ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লিজের অকৃষি ভূমির নামজারি-খাজনা নেওয়ার দাবি

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৬:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪
  • 1

দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত অকৃষি খাসমহল ভূমির হস্তান্তর প্রক্রিয়া দ্রুততর ও সহজ করতে ২০০৫ ও ২০১১ সালের পরিপত্র বাতিলের দাবি তুলেছে রাজধানীর পুরানা পল্টন ও সেগুনবাগিচা খাসমহল ভূমির ভুক্তভোগী মালিক কমিটি। পাশাপাশি ১৯৮৫ সালের প্রজ্ঞাপন বহালের মাধ্যমে নামজারি ও খাজনা নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৯২৪ সালে পল্টন ও সেগুনবাগিচাসহ ঢাকার আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বসতি গড়ে তোলার জন্য অকৃষি পতিত জমি দীর্ঘমেয়াদি লিজ বরাদ্দ দেয় তৎকালীন সরকার। তারপর ১৯৫৪ সালে ভূমি মালিকরা প্রথমবার তা নবায়ন করেন। পরে ১৯৮৫ সালে একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানানো হয়, আগের খাসমহলের চিরন্তন নবায়নযোগ্য দীর্ঘমেয়াদি লিজের অকৃষি খাসজমি স্থায়ী বন্দোবস্ত বলে বিবেচিত হবে এবং ভবিষ্যতে তা আর নবায়নের প্রয়োজন হবে না।

খাসমহল ভূমির ভুক্তভোগী মালিক কমিটি নেতৃদ্বয় বলেন, ১৯৮৫ সালের ওই প্রজ্ঞাপনের অজ্ঞাতসারে যারা লিজ নবায়নের জন্য আবেদন করেছিলেন, তা আর নবায়নের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের লিখিতভাবে জানানো হয়। পরে ২০ বছর পর ভূমি মালিক ও সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলো অজ্ঞাতসারে ১৯৮৫ সালের প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করে ২০০৫ সালে আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। অথচ এ ২০ বছরে প্রায় প্রতিটি ভূমি মালিকানা পরিবর্তনসহ বিভিন্নভাবে বিবর্তন করা হয়।

তারপর সিটি জরিপের সময় এসএ ও আরএস নামজারি পর্চামূলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নামে রেকর্ড করা হয়। ফলে রেকর্ডমূলে ভূমি বা ফ্ল্যাট মালিকরাও নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করে নির্মিত ফ্ল্যাট বা অফিসগুলো সাফ-কবলা দলিলের মাধ্যমে যথারীতি বেচা-কেনাসহ যাবতীয় হস্তান্তর প্রক্রিয়া করেছেন। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে ওজর আপত্তি ছাড়াই রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়ে আসছে। এসব ভূমিতে আবাসিক বা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) থেকে নকশা অনুমোদনের সময়েও কোনরূপ আপত্তি করা হয়নি। এরপর ২০১১ সালে দুটি সম্পূরক পরিপত্রের মাধ্যমে সরকার ওই জমির খাজনা গ্রহণ এবং সব ধরনের হস্তান্তর প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে লিজ সূত্রে ভূমি মালিকদের নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হওয়ায় আমরা চরম ভোগান্তিতে পড়ি।

১৯৮৫ সালের পরিপত্র বাতিল করায় ভূমি/ফ্ল্যাট/অফিস স্পেস বিক্রি না হওয়ায় অনেক ভূমিতে ডেভেলপারের মাধ্যমে ভবন নির্মিত হয়, কিন্তু দলিল রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় ফ্ল্যাট ক্রেতারা অর্থ পরিশোধ করছেন না। ব্যাংক বা অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহায়ন ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে প্রজেক্টের কাজও শেষ হচ্ছে না। এতে ভূমির মালিক বাড়ি ছাড়া হয়ে ভাড়া আয় হতে বঞ্চিত। ফ্ল্যাট মালিকরা তাদের জীবনের সঞ্চয়টুকু বিনিয়োগ করেও ফ্ল্যাট বুঝে পাচ্ছেন না। আবার কেউ কেউ ফ্ল্যাট বুঝে পেলেও রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় নামজারি-খাজনা করাতে পারছেন না।

ভূমি মালিকরা বলেন, ২০০৫ ও ২০১১ সালে জারি করা পরিপত্রের মাধ্যমে তৎকালীন সরকার দেশের বিপুল-সংখ্যক নাগরিককে পারিবারিক, সামাজিক, আর্থিক ও বিভিন্ন আইনি জটিলতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। মতিঝিল, পল্টন, সেগুনবাগিচা, রমনা, কাকরাইল, ওয়ারী, গেণ্ডারিয়াসহ ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকায় সরকারের দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত খাসমহল ভূমির মালিকরা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। বর্তমানে নিজের ভিটি-ভূমিতেই উদ্বাস্তু অবস্থায় আছেন।

তাই ২০০৫ সালের ও ২০১১ সালের সংশ্লিষ্ট সব পরিপত্র বাতিল করে ১৯৮৫ সালের প্রজ্ঞাপনটি বহাল রেখে লিজের ভূমির নামজারি ও খাজনা পরিশোধের ব্যবস্থা নিতে নির্বাহী আদেশ দেওয়া হোক সরকারের প্রতি বিনীত অনুরোধ রইলো।

