ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে তিন মাসের বেশি সময় ধরে হামলা চালানোর পাশাপাশি এবার লেবাননে হিজবুল্লার বিরুদ্ধেও সামরিক অভিযান জোরদার করেছে ইসরায়েল।
সিনহুয়া নিউজের খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে গতকাল মঙ্গলবার ইসরায়েলি বাহিনী ও হিজবুল্লাহর মধ্যে গুলি বিনিময় বেড়েছে। হিজবুল্লাহর দুজন সিনিয়র কমান্ডারকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
আইডিএফের মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি স্বীকার করেছেন যে, হিজবুল্লাহর অভিজাত রাদওয়ান বাহিনীর সিনিয়র কমান্ডার উইসাম হাসান তাভিলকে হত্যার একদিন পরই মঙ্গলবার লেবাননে হিজবুল্লাহ কমান্ডার আলী হুসেন বারজিকে হত্যার পেছনে ইসরায়েল ছিল।
আইডিএফ মঙ্গলবার দক্ষিণ লেবাননে বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে। এতে তিন হিজবুল্লাহ যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। এদিকে, উত্তর ইসরায়েলে মঙ্গলবার দিনে ও রাতে ব্যাপক ড্রোন ও রকেট হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লাহও। ইসরায়েলি পক্ষের কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
লেবাননের নিরাপত্তা সূত্রে জানা গেছে, প্রায় তিন মাস ধরে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘর্ষে লেবাননে ২১১ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১৫৪ জন হিজবুল্লাহ যোদ্ধা এবং ৩৫ জন বেসামরিক মানুষ।
এদিকে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, তারা দক্ষিণ গাজা উপত্যকার খান ইউনিসে তাদের সামরিক অভিযান জোরদার করেছে। খান ইউনিসে গতকাল ইসরায়েলি হামলায় ৪০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
আইডিএফ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘প্যারাট্রুপারস ব্রিগেড দলের সেনারা খান ইউনিসের কেন্দ্রে লড়াই করছে। ক্লোজ কোয়ার্টার যুদ্ধ ও স্নাইপার ফায়ারে হামাস যোদ্ধাদের নির্মূল করছে।’ ইসরায়েলি সেনারা হামাসের বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ ও অস্ত্র উদ্ধার করেছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
ফিলিস্তিনের গাজায় বেসামরিক মানুষদের নিরাপত্তার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনসহ আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দের আহ্বান সত্ত্বেও ইসরায়েল বলেছে, তারা দক্ষিণ গাজায় হামলা জোরদার করবে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সাথে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তার সাম্প্রতিক বৈঠকে ‘গাজায় আরও বেসামরিক ক্ষতি এড়াতে ও বেসামরিক অবকাঠামো রক্ষার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন’ বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।
পৃথক একটি বৈঠকে ব্লিঙ্কেনকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, খান ইউনিস এলাকায় ‘হামাসের নেতৃত্ব সনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত এবং ইসরায়েলি জিম্মিরা নিরাপদে বাড়ি ফিরে না আসা পর্যন্ত সামরিক অভিযান জোরদার এবং অব্যাহত থাকবে’।
গত বছরের অক্টোবরে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজা পরিস্থিতি নিয়ে ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক উদ্বেগের প্রেক্ষিতে এ অঞ্চলে চতুর্থবার সফর করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
গাজা উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৩ হাজার ২১০ জনে পৌঁছেছে। এছাড়া প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
এদিকে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ মঙ্গলবার জানিয়েছে, গত সোমবার গাজায় অভিযানের সময় কমপক্ষে নয়জন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গাজা অভিযান শুরুর পর থেকে নিহত ইসরায়েলি সেনার সংখ্যা ৫১৯ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন আরও ২ হাজার ৪৬৫ জন।