বল হাতে জয়ের গল্পটা আগেই লিখে ফেলেন রিশাদ হোসেনরা। দাপুটে বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কাকে আটকে দেন মাত্র ১২৪ রানে। এই ছোট রান তাড়ায়ও হতাশায় ডুবতে বসেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হতে দেননি ক্রিজে থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আরেকবার ডুবতে বসা বাংলাদেশের ত্রাতা হয়ে উঠলেন তিনি। তার বুড়ো হাড়ের ভেলকিতে শ্রীলঙ্কাকে কাঁদিয়ে টোয়েন্টি বিশ্বকাপে উড়ন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে দুই উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। এই জয়ে সাম্প্রতিক অফফর্মের হতাশাও খানিকটা কমলো বাংলাদেশের। টানা ব্যর্থতার বৃত্তে আটকে থাকা লিটনরা বিশ্বকাপে পেলেন স্বস্তির সুবাতাস।
অন্যদিকে এই হারে বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের ঘণ্টা অনেকটাই বেজে গেল শ্রীলঙ্কার। টানা দুই হারে সুপার ফোরের সমীকরণটা কঠিন হয়ে উঠল লঙ্কানদের।
আজ শনিবার (৮ জুন) বিশ্বকাপের ১৫ তম ম্যাচে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে স্কোরবোর্ডে ১২৪ রানের বেশি তুলতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৭ রানের ইনিংস খেলতে পেরেছেন পাথুম নিশানকা।
জবাব দিতে নেমে ৬ বল হাতে রেখে ১২৫ রান করে জয়ের নাগাল পেয়ে যায় বাংলাদেশ। যদিও, ব্যাটিংয়ের শুরুতে বরাবরের মতো ব্যর্থতা ভর করে বাংলাদেশের ওপর। শুরুতেই বিদায় নেন সৌম্য সরকার। ধানাঞ্জয়া ডি সিলভার সাদামাটা বলে বাজে শট খেলে শূন্যতে বিদায় নেন বাঁহাতি ওপেনার।
এরপর হতাশ করেন তানজিদ তামিম। নুয়ান থুশারার ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে বোল্ড হন তানজিদ (৩)। চারে নেমে টিকলেন না অধিনায়ক শান্তও। ১৩ বল মোকাবিলা করে অধিনায়কের ইনিংস থামল ৭ রানে। ২৮ রানে তিন উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। তখন উইকেটে থেকে আশার পালে সাহস যোগান তাওহিদ ও লিটন দাস। এই জুটিতে জয়ের পথটা সহজ করে ফেলে বাংলাদেশ। মাঝপথে ২০ বলে ৪০ রান করে তাওহিদ ফিরলে লিটনও বিদায় নেন। ৩৬ রান করে হাসারাঙ্গার এলবির ফাঁদে পড়েন ডানহাতি ব্যাটার। দুই সেট ব্যাটার ফেরার পর হারতেই বসেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ক্রিজে থেকে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন মাহমুদউল্লাহ। জয়ের পথে মাহমুদউল্লাহ করেন ১৬ রান।
এর আগে ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে টস জিতে যথারীতি বোলিং বেছে নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। নতুন বলে বাংলাদেশের ইনিংস শুরুটা করেছেন তানজিম হাসান সাকিব। এক বাউন্ডারি হজম করলেও প্রথম ওভারে ৫ রানের বেশি দেননি তিনি। সাকিব আল হাসান দ্বিতীয় ওভারে এসেই রান দেদারসে। তৃতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন তাসকিন আহমেদ। চোট কাটিয়ে ফেরা তাসকিনের ওভারের প্রথম দুই বলে বাউন্ডারি হাঁকান কুশল মেন্ডিস। তৃতীয় বলেই বোল্ড। ডানহাতি পেসারের ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারি স্টাম্পে টেনে নিয়ে বোল্ড হন মেন্ডিস (১০)।
পঞ্চম ওভারে আক্রমণে আসেন মুস্তাফিজুর রহমান। নিজের প্রথম বলেই পেয়ে যান সাফল্য। বাঁহাতি পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি উড়িয়ে মারার চেষ্টায় মিড অফে ক্যাচ হয়ে ফেরেন কামিন্দু মেন্ডিস।
দুই উইকেট হারানোর পরও পাওয়ার প্লেতে ৫৩ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। তার মধ্যে উইকেটে থিতু হয়ে ভয় জাগান পাথুম নিশানকা। ভয়ংকর হয়ে ওঠা এই নিশানকার প্রতিরোধ ভাঙেন মুস্তাফিজ। কাটার মাস্টারের ফুল লেংথ ডেললিভারিতে কাভারের শান্তর ক্যাচ হয়ে ফেরেন নিশানকা। ফেরার আগে ২৮ বলে সাত চার ও এক ছক্কায় ৪৭ রান করেন লঙ্কান ওপেনার।
তিন টপ অর্ডারের বিদায়ের পর চতুর্থ উইকেটে জুটি গড়ার আভাস দেন ডি সিলভা ও চারিথ আসালাঙ্কা। নবম ওভারে এসে জোড়া উইকেট নিয়ে ৩০ রানের এই জুটি ভাঙেন রিশাদ। প্রথমে তুলে নেন ১৯ রান করা আসালাঙ্কাকে। এরপর ছয়ে নামা হাসারাঙ্গাকে রানের খাতাই খুলতে দেননি রিশাদ।
নিজের শেষ ওভারে এসে ডি সিলভাকেও বিদায় করেন রিশাদ। ১৯ রান করা সিলভা বাংলাদেশি লেগ স্পিনারের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। দ্রুত উইকেট হারানোর মিছিলে বড় পুঁজি গড়তে পারেনি শ্রীলঙ্কা। একের পর এক উইকেট হারিয়ে অল্পতে থামে হাসারাঙ্গার দল।
বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে ২২ রান দিয়ে তিন উইকেট নেন রিশাদ। ১৭ রান খরচায় মুস্তাফিজুর রহমান নেন তিনটি। ২৫ রানে দুটি নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ১২৪/৯ (নিশানকা ৪৭, কুসাল ১০, কামিন্দু ৪, ধানাঞ্জয়া ২১, আসালাঙ্কা ১৯, হাসারাঙ্গা ০, ম্যাথিউস ১৬, শানাকা ৩, থিকশানা ০, পাথিরানা ০, থুশারা ০; তানজিম ৪-০-২৪-১, সাকিব ৩-০-৩০-০, তাসকিন ৪-০-২৫-২, মুস্তাফিজ ৪-০-১৭-৩, রিশাদ ৪-০-২২-৩, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৪-০)।
বাংলাদেশ: ১৯ ওভারে ১২৫/৮(সৌম্য ০, তানজিদ ৩, শান্ত ৭, তাওহিদ ৪০, লিটন ৩৬, সাকিব ৮, মাহমুদউল্লাহ ১৬, রিশাদ ১, তাসকিন ০, সাকিব ১; ডি সিলভা ২-০-১১-১, থুশারা, থিকসানা ৪-০-২৫-০, হাসারাঙ্গা ৪-০-৩২-২, পাথিরানা ২-০-২৭-১)।
ফল: দুই উইকেটে জয়ী বাংলাদেশ।