ট্যাগস

লিজের অকৃষি ভূমির নামজারি-খাজনা নেওয়ার দাবি

আপডেট সময় ০৬:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত অকৃষি খাসমহল ভূমির হস্তান্তর প্রক্রিয়া দ্রুততর ও সহজ করতে ২০০৫ ও ২০১১ সালের পরিপত্র বাতিলের দাবি তুলেছে রাজধানীর পুরানা পল্টন ও সেগুনবাগিচা খাসমহল ভূমির ভুক্তভোগী মালিক কমিটি। পাশাপাশি ১৯৮৫ সালের প্রজ্ঞাপন বহালের মাধ্যমে নামজারি ও খাজনা নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৯২৪ সালে পল্টন ও সেগুনবাগিচাসহ ঢাকার আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বসতি গড়ে তোলার জন্য অকৃষি পতিত জমি দীর্ঘমেয়াদি লিজ বরাদ্দ দেয় তৎকালীন সরকার। তারপর ১৯৫৪ সালে ভূমি মালিকরা প্রথমবার তা নবায়ন করেন। পরে ১৯৮৫ সালে একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানানো হয়, আগের খাসমহলের চিরন্তন নবায়নযোগ্য দীর্ঘমেয়াদি লিজের অকৃষি খাসজমি স্থায়ী বন্দোবস্ত বলে বিবেচিত হবে এবং ভবিষ্যতে তা আর নবায়নের প্রয়োজন হবে না।

খাসমহল ভূমির ভুক্তভোগী মালিক কমিটি নেতৃদ্বয় বলেন, ১৯৮৫ সালের ওই প্রজ্ঞাপনের অজ্ঞাতসারে যারা লিজ নবায়নের জন্য আবেদন করেছিলেন, তা আর নবায়নের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের লিখিতভাবে জানানো হয়। পরে ২০ বছর পর ভূমি মালিক ও সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলো অজ্ঞাতসারে ১৯৮৫ সালের প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করে ২০০৫ সালে আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। অথচ এ ২০ বছরে প্রায় প্রতিটি ভূমি মালিকানা পরিবর্তনসহ বিভিন্নভাবে বিবর্তন করা হয়।

তারপর সিটি জরিপের সময় এসএ ও আরএস নামজারি পর্চামূলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নামে রেকর্ড করা হয়। ফলে রেকর্ডমূলে ভূমি বা ফ্ল্যাট মালিকরাও নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করে নির্মিত ফ্ল্যাট বা অফিসগুলো সাফ-কবলা দলিলের মাধ্যমে যথারীতি বেচা-কেনাসহ যাবতীয় হস্তান্তর প্রক্রিয়া করেছেন। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে ওজর আপত্তি ছাড়াই রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়ে আসছে। এসব ভূমিতে আবাসিক বা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) থেকে নকশা অনুমোদনের সময়েও কোনরূপ আপত্তি করা হয়নি। এরপর ২০১১ সালে দুটি সম্পূরক পরিপত্রের মাধ্যমে সরকার ওই জমির খাজনা গ্রহণ এবং সব ধরনের হস্তান্তর প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে লিজ সূত্রে ভূমি মালিকদের নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হওয়ায় আমরা চরম ভোগান্তিতে পড়ি।

১৯৮৫ সালের পরিপত্র বাতিল করায় ভূমি/ফ্ল্যাট/অফিস স্পেস বিক্রি না হওয়ায় অনেক ভূমিতে ডেভেলপারের মাধ্যমে ভবন নির্মিত হয়, কিন্তু দলিল রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় ফ্ল্যাট ক্রেতারা অর্থ পরিশোধ করছেন না। ব্যাংক বা অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহায়ন ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে প্রজেক্টের কাজও শেষ হচ্ছে না। এতে ভূমির মালিক বাড়ি ছাড়া হয়ে ভাড়া আয় হতে বঞ্চিত। ফ্ল্যাট মালিকরা তাদের জীবনের সঞ্চয়টুকু বিনিয়োগ করেও ফ্ল্যাট বুঝে পাচ্ছেন না। আবার কেউ কেউ ফ্ল্যাট বুঝে পেলেও রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় নামজারি-খাজনা করাতে পারছেন না।

ভূমি মালিকরা বলেন, ২০০৫ ও ২০১১ সালে জারি করা পরিপত্রের মাধ্যমে তৎকালীন সরকার দেশের বিপুল-সংখ্যক নাগরিককে পারিবারিক, সামাজিক, আর্থিক ও বিভিন্ন আইনি জটিলতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। মতিঝিল, পল্টন, সেগুনবাগিচা, রমনা, কাকরাইল, ওয়ারী, গেণ্ডারিয়াসহ ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকায় সরকারের দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত খাসমহল ভূমির মালিকরা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। বর্তমানে নিজের ভিটি-ভূমিতেই উদ্বাস্তু অবস্থায় আছেন।

তাই ২০০৫ সালের ও ২০১১ সালের সংশ্লিষ্ট সব পরিপত্র বাতিল করে ১৯৮৫ সালের প্রজ্ঞাপনটি বহাল রেখে লিজের ভূমির নামজারি ও খাজনা পরিশোধের ব্যবস্থা নিতে নির্বাহী আদেশ দেওয়া হোক সরকারের প্রতি বিনীত অনুরোধ রইলো।