ঢাকা , শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুই শেয়ারের দর লাফিয়ে বাড়ার যে কারণ

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ১০:৫৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • 15

ছাত্র–জনতার গণ–অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর গত দেড় মাসে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৬টি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে ইসলামী ব্যাংকের। এ সময়ে আরও চারটি ব্যাংকের শেয়ারের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব ব্যাংকের শেয়ারের দাম সর্বনিম্ন সাড়ে ২৪ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৬৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ব্যাংকের শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির গত তিন মাসের তথ্য পর্যালোচনা করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। এ সময়ে অন্য ব্যাংকগুলোর শেয়ারের দাম এই পাঁচ ব্যাংকের তুলনায় তেমন বাড়েনি। দুর্বল মানের কিছু ব্যাংকের শেয়ারদর এ সময়ে কমেছে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ৬ আগস্ট থেকে গতকাল রোববার পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দাম প্রায় ২২ টাকা বা সাড়ে ৬৬ শতাংশ বেড়েছে। মূল্যবৃদ্ধিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। গত দেড় মাসে এই ব্যাংকের শেয়ারের দাম প্রায় ১৭ টাকা বা ৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারদর প্রায় ৩ টাকা বা ৩৬ শতাংশ, মিডল্যান্ড ব্যাংকের শেয়ারের দাম ৬ টাকা বা ২৯ শতাংশ ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) শেয়ারদর ২ টাকা ৩০ পয়সা বা সাড়ে ২৪ শতাংশ বেড়েছে।

বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ইসলামী ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের বেশি আগ্রহ দেখা যায়। এর বড় কারণ ইসলামী ব্যাংককে এরই মধ্যে এস আলমমুক্ত করা। ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের ধারণা, ব্যাংকটি এস আলমের দখলে যাওয়ার পর পুরোনো দেশি–বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের যাঁরা চলে গিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকে আবার মালিকানায় ফিরতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বাজার থেকে নতুন করে তাঁরা শেয়ার কিনবেন। এই আশা থেকেই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অনেকে ব্যাংকটির শেয়ারের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের মূল কারণ হিসেবে এটির ভালো মৌলভিত্তির কথা বলা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে অনেক দুর্বল ব্যাংক সমস্যায় পড়ায় আমানতকারীদের অনেকেই ভালো ব্যাংকগুলোর প্রতি ঝুঁকছেন। তাতে এসব ব্যাংকের আমানত উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। এ ছাড়া ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারের দাম কয়েক বছর ধরে অবমূল্যায়িত ছিল বলেও মনে করেন বাজার–সংশ্লিষ্টরা। ফলে এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্যাংকটির শেয়ারের প্রতি দেশি–বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

জানতে চাইলে বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ডিন মোহাম্মদ মুসা বলেন, মালিকানা বদলের ফলে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা যেমন দুর্বল হয়ে গিয়েছিল, তেমনি অনিয়মের ঘটনাও ঘটেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের ধারণা, ব্যাংকটি পরিচালনায় গুণগত পরিবর্তন হবে। এমনকি পুরোনো শেয়ারধারীদের কেউ কেউ আবার মালিকানায় ফিরতে পারে। আবার ব্র্যাক ব্যাংক ভালো ও স্বচ্ছ ব্যাংক হিসেবে পরিচিত।

মোহাম্মদ মুসা আরও বলেন, ‘গত প্রায় এক দশকে কিছু ব্যাংকে অনিয়মের কারণে সার্বিকভাবে শেয়ারবাজারে ব্যাংক খাতের শেয়ারের দাম অবমূল্যায়িত ছিল। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এসব শেয়ারের দাম বাড়ছে, এটাকে আমি স্বাভাবিক প্রবণতা বলেই মনে করি।’

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে বর্তমানে যত খাতের কোম্পানি রয়েছে, তার মধ্যে ব্যাংক খাতের মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) সবচেয়ে কম। গত সপ্তাহের শেষে এ খাতের পিই রেশিও বা অনুপাত ছিল ৬ দশমিক ২২। শেয়ারবাজার বিশ্লেষকেরা বলেন, যে খাতের পিই রেশিও যত কম, সেই খাতের শেয়ারে বিনিয়োগ তত বেশি ঝুঁকিমুক্ত।

