞতার যে সিদ্ধান্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নিয়েছে তা ইতিবাচক।’

ট্যাগস

সচিব পদে পদোন্নতিতে নতুন শর্ত

আপডেট সময় ১২:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

গত ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে প্রশাসনের শীর্ষ তিন পদ উপ-সচিব, যুগ্ন-সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে প্রায় ৪৫০ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অতিরিক্ত সচিব হয়েছেন প্রায় দেড় শতাধিক কর্মকর্তা।

এরপর সচিব পদে পদোন্নতির জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় একটি নতুন শর্ত আরো করেছে।সেটি হলো- অতিরিক্ত সচিব হিসেবে প্রত্যক্ষভাবে অন্তত এক বছরের কাজের অভিজ্ঞতা ছাড়া সচিব পদোন্নতি দেওয়া হবে না।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এর মাধ্যমে সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিবদের নূন্যতম অভিজ্ঞতা নিয়ে সচিব হতে হবে।

‘ভূতাপেক্ষ’তার ভিত্তিতে পদোন্নতি পাওয়া এসব কর্মকর্তার মধ্যে অনেকে বিদ্যমান বিধিমালা অনুযায়ী সচিব হওয়ার যোগ্যতাও অর্জন করেছেন। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী অতিরিক্ত সচিব থেকে সচিব পদোন্নতি পেতে দুই বছরের অভিজ্ঞতার দরকার হয়। সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্তদের মধ্যে কিছু কর্মকর্তা আছেন, তাদের সেই শর্তও পূরণ হয়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত সচিব হিসেবে কোনো কাজের অভিজ্ঞতা তাদের নেই।

এই কারণেই সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্তদের মধ্য থেকে সচিব পদোন্নতি দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা ও যোগ্যতা যাচাই করতে এক বছরের ‘ওয়ার্কিং এক্সপেরিয়েন্স’ দেখতে চাচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, ‘বৈষম্যের শিকার’ বেসামরিক কর্মচারীদের কাছ থেকে পদোন্নতির জন্য প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অন্যদিকে শীর্ষ পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মকর্তা বাছাই করা না গেলে সরকারকেই সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।

অন্তবর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টা এই বিষয়ে বলেন, সম্প্রতি সময়ে গণহারে যেসব পদোন্নতি হয়েছে, তার প্রতিফলন সচিব পদের পদোন্নতিতে দেখতে চায় না সরকার। কারণ, সচিবরা মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রশাসনিক প্রধান। তাদের ওপর সেই মন্ত্রণালয়ের সাফল্য-ব্যর্থতা নির্ভর করে। আর সচিবদের সামগ্রিক কাজের ফলের ওপর নির্ভর করে সরকারের ভাবমূর্তি। তাই সরকার এই বিষয়টিতে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জনপ্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে কিছু যোগ্য কর্মকর্তা পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ওইসব কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিতে গিয়ে অনেক অযোগ্য, শাস্তিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও পদোন্নতি পেয়েছেন। যারা সরকারের জন্য এখন অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এদের অনেকেই আবার সচিব পদে পদোন্নতির জন্য তদবির শুরু করেছেন।

মাত্র এক সপ্তাহে সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব হয়েছেন, এমন নজিরও রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে প্রশাসনের ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা বাবুল মিয়ার ঘটনাটি উল্লেখ করা যায়। তাকে ১৩ আগস্ট উপসচিব, ১৫ আগস্ট যুগ্ম সচিব ও ১৮ আগস্ট অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এই কর্মকর্তা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানের ক্রেস্টে স্বর্ণ জালিয়াতির ঘটনায় শাস্তি পেয়েছিলেন।

সরকারের সাবেক সচিব একেএম আব্দুল আউয়াল মজুমদার এই বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়েছে। তাদের মধ্যে কিছু কর্মকর্তা সত্যিই পদোন্নতির যোগ্য ছিলেন, কারণ তারা দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত। তবে, অনেকে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছেন। এটা সত্য।’

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি সচিব বা কোনো বিভাগের প্রধানের মতো উচ্চ পদে পদোন্নতির জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের অভিজ্ঞতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই সচিব হওয়ার আগে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে অন্তত এক বছর কর্মকালীন অভিজ্ঞতার যে সিদ্ধান্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নিয়েছে তা ইতিবাচক।’