ঢাকা , সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অবশেষে বাড়ি ফিরবেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ১২:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪
  • 96

অবশেষে অপেক্ষা ফুরোচ্ছে জিম্মি দশা থেকে মুক্ত নাবিকদের। সবকিছু ঠিক থাকলে আজ মঙ্গলবার বিকেলে বাড়ির পথে রওয়ানা হবেন সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত ২৩ নাবিক।

নাবিকদের পরিবারেও শুরু হয়েছে স্বজনদের ঘরে ফেরার উৎসব। নানা আয়োজনে নাবিকদের বরণ করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা।

চট্টগ্রামের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান কেএসআরএমের মালিকানাধীন বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিকই বাংলাদেশের।

চট্টগ্রামসহ দেশের নানা অঞ্চলে তাদের বাড়ি। চরম অনিশ্চয়তার দীর্ঘ যাত্রা শেষে আজ বিকাল ৪টায় নাবিকেরা পৌঁছাবেন চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালের (এনসিটি) এক নম্বর জেটিতে। ওখানেই তাদের বরণ করা হবে। এরপর ঘরে ফিরতে শুরু করবেন তারা।

বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান সবাই অধীর আগ্রহে তাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। তাদের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে আজ।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নাবিকদের সংবর্ধনা প্রদান করবে বলে বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক জানিয়েছেন।

এদিকে, সোমবার বিকেলে কুতুবদিয়ায় পৌঁছানোর পর থেকেই স্বদেশের উপকূলে নোঙর করা এমভি আবদুল্লাহর মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে নাবিকদের।

কুদুবদিয়া পৌঁছানোর পর এমভি আবদুল্লাহর চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে উপকূলের দুটি ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘ভালোবাসি বাংলাদেশ। আমার বাংলাদেশ।’

একই ভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে জাহাজের ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান লিখেছেন ‘The journey with ABDULLAH ends here.’

এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের মাস্টার ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুর রশিদ জাগো নিউজকে জানান, ‘সোমবার সন্ধ্যায় আমাদের জাহাজ কুতুবদিয়ায় বন্দর জলসীমায় নোঙর করা হয়েছে। নাবিকেরা সবাই সুস্থ আছেন। এরইমধ্যে নাবিকদের অপর একটি দল জাহাজের দায়িত্ব বুঝে নিতে জাহাজে এসেছেন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে মঙ্গলবার আমরা ছোট জাহাজে করে চট্টগ্রামে বন্দর জেটিতে পৌঁছানোর আশা করছি।’

নাবিকদের ঘরে ফেরার আনন্দে বিভোর তাদের পরিবার-পরিজন। রোজার ঈদে যাদের পরিবারে ছিল শোকের মাতম তারা ঈদের এক মাসের বেশি সময় পর উৎসবের আয়োজনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

এমভি আবদুল্লাহর ক্যাপ্টেন আবদুর রশিদের স্ত্রী ফাহমিদা আকতার বলেন, ‘কী যে ভালো লাগছে বোঝাতে পারবো না। আমার একমাত্র মেয়ে তার বাবাকে ফিরে পেতে যাচ্ছে, সে এই আনন্দে বিভোর।’

স্বামীর প্রিয় সব খাবার আজ রান্না করবেন বলে জানান ফাহমিদা।

জাহাজের ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল বিপ্লবের ভাগ্নে ফয়সাল ভূঁয়া বলেন, আমাদের বাড়িতে ঈদের আমেজ বইছে। পরিবারের সব সদস্য মামার বাড়িতে এসেছেন। আজ মামা ফিরলে আমাদের ঈদ শুরু হবে।

চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খানের তিন মেয়ে ইয়াসরা ফাতেমা, উনাইজা মাহরীন ও খাদিজা আরাবিয়া । মৃত্যুর দুয়ার থেকে বাবা ফিরছেন এই আনন্দে মাতোয়ারা তারা। স্ত্রী ফিরোজা আকতার স্বামীর জন্য রেধেছেন পছন্দের সব খাবার। তাদের মতোই নিজ দেশের সন্তানদের ফিরে পেয়ে আনন্দিত সারাদেশের মানুষ।

মোজাম্বিক থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফেরার সময় জিম্মি জাহাজটি এবার দেশের পথে বহন করছে ৫৬ হাজার মেট্রিক টন চুনাপাথর। আজ (১৩ মে) দুপুরে জাহাজটি দেশের জলসীমায় কুতুবদিয়ার দিকে এগোচ্ছিল।

গত ৪ মার্চ আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরের উদ্দেশে রওয়ানা হয় এমভি আবদুল্লাহ। ১২ মার্চ বাংলাদেশি ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি জিম্মি করে সোমালিয় দস্যুরা। দেশটির উপকূল থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ভারত মহাসাগরে জাহাজটি জিম্মি করা হয়।

এর ৩২ দিন পর গত ১৪ এপ্রিল জাহাজটি মুক্ত করে দেয় জলদস্যুরা। এর পরই সেটি সোমালিয়া উপকূল থেকে আরব আমিরাতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। টানা এক সপ্তাহের সমুদ্রযাত্রা শেষে ২১ এপ্রিল বিকেলে জাহাজটি আল হামরিয়াহ বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছায়।

উদ্ধার জাহাজের নাবিক ও ক্রুরা হলেন, জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিনি ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিসিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ, ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্ম শ্মসুদ্দিন, মো . আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুর উদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।

