ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এই সুযোগ হাতছাড়া হলে বাংলাদেশ আর রাষ্ট্র থাকবে না

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৫:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • 18

বৈষম্যমুক্ত কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন নিয়ে ছাত্র-জনতা প্রাণ দিয়েছে তা বাস্তবায়নের প্রতিজ্ঞা পুনর্ব্যক্ত করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আবার নতুন করে প্রতিজ্ঞা করতে হয়, যে স্বপ্নের জন্য তারা প্রাণ দিয়েছে সে স্বপ্নকে আমরা বাস্তবায়ন করবোই।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পাওয়া রাষ্ট্র সংস্কারের সুযোগ প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, এই সুযোগ হাতছাড়া হলে বাংলাদেশের আর কোনো ভবিষ্যৎ থাকবে না। এটা আর কোনো রাষ্ট্র থাকবে না। কাজেই এটা যেন শুধু রাষ্ট্র না, পৃথিবীর সম্মানিত রাষ্ট্র হিসেবে পরিণত হয়।

রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

ছাত্র-জনতাকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এতদিন চুপচাপ শুয়ে-বসে স্বপ্নের মধ্যে এরা ছিল। আর শান্তিতে আনন্দ সহকারে লুটপাট করে যাচ্ছিল। হঠাৎ করে তোমরা বের হলে। তারা কি চুপচাপ বসে থাকবে? খুব চেষ্টা করবে আবার তোমাদের দুঃস্বপ্নের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য। যেন তারা শান্তিতে আবার তাদের রাজত্ব চালাতে পারে। তারা চেষ্টার ত্রুটি করবে না।

ড. ইউনূস বলেন, কাজেই যে কাজ শুরু করেছো, এই কাজ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এর থেকে বেরিয়ে যেও না। তাহলে সব নষ্ট হয়ে যাবে।

বাংলাদেশের জন্ম থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের এমন সুযোগ আর আসেনি মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত এই সুযোগ আর আসে নাই। এই সুযোগ তোমরা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছো। এই সুযোগ যেন হাতছাড়া না হয়।

বাংলাদেশকে বিশ্বে অনন্য রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, যেহেতু তরুণরা এটার (বাংলাদেশের) হাল ধরেছে, এ কারণেই এটা অনন্য। অনন্য একটা দেশ আমরা তৈরি করতে চাই। দুনিয়ার মানুষ এটা এসে দেখে যাবে। তোমাদের কাছে শিখতে আসবে, তোমাদের নিয়ে যাবে। বলবে, কী মন্ত্র দিয়ে তোমরা এটা করেছো।

বৈষম্য-অবিচার-লুটপাটের বিরুদ্ধে তরুণদের সংস্কারের চেতনা ধরে রাখার আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, এই মন্ত্র হয়তো তোমরাও টের পাচ্ছো না। মন্ত্রটা কীভাবে এলো। এটা একটা বিরাট মন্ত্রের মতো কাজ করেছে। এই মন্ত্রকে ধরে রাখবে। এই মন্ত্র যদি শিথিল হয়ে যায়, আমাদের কাজ শেষ করতে পারবো না। সেই দুঃখ যেন আমাদের দেখতে না হয়।

অন্তর্বর্তী সরকার ছাত্র-জনতার স্বপ্ন থেকে দূরে সরে গেলে স্মরণ করিয়ে দেওয়া আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তোমরা নিজ নিজ চিন্তায় অনড় থাকো, যে যতই পরামর্শ দিক এটা থেকে বেরিয়ে আসার। এই পরামর্শ তোমরা গ্রহণ করো না। তোমাদের চিন্তা স্বচ্ছ, তোমাদের চিন্তা সঠিক।

ড. ইউনূস বলেন, আমাদের স্মরণ করিয়ে দেবে যদি আমরা এই স্বপ্ন থেকে দূরে সরার কোনো কাজ করি। আমাদের কারও কোনো ইচ্ছে নাই এই স্বপ্নের বাইরে যাওয়ার। স্বপ্ন বাস্তবায়ন করাই হবে সার্বক্ষণিক কাজ। তবে কোনো কারণে যদি আমরা সীমা অতিক্রম করি কোথাও, আমাদের সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দিও।

বক্তব্যের শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ ছাত্র-জনতার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আমরা আজকে এখানে বসে যারা কথা বলছি তাদের একমাত্র দায়িত্ব, তাদের (শহীদদের) ঋণ শোধ করা। জীবনের বিনিময়ে তারা আজকে এখানে বসার সুযোগ দিয়েছে। তারা জীবন দিয়ে না গেলে আমরা আজকে এখানে বসতে পারতাম না। আমরা যারা সরকারে এসেছি, তোমরা যারা শিক্ষার্থী কথা শুনতে এসেছো, কেউ এখানে আসতে পারতাম না।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের কষ্টের কথা তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, যখন হাসপাতালে যাই তাদের দেখার জন্য, তাকাতে কষ্ট হয়। এই যে হাসপাতালে ছেলেগুলোর সঙ্গে সাক্ষাতে গিয়ে যে দৃশ্য দেখলাম, সেটাতো সবাই দেখছে না। যারা হাসপাতালে আসছেন তারা দেখছেন। মানুষকে জানাতে হবে, বোঝাতে হবে এর পেছনে কী ছিল।

ট্যাগস

এই সুযোগ হাতছাড়া হলে বাংলাদেশ আর রাষ্ট্র থাকবে না

আপডেট সময় ০৫:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বৈষম্যমুক্ত কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন নিয়ে ছাত্র-জনতা প্রাণ দিয়েছে তা বাস্তবায়নের প্রতিজ্ঞা পুনর্ব্যক্ত করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আবার নতুন করে প্রতিজ্ঞা করতে হয়, যে স্বপ্নের জন্য তারা প্রাণ দিয়েছে সে স্বপ্নকে আমরা বাস্তবায়ন করবোই।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পাওয়া রাষ্ট্র সংস্কারের সুযোগ প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, এই সুযোগ হাতছাড়া হলে বাংলাদেশের আর কোনো ভবিষ্যৎ থাকবে না। এটা আর কোনো রাষ্ট্র থাকবে না। কাজেই এটা যেন শুধু রাষ্ট্র না, পৃথিবীর সম্মানিত রাষ্ট্র হিসেবে পরিণত হয়।

রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

ছাত্র-জনতাকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এতদিন চুপচাপ শুয়ে-বসে স্বপ্নের মধ্যে এরা ছিল। আর শান্তিতে আনন্দ সহকারে লুটপাট করে যাচ্ছিল। হঠাৎ করে তোমরা বের হলে। তারা কি চুপচাপ বসে থাকবে? খুব চেষ্টা করবে আবার তোমাদের দুঃস্বপ্নের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য। যেন তারা শান্তিতে আবার তাদের রাজত্ব চালাতে পারে। তারা চেষ্টার ত্রুটি করবে না।

ড. ইউনূস বলেন, কাজেই যে কাজ শুরু করেছো, এই কাজ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এর থেকে বেরিয়ে যেও না। তাহলে সব নষ্ট হয়ে যাবে।

বাংলাদেশের জন্ম থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের এমন সুযোগ আর আসেনি মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত এই সুযোগ আর আসে নাই। এই সুযোগ তোমরা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছো। এই সুযোগ যেন হাতছাড়া না হয়।

বাংলাদেশকে বিশ্বে অনন্য রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, যেহেতু তরুণরা এটার (বাংলাদেশের) হাল ধরেছে, এ কারণেই এটা অনন্য। অনন্য একটা দেশ আমরা তৈরি করতে চাই। দুনিয়ার মানুষ এটা এসে দেখে যাবে। তোমাদের কাছে শিখতে আসবে, তোমাদের নিয়ে যাবে। বলবে, কী মন্ত্র দিয়ে তোমরা এটা করেছো।

বৈষম্য-অবিচার-লুটপাটের বিরুদ্ধে তরুণদের সংস্কারের চেতনা ধরে রাখার আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, এই মন্ত্র হয়তো তোমরাও টের পাচ্ছো না। মন্ত্রটা কীভাবে এলো। এটা একটা বিরাট মন্ত্রের মতো কাজ করেছে। এই মন্ত্রকে ধরে রাখবে। এই মন্ত্র যদি শিথিল হয়ে যায়, আমাদের কাজ শেষ করতে পারবো না। সেই দুঃখ যেন আমাদের দেখতে না হয়।

অন্তর্বর্তী সরকার ছাত্র-জনতার স্বপ্ন থেকে দূরে সরে গেলে স্মরণ করিয়ে দেওয়া আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তোমরা নিজ নিজ চিন্তায় অনড় থাকো, যে যতই পরামর্শ দিক এটা থেকে বেরিয়ে আসার। এই পরামর্শ তোমরা গ্রহণ করো না। তোমাদের চিন্তা স্বচ্ছ, তোমাদের চিন্তা সঠিক।

ড. ইউনূস বলেন, আমাদের স্মরণ করিয়ে দেবে যদি আমরা এই স্বপ্ন থেকে দূরে সরার কোনো কাজ করি। আমাদের কারও কোনো ইচ্ছে নাই এই স্বপ্নের বাইরে যাওয়ার। স্বপ্ন বাস্তবায়ন করাই হবে সার্বক্ষণিক কাজ। তবে কোনো কারণে যদি আমরা সীমা অতিক্রম করি কোথাও, আমাদের সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দিও।

বক্তব্যের শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ ছাত্র-জনতার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আমরা আজকে এখানে বসে যারা কথা বলছি তাদের একমাত্র দায়িত্ব, তাদের (শহীদদের) ঋণ শোধ করা। জীবনের বিনিময়ে তারা আজকে এখানে বসার সুযোগ দিয়েছে। তারা জীবন দিয়ে না গেলে আমরা আজকে এখানে বসতে পারতাম না। আমরা যারা সরকারে এসেছি, তোমরা যারা শিক্ষার্থী কথা শুনতে এসেছো, কেউ এখানে আসতে পারতাম না।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের কষ্টের কথা তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, যখন হাসপাতালে যাই তাদের দেখার জন্য, তাকাতে কষ্ট হয়। এই যে হাসপাতালে ছেলেগুলোর সঙ্গে সাক্ষাতে গিয়ে যে দৃশ্য দেখলাম, সেটাতো সবাই দেখছে না। যারা হাসপাতালে আসছেন তারা দেখছেন। মানুষকে জানাতে হবে, বোঝাতে হবে এর পেছনে কী ছিল।