ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২০২২-২৩ অর্থবছরে বৃহৎ শিল্পে ৮ খাতে সর্বোচ্চ মন্দা

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ১২:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ অক্টোবর ২০২৩
  • 265

অর্থনৈতিক সংকটেই কেটেছে ২০২২-২৩ অর্থবছরের পুরোটা। জ্বালানি সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ধস, ক্রমবর্ধমান লোডশেডিং, গ্যাস-বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, ডলার সংকটে এলসি (ঋণপত্র) খুলতে না পারা সব মিলিয়ে উৎপাদন খাত বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ে। প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি করতে না পারাসহ উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিতে এ সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ে দেশের বৃহৎ শিল্প খাত।

যদিও এসব সংকটের মধ্যে কিছু খাতে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে আটটি খাত বড় ধরনের মন্দার সম্মুখীন হয়। এসব খাতে উৎপাদন প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বিভিন্ন শিল্পের প্রান্তিকভিত্তিক উৎপাদন প্রবৃদ্ধি তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ও তৃতীয় (জানুয়ারি-মার্চ) প্রান্তিকের পূর্ণাঙ্গ চিত্র থাকলেও চতুর্থ (এপ্রিল-জুন) প্রান্তিকের শুধু এপ্রিলের তথ্য রয়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিদায়ী অর্থবছর বৃহৎ শিল্পগুলোর মধ্যে খাদ্যপণ্য উৎপাদনে বড় ধরনের ধস নামে। এতে অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সাত মাসই এ শিল্পে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল। এর মধ্যে দ্বিতীয় প্রান্তিকে খাদ্যপণ্য উৎপাদনে ৩২ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়, তৃতীয় প্রান্তিকে ৩৬ শতাংশ ও চতুর্থ প্রান্তিকে ৩১ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়।

২০২২-২৩ অর্থবছর নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে এর পরের অবস্থানে রয়েছে বেসিক মেটাল (মৌলিক ধাতু)। এ খাতে দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৩৫ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়, তৃতীয় প্রান্তিকে ২৪ শতাংশ ও চতুর্থ প্রান্তিকে ২৬ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়। নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ওষুধজাতীয় পণ্য। এ খাতে দ্বিতীয় প্রান্তিকে ১২ শতাংশ, তৃতীয় প্রান্তিকে ২৪ শতাংশ ও চতুর্থ প্রান্তিকে ২৪ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়।

এর পরের অবস্থানে রয়েছে কম্পিউটার ও ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য উৎপাদন। এ খাতে দ্বিতীয় প্রান্তিকে ১০ শতাংশ, তৃতীয় প্রান্তিকে ১২ শতাংশ ও চতুর্থ প্রান্তিকে ১১ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়। আর কাঠ ও কাঠের তৈরি পণ্যের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ১৬ শতাংশ, তৃতীয় প্রান্তিকে ৯ শতাংশ ও চতুর্থ প্রান্তিকে ৬ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়।

এদিকে কাগজ ও কাগজের তৈরি পণ্যে দ্বিতীয় প্রান্তিকে তিন শতাংশ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। তবে তৃতীয় প্রান্তিকে ২৪ শতাংশ ও চতুর্থ প্রান্তিকে ২৪ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়। একই ধরনের চিত্র কেমিক্যাল জাতীয় পণ্যে। এ খাতে দ্বিতীয় প্রান্তিকে তিন শতাংশ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। তবে তৃতীয় প্রান্তিকে ৬ শতাংশ ও চতুর্থ প্রান্তিকে ১৪ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়। আর অন্যান্য শিল্প খাতে দ্বিতীয় প্রান্তিকে ১০ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়। তৃতীয় প্রান্তিকে এসব শিল্প কোনো প্রবৃদ্ধি ছিল না। অর্থাৎ শূন্য প্রবৃদ্ধি হয়। তবে চতুর্থ প্রান্তিকে আবারও এসব শিল্পে ১২ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়।

উল্লিখিত খাতগুলো ছাড়াও আরও কিছু শিল্পে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে এগুলোর নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির মাত্রা তুলনামূলক কম। এর মধ্যে ফেব্রিকেটেড মেটাল পণ্যের উৎপাদনে দ্বিতীয় প্রান্তিকে ১৫ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়। তবে তৃতীয় প্রান্তিকে তা কমে পাঁচ শতাংশ ও শেষ প্রান্তিকে এক শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অন্যদিকে কোক ও পরিশোধিত জ্বালানি তেল উৎপাদনে দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৭৩ শতাংশ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ প্রান্তিকে চার শতাংশ হারে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়। আর ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য উৎপাদনে দ্বিতীয় প্রান্তিকে এক শতাংশ, তৃতীয় প্রান্তিকে ছয় শতাংশ ও চতুর্থ প্রান্তিকে চার শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়।

এসব খাতের বাইরে কিছু খাতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে গত অর্থবছর। এর মধ্যে অন্যতম বেভারেজ, টোব্যাকো, টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, রাবার ও প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য, নন-মেটালিক পণ্য, মুদ্রা ও ছাপাখানা শিল্প, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম, মোটরযান, পরিবহন খাতের যন্ত্রাংশ, আসবাব শিল্প। এ খাতগুলো খুব ভালো করলেও সার্বিকভাবে ২০২২-২৩ অর্থবছর শিল্প খাতে উৎপাদন প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়ায় আট দশমিক ১৮ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছর এ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

