ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন মস্কোর বিরুদ্ধে মোট ১৮টি নিষেধাজ্ঞামূলক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। সেই একই নীতিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কেন নিষেধাজ্ঞা জারি হবে না, ইইউ-তে এই প্রশ্ন তুলেছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেড্রো স্যানচেজ। স্পেনের সঙ্গে গলা মিলিয়েছে আয়ারল্যান্ডও।
সম্প্রতি ইইউ নেতাদের হাতে একটি রিপোর্ট এসেছে। রিপোর্টটি প্রকাশ্যে আনা হয়নি। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার তৈরি করা ওই রিপোর্টে গাজার পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে দেখানো হয়েছে, ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে প্রায় ৫৫ হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বহু সাধারণ মানুষ আছে। মৃত্যু হয়েছে গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়া মানবাধিকার কর্মীদের। ইসরায়েল খাবার এবং ওষুধ ঢুকতে বাধা দিয়েছে, যার ফলে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই সবকিছুই মানবাধিকার বিরোধী বলে মন্তব্য করা হয়েছে ওই রিপোর্টে।
ওই রিপোর্টের প্রেক্ষিতে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী সরব হয়েছেন। তার বক্তব্য, গাজায় ইসরায়েল যা করেছে, তা এককথায় যুদ্ধাপরাধের বিপর্যয়কর পরিস্থিতি বলা যেতে পারে। এবং এর জন্য ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি বাতিল করে নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত বলে জানিয়েছেন তিনি।
ইসরায়েল ইইউ-র সঙ্গে সই করা চুক্তির দুই নম্বর ধারা অমান্য করেছে বলে দাবি স্পেনের। এর ভিত্তিতেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত বলে দাবি করেছে দেশটি। আয়ারল্যান্ড স্পেনকে সমর্থন করলেও অধিকাংশ দেশ স্যানচেজের বক্তব্যকে সমর্থন করেনি। নিয়ম হলো, এমন নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হলে ইইউ-র ২৭টি দেশকেই সহমত হতে হবে। জার্মানি, হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়া, অস্ট্রিয়া এখনো ইসরায়েলের বন্ধু দেশ।
ইইউ-র উপর ইসরায়েলের নির্ভরশীলতা ইসরায়েল ইউরোপীয় দেশগুলি থেকে এক-তৃতীয়াংশ জিনিস কেনে। বছরে তাদের সঙ্গে ইইউ-র বাণিজ্য হয় প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলারের। এছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইইউ ইসরায়েলকে সাহায্য করে থাকে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ইইউ-র ২৭টি দেশের মধ্যে ১৫টি দেশ যদি নিষেধাজ্ঞার পক্ষে কথা বলে, তাহলে আংশিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা সম্ভব। কিন্তু বাস্তবে তা-ও হবে না বলে তারা মনে করছেন।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ইইউ-তে এই বিতর্ক ইসরায়েলকে শাস্তি দেওয়ার জন্য হচ্ছে না। তারা ইসরায়েলকে সতর্ক করে দিতে চাইছে। এরপরেও ইসরায়েল একই কাজ চালিয়ে গেলে ইইউ আরো কঠোর হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।