ট্যাগস

দুই শেয়ারের দর লাফিয়ে বাড়ার যে কারণ

আপডেট সময় ১০:৫৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ছাত্র–জনতার গণ–অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর গত দেড় মাসে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৬টি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে ইসলামী ব্যাংকের। এ সময়ে আরও চারটি ব্যাংকের শেয়ারের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব ব্যাংকের শেয়ারের দাম সর্বনিম্ন সাড়ে ২৪ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৬৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ব্যাংকের শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির গত তিন মাসের তথ্য পর্যালোচনা করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। এ সময়ে অন্য ব্যাংকগুলোর শেয়ারের দাম এই পাঁচ ব্যাংকের তুলনায় তেমন বাড়েনি। দুর্বল মানের কিছু ব্যাংকের শেয়ারদর এ সময়ে কমেছে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ৬ আগস্ট থেকে গতকাল রোববার পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দাম প্রায় ২২ টাকা বা সাড়ে ৬৬ শতাংশ বেড়েছে। মূল্যবৃদ্ধিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। গত দেড় মাসে এই ব্যাংকের শেয়ারের দাম প্রায় ১৭ টাকা বা ৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারদর প্রায় ৩ টাকা বা ৩৬ শতাংশ, মিডল্যান্ড ব্যাংকের শেয়ারের দাম ৬ টাকা বা ২৯ শতাংশ ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) শেয়ারদর ২ টাকা ৩০ পয়সা বা সাড়ে ২৪ শতাংশ বেড়েছে।

বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ইসলামী ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের বেশি আগ্রহ দেখা যায়। এর বড় কারণ ইসলামী ব্যাংককে এরই মধ্যে এস আলমমুক্ত করা। ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের ধারণা, ব্যাংকটি এস আলমের দখলে যাওয়ার পর পুরোনো দেশি–বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের যাঁরা চলে গিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকে আবার মালিকানায় ফিরতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বাজার থেকে নতুন করে তাঁরা শেয়ার কিনবেন। এই আশা থেকেই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অনেকে ব্যাংকটির শেয়ারের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের মূল কারণ হিসেবে এটির ভালো মৌলভিত্তির কথা বলা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে অনেক দুর্বল ব্যাংক সমস্যায় পড়ায় আমানতকারীদের অনেকেই ভালো ব্যাংকগুলোর প্রতি ঝুঁকছেন। তাতে এসব ব্যাংকের আমানত উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। এ ছাড়া ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারের দাম কয়েক বছর ধরে অবমূল্যায়িত ছিল বলেও মনে করেন বাজার–সংশ্লিষ্টরা। ফলে এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্যাংকটির শেয়ারের প্রতি দেশি–বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

জানতে চাইলে বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ডিন মোহাম্মদ মুসা বলেন, মালিকানা বদলের ফলে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা যেমন দুর্বল হয়ে গিয়েছিল, তেমনি অনিয়মের ঘটনাও ঘটেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের ধারণা, ব্যাংকটি পরিচালনায় গুণগত পরিবর্তন হবে। এমনকি পুরোনো শেয়ারধারীদের কেউ কেউ আবার মালিকানায় ফিরতে পারে। আবার ব্র্যাক ব্যাংক ভালো ও স্বচ্ছ ব্যাংক হিসেবে পরিচিত।

মোহাম্মদ মুসা আরও বলেন, ‘গত প্রায় এক দশকে কিছু ব্যাংকে অনিয়মের কারণে সার্বিকভাবে শেয়ারবাজারে ব্যাংক খাতের শেয়ারের দাম অবমূল্যায়িত ছিল। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এসব শেয়ারের দাম বাড়ছে, এটাকে আমি স্বাভাবিক প্রবণতা বলেই মনে করি।’

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে বর্তমানে যত খাতের কোম্পানি রয়েছে, তার মধ্যে ব্যাংক খাতের মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) সবচেয়ে কম। গত সপ্তাহের শেষে এ খাতের পিই রেশিও বা অনুপাত ছিল ৬ দশমিক ২২। শেয়ারবাজার বিশ্লেষকেরা বলেন, যে খাতের পিই রেশিও যত কম, সেই খাতের শেয়ারে বিনিয়োগ তত বেশি ঝুঁকিমুক্ত।