ট্যাগস

মার্সেল ফ্রিজ কিনে গাড়ি পেলেন ঢাকার আনিসুর রহমান

২০২২-২৩ অর্থবছরে বৃহৎ শিল্পে ৮ খাতে সর্বোচ্চ মন্দা

আপডেট সময় ১২:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ অক্টোবর ২০২৩

অর্থনৈতিক সংকটেই কেটেছে ২০২২-২৩ অর্থবছরের পুরোটা। জ্বালানি সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ধস, ক্রমবর্ধমান লোডশেডিং, গ্যাস-বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, ডলার সংকটে এলসি (ঋণপত্র) খুলতে না পারা সব মিলিয়ে উৎপাদন খাত বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ে। প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি করতে না পারাসহ উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিতে এ সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ে দেশের বৃহৎ শিল্প খাত।

যদিও এসব সংকটের মধ্যে কিছু খাতে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে আটটি খাত বড় ধরনের মন্দার সম্মুখীন হয়। এসব খাতে উৎপাদন প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বিভিন্ন শিল্পের প্রান্তিকভিত্তিক উৎপাদন প্রবৃদ্ধি তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ও তৃতীয় (জানুয়ারি-মার্চ) প্রান্তিকের পূর্ণাঙ্গ চিত্র থাকলেও চতুর্থ (এপ্রিল-জুন) প্রান্তিকের শুধু এপ্রিলের তথ্য রয়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিদায়ী অর্থবছর বৃহৎ শিল্পগুলোর মধ্যে খাদ্যপণ্য উৎপাদনে বড় ধরনের ধস নামে। এতে অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সাত মাসই এ শিল্পে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল। এর মধ্যে দ্বিতীয় প্রান্তিকে খাদ্যপণ্য উৎপাদনে ৩২ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়, তৃতীয় প্রান্তিকে ৩৬ শতাংশ ও চতুর্থ প্রান্তিকে ৩১ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়।

২০২২-২৩ অর্থবছর নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে এর পরের অবস্থানে রয়েছে বেসিক মেটাল (মৌলিক ধাতু)। এ খাতে দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৩৫ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়, তৃতীয় প্রান্তিকে ২৪ শতাংশ ও চতুর্থ প্রান্তিকে ২৬ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়। নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ওষুধজাতীয় পণ্য। এ খাতে দ্বিতীয় প্রান্তিকে ১২ শতাংশ, তৃতীয় প্রান্তিকে ২৪ শতাংশ ও চতুর্থ প্রান্তিকে ২৪ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়।

এর পরের অবস্থানে রয়েছে কম্পিউটার ও ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য উৎপাদন। এ খাতে দ্বিতীয় প্রান্তিকে ১০ শতাংশ, তৃতীয় প্রান্তিকে ১২ শতাংশ ও চতুর্থ প্রান্তিকে ১১ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়। আর কাঠ ও কাঠের তৈরি পণ্যের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ১৬ শতাংশ, তৃতীয় প্রান্তিকে ৯ শতাংশ ও চতুর্থ প্রান্তিকে ৬ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়।

এদিকে কাগজ ও কাগজের তৈরি পণ্যে দ্বিতীয় প্রান্তিকে তিন শতাংশ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। তবে তৃতীয় প্রান্তিকে ২৪ শতাংশ ও চতুর্থ প্রান্তিকে ২৪ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়। একই ধরনের চিত্র কেমিক্যাল জাতীয় পণ্যে। এ খাতে দ্বিতীয় প্রান্তিকে তিন শতাংশ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। তবে তৃতীয় প্রান্তিকে ৬ শতাংশ ও চতুর্থ প্রান্তিকে ১৪ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়। আর অন্যান্য শিল্প খাতে দ্বিতীয় প্রান্তিকে ১০ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়। তৃতীয় প্রান্তিকে এসব শিল্প কোনো প্রবৃদ্ধি ছিল না। অর্থাৎ শূন্য প্রবৃদ্ধি হয়। তবে চতুর্থ প্রান্তিকে আবারও এসব শিল্পে ১২ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়।

উল্লিখিত খাতগুলো ছাড়াও আরও কিছু শিল্পে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে এগুলোর নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির মাত্রা তুলনামূলক কম। এর মধ্যে ফেব্রিকেটেড মেটাল পণ্যের উৎপাদনে দ্বিতীয় প্রান্তিকে ১৫ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়। তবে তৃতীয় প্রান্তিকে তা কমে পাঁচ শতাংশ ও শেষ প্রান্তিকে এক শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অন্যদিকে কোক ও পরিশোধিত জ্বালানি তেল উৎপাদনে দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৭৩ শতাংশ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ প্রান্তিকে চার শতাংশ হারে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়। আর ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য উৎপাদনে দ্বিতীয় প্রান্তিকে এক শতাংশ, তৃতীয় প্রান্তিকে ছয় শতাংশ ও চতুর্থ প্রান্তিকে চার শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়।

এসব খাতের বাইরে কিছু খাতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে গত অর্থবছর। এর মধ্যে অন্যতম বেভারেজ, টোব্যাকো, টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, রাবার ও প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য, নন-মেটালিক পণ্য, মুদ্রা ও ছাপাখানা শিল্প, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম, মোটরযান, পরিবহন খাতের যন্ত্রাংশ, আসবাব শিল্প। এ খাতগুলো খুব ভালো করলেও সার্বিকভাবে ২০২২-২৩ অর্থবছর শিল্প খাতে উৎপাদন প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়ায় আট দশমিক ১৮ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছর এ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ।