ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইতিবাচক পরিবেশ হতে পারে আত্মবিশ্বাসের উৎস

আত্মবিশ্বাস হচ্ছে মানুষের ব্যক্তিত্বের এমন একটি দিক, যা তাকে সামনে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে। এটি সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহস জোগায় এবং জীবনকে নিজের মতো করে গড়ার শক্তি দেয়। কিন্তু আত্মবিশ্বাস স্বভাবগত না হলেও, এটি চর্চার মাধ্যমে গড়ে তোলা যায়।

অনেকেই নিজেকে দুর্বল ভাবে, নিজের অর্জনকে তুচ্ছ করে দেখে, অথচ একটু চেষ্টা করলেই এই মানসিক বাধা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হলে শুরু করতে হয় ছোট ছোট কাজ দিয়ে। অনেকেই শুরুতেই বড় কিছু করতে চায়, কিন্তু প্রথমেই ব্যর্থ হলে মন ভেঙে যায়। তাই প্রতিদিনের জীবনে সহজ কিছু লক্ষ্য নির্ধারণ করে তা পূরণের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস গড়া সম্ভব।

যেমন, ঠিক সময়ে ঘুম থেকে ওঠা, নির্ধারিত কাজ সময়মতো শেষ করা, কিংবা প্রতিদিন নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করা। এই ছোট ছোট অর্জনগুলো একত্রে হয়ে গড়ে তোলে আত্মবিশ্বাসের ভিত। জেনে নিন কোন বিষয়গুলো আপনার আত্মবিশ্বাস তৈরিতে সাহায্য করবে-

১. নিজেকে বোঝার একটি উপায় হলো নিজের সাফল্যগুলো লিপিবদ্ধ রাখা। আমরা প্রায়ই নিজের ভুল ও ব্যর্থতা নিয়ে বেশি ভাবি, অথচ জীবনে ঘটে যাওয়া ইতিবাচক ঘটনাগুলো মনেই রাখি না। তাই একটা নোটবুকে বা ফোনে নিজের অর্জন, প্রশংসা পাওয়ার মুহূর্ত কিংবা যেসব চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবেলা করা গেছে, সেগুলো লিখে রাখা উচিত। মন খারাপের সময় এগুলো মনে করলেই দেখা যাবে, নিজের প্রতি বিশ্বাস অনেকটাই ফিরে এসেছে।

২. শরীরী ভাষাও আত্মবিশ্বাস প্রকাশে বড় ভূমিকা রাখে। সোজা হয়ে বসা, চোখে চোখ রেখে কথা বলা কিংবা দৃঢ় ভঙ্গিমায় হাঁটাচলা এগুলো বাহ্যিক হলেও মনে গভীর প্রভাব ফেলে। যদি আপনি নিজের ভেতরে সাহস নাও অনুভব করেন, তবুও বাহ্যিকভাবে আত্মবিশ্বাসী আচরণ করলে ধীরে ধীরে মনও সেটির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে। এটি এক ধরনের মানসিক অনুশীলন।

৩. আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নিজের ভেতরের সমালোচনামূলক কণ্ঠকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। প্রায়ই আমরা নিজেকে বলি, ‘আমি পারবো না’ কিংবা ‘সবাই আমাকে নিয়ে হাসবে’। এসব নেতিবাচক ভাবনা আত্মবিশ্বাস ধ্বংস করে দেয়। তাই এমন কথা নিজের মনে আনাই উচিত নয়। বরং নিজের চেষ্টা ও অগ্রগতিকে স্বীকৃতি দিয়ে ভাবতে হবে আমি চেষ্টা করছি, আর সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।

৪. জীবনে ব্যর্থতা আসবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ব্যর্থতাকে ভয় পেলে আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে না। বরং ব্যর্থতাকে গ্রহণ করতে শিখতে হবে, বুঝতে হবে, ভুল হওয়াটা শেখার একটি অংশ। যারা ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যায়, তারাই সবচেয়ে দৃঢ় মনোবল নিয়ে সামনে যেতে পারে।

৫. আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর ক্ষেত্রে আশেপাশের মানুষের প্রভাবও গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি এমন মানুষের সান্নিধ্যে থাকেন, যারা সব সময় নেতিবাচক মন্তব্য করে, তাহলে আপনার মনোভাবও নেতিবাচক হয়ে যাবে। তাই এমন বন্ধু বা সহচর বেছে নিতে হবে, যারা আপনাকে উৎসাহ দেয়, আপনার উন্নতিকে স্বাগত জানায়। ইতিবাচক পরিবেশে থেকে আত্মবিশ্বাস বাড়ে অনেক দ্রুত।

৬. সবশেষে, আত্মবিশ্বাসের জন্য নিজের যত্ন নেওয়াটা অত্যন্ত জরুরি। শরীর ও মনের সুস্থতা পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। যথেষ্ট ঘুম, পরিমিত খাবার, শারীরিক অনুশীলন ও মানসিক প্রশান্তি সব মিলিয়ে একজন মানুষ নিজের ভেতর শক্তি খুঁজে পায়। আর সেই শক্তিই আত্মবিশ্বাসের ভিত্তি।

আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সময় লাগে, তবে এটি অসম্ভব নয়। আত্মবিশ্বাসী হতে হলে প্রথমেই নিজেকে ভালোবাসতে শিখতে হবে। নিজের উন্নতির জন্য প্রতিদিন একটু করে চেষ্টা করলেই দেখা যাবে, একসময় আপনি নিজেই নিজের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন।