ট্যাগস

অবশেষে বাড়ি ফিরবেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক

আপডেট সময় ১২:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪

অবশেষে অপেক্ষা ফুরোচ্ছে জিম্মি দশা থেকে মুক্ত নাবিকদের। সবকিছু ঠিক থাকলে আজ মঙ্গলবার বিকেলে বাড়ির পথে রওয়ানা হবেন সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত ২৩ নাবিক।

নাবিকদের পরিবারেও শুরু হয়েছে স্বজনদের ঘরে ফেরার উৎসব। নানা আয়োজনে নাবিকদের বরণ করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা।

চট্টগ্রামের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান কেএসআরএমের মালিকানাধীন বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিকই বাংলাদেশের।

চট্টগ্রামসহ দেশের নানা অঞ্চলে তাদের বাড়ি। চরম অনিশ্চয়তার দীর্ঘ যাত্রা শেষে আজ বিকাল ৪টায় নাবিকেরা পৌঁছাবেন চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালের (এনসিটি) এক নম্বর জেটিতে। ওখানেই তাদের বরণ করা হবে। এরপর ঘরে ফিরতে শুরু করবেন তারা।

বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান সবাই অধীর আগ্রহে তাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। তাদের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে আজ।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নাবিকদের সংবর্ধনা প্রদান করবে বলে বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক জানিয়েছেন।

এদিকে, সোমবার বিকেলে কুতুবদিয়ায় পৌঁছানোর পর থেকেই স্বদেশের উপকূলে নোঙর করা এমভি আবদুল্লাহর মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে নাবিকদের।

কুদুবদিয়া পৌঁছানোর পর এমভি আবদুল্লাহর চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে উপকূলের দুটি ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘ভালোবাসি বাংলাদেশ। আমার বাংলাদেশ।’

একই ভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে জাহাজের ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান লিখেছেন ‘The journey with ABDULLAH ends here.’

এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের মাস্টার ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুর রশিদ জাগো নিউজকে জানান, ‘সোমবার সন্ধ্যায় আমাদের জাহাজ কুতুবদিয়ায় বন্দর জলসীমায় নোঙর করা হয়েছে। নাবিকেরা সবাই সুস্থ আছেন। এরইমধ্যে নাবিকদের অপর একটি দল জাহাজের দায়িত্ব বুঝে নিতে জাহাজে এসেছেন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে মঙ্গলবার আমরা ছোট জাহাজে করে চট্টগ্রামে বন্দর জেটিতে পৌঁছানোর আশা করছি।’

নাবিকদের ঘরে ফেরার আনন্দে বিভোর তাদের পরিবার-পরিজন। রোজার ঈদে যাদের পরিবারে ছিল শোকের মাতম তারা ঈদের এক মাসের বেশি সময় পর উৎসবের আয়োজনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

এমভি আবদুল্লাহর ক্যাপ্টেন আবদুর রশিদের স্ত্রী ফাহমিদা আকতার বলেন, ‘কী যে ভালো লাগছে বোঝাতে পারবো না। আমার একমাত্র মেয়ে তার বাবাকে ফিরে পেতে যাচ্ছে, সে এই আনন্দে বিভোর।’

স্বামীর প্রিয় সব খাবার আজ রান্না করবেন বলে জানান ফাহমিদা।

জাহাজের ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল বিপ্লবের ভাগ্নে ফয়সাল ভূঁয়া বলেন, আমাদের বাড়িতে ঈদের আমেজ বইছে। পরিবারের সব সদস্য মামার বাড়িতে এসেছেন। আজ মামা ফিরলে আমাদের ঈদ শুরু হবে।

চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খানের তিন মেয়ে ইয়াসরা ফাতেমা, উনাইজা মাহরীন ও খাদিজা আরাবিয়া । মৃত্যুর দুয়ার থেকে বাবা ফিরছেন এই আনন্দে মাতোয়ারা তারা। স্ত্রী ফিরোজা আকতার স্বামীর জন্য রেধেছেন পছন্দের সব খাবার। তাদের মতোই নিজ দেশের সন্তানদের ফিরে পেয়ে আনন্দিত সারাদেশের মানুষ।

মোজাম্বিক থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফেরার সময় জিম্মি জাহাজটি এবার দেশের পথে বহন করছে ৫৬ হাজার মেট্রিক টন চুনাপাথর। আজ (১৩ মে) দুপুরে জাহাজটি দেশের জলসীমায় কুতুবদিয়ার দিকে এগোচ্ছিল।

গত ৪ মার্চ আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরের উদ্দেশে রওয়ানা হয় এমভি আবদুল্লাহ। ১২ মার্চ বাংলাদেশি ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি জিম্মি করে সোমালিয় দস্যুরা। দেশটির উপকূল থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ভারত মহাসাগরে জাহাজটি জিম্মি করা হয়।

এর ৩২ দিন পর গত ১৪ এপ্রিল জাহাজটি মুক্ত করে দেয় জলদস্যুরা। এর পরই সেটি সোমালিয়া উপকূল থেকে আরব আমিরাতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। টানা এক সপ্তাহের সমুদ্রযাত্রা শেষে ২১ এপ্রিল বিকেলে জাহাজটি আল হামরিয়াহ বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছায়।

উদ্ধার জাহাজের নাবিক ও ক্রুরা হলেন, জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিনি ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিসিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ, ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্ম শ্মসুদ্দিন, মো . আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুর উদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।