ট্যাগস

ইতিবাচক পরিবেশ হতে পারে আত্মবিশ্বাসের উৎস

আপডেট সময় ৫ ঘন্টা আগে

আত্মবিশ্বাস হচ্ছে মানুষের ব্যক্তিত্বের এমন একটি দিক, যা তাকে সামনে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে। এটি সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহস জোগায় এবং জীবনকে নিজের মতো করে গড়ার শক্তি দেয়। কিন্তু আত্মবিশ্বাস স্বভাবগত না হলেও, এটি চর্চার মাধ্যমে গড়ে তোলা যায়।

অনেকেই নিজেকে দুর্বল ভাবে, নিজের অর্জনকে তুচ্ছ করে দেখে, অথচ একটু চেষ্টা করলেই এই মানসিক বাধা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হলে শুরু করতে হয় ছোট ছোট কাজ দিয়ে। অনেকেই শুরুতেই বড় কিছু করতে চায়, কিন্তু প্রথমেই ব্যর্থ হলে মন ভেঙে যায়। তাই প্রতিদিনের জীবনে সহজ কিছু লক্ষ্য নির্ধারণ করে তা পূরণের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস গড়া সম্ভব।

যেমন, ঠিক সময়ে ঘুম থেকে ওঠা, নির্ধারিত কাজ সময়মতো শেষ করা, কিংবা প্রতিদিন নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করা। এই ছোট ছোট অর্জনগুলো একত্রে হয়ে গড়ে তোলে আত্মবিশ্বাসের ভিত। জেনে নিন কোন বিষয়গুলো আপনার আত্মবিশ্বাস তৈরিতে সাহায্য করবে-

১. নিজেকে বোঝার একটি উপায় হলো নিজের সাফল্যগুলো লিপিবদ্ধ রাখা। আমরা প্রায়ই নিজের ভুল ও ব্যর্থতা নিয়ে বেশি ভাবি, অথচ জীবনে ঘটে যাওয়া ইতিবাচক ঘটনাগুলো মনেই রাখি না। তাই একটা নোটবুকে বা ফোনে নিজের অর্জন, প্রশংসা পাওয়ার মুহূর্ত কিংবা যেসব চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবেলা করা গেছে, সেগুলো লিখে রাখা উচিত। মন খারাপের সময় এগুলো মনে করলেই দেখা যাবে, নিজের প্রতি বিশ্বাস অনেকটাই ফিরে এসেছে।

২. শরীরী ভাষাও আত্মবিশ্বাস প্রকাশে বড় ভূমিকা রাখে। সোজা হয়ে বসা, চোখে চোখ রেখে কথা বলা কিংবা দৃঢ় ভঙ্গিমায় হাঁটাচলা এগুলো বাহ্যিক হলেও মনে গভীর প্রভাব ফেলে। যদি আপনি নিজের ভেতরে সাহস নাও অনুভব করেন, তবুও বাহ্যিকভাবে আত্মবিশ্বাসী আচরণ করলে ধীরে ধীরে মনও সেটির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে। এটি এক ধরনের মানসিক অনুশীলন।

৩. আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নিজের ভেতরের সমালোচনামূলক কণ্ঠকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। প্রায়ই আমরা নিজেকে বলি, ‘আমি পারবো না’ কিংবা ‘সবাই আমাকে নিয়ে হাসবে’। এসব নেতিবাচক ভাবনা আত্মবিশ্বাস ধ্বংস করে দেয়। তাই এমন কথা নিজের মনে আনাই উচিত নয়। বরং নিজের চেষ্টা ও অগ্রগতিকে স্বীকৃতি দিয়ে ভাবতে হবে আমি চেষ্টা করছি, আর সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।

৪. জীবনে ব্যর্থতা আসবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ব্যর্থতাকে ভয় পেলে আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে না। বরং ব্যর্থতাকে গ্রহণ করতে শিখতে হবে, বুঝতে হবে, ভুল হওয়াটা শেখার একটি অংশ। যারা ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যায়, তারাই সবচেয়ে দৃঢ় মনোবল নিয়ে সামনে যেতে পারে।

৫. আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর ক্ষেত্রে আশেপাশের মানুষের প্রভাবও গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি এমন মানুষের সান্নিধ্যে থাকেন, যারা সব সময় নেতিবাচক মন্তব্য করে, তাহলে আপনার মনোভাবও নেতিবাচক হয়ে যাবে। তাই এমন বন্ধু বা সহচর বেছে নিতে হবে, যারা আপনাকে উৎসাহ দেয়, আপনার উন্নতিকে স্বাগত জানায়। ইতিবাচক পরিবেশে থেকে আত্মবিশ্বাস বাড়ে অনেক দ্রুত।

৬. সবশেষে, আত্মবিশ্বাসের জন্য নিজের যত্ন নেওয়াটা অত্যন্ত জরুরি। শরীর ও মনের সুস্থতা পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। যথেষ্ট ঘুম, পরিমিত খাবার, শারীরিক অনুশীলন ও মানসিক প্রশান্তি সব মিলিয়ে একজন মানুষ নিজের ভেতর শক্তি খুঁজে পায়। আর সেই শক্তিই আত্মবিশ্বাসের ভিত্তি।

আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সময় লাগে, তবে এটি অসম্ভব নয়। আত্মবিশ্বাসী হতে হলে প্রথমেই নিজেকে ভালোবাসতে শিখতে হবে। নিজের উন্নতির জন্য প্রতিদিন একটু করে চেষ্টা করলেই দেখা যাবে, একসময় আপনি নিজেই নিজের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন।