ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শেয়ারবাজার দুর্বৃত্তায়নের আরেক কুশলীব নূরুল ফজল বুলবুল

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০১:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪
  • 26

১৬ বছরের বেশি সময় যাবত আওয়ামী নেতাদের দুর্বৃত্তায়নে দেশের শেয়ারবাজার বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই সময়ে আওয়ামী নেতারা শত শত কোটি টাকার মালিক হলেও লাখ লাখ বিনিয়োগকারী সর্বশান্ত হয়ে ঘরে ফিরেছে। এসব দুর্বৃত্তদের আরেকজন একেএম নুরুল ফজল বুলবুল। যিনি সংগোপনে শেয়ারবাজারের অন্তত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে গ্রাস করার পরিকল্পনা নিয়ে ঝেঁকে বসেছেন। যদিও শেয়ারবাজারে তার তেমন বিনিয়োগ নেই।

নুরুল ফজল বুলবুল বর্তমানে শেয়ারবাজারের অতীব গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) এর পর্ষদে আছেন ১৩ বছর ধরে।

এছাড়া, শেয়ারবাজারে কোন অবদান ছাড়াই তিনি ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ) ও সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেডে (সিসিবিএল) ঢুকে পড়েছেন।

নুরুল ফজল বুলবুল শুরুতে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলোচিত নজরুল ইসলাম মজুমদারের সঙ্গে সখ্যতা, আওয়ামীলীগ নেতা ও লবিং করে জায়গা করে নেন সিডিবিএলে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্সের (বিএবি) প্রতিনিধি পরিচালক হিসেবে সিডিবিএলে ঢুকেন তিনি। এরপরে সিডিবিএলের প্রতিনিধি হিসেবে সিএমএসএফ ও সিসিবিএলে তার কালো হাত বাড়ান।

ডিএসইর এক সিনিয়র ট্রেকহোল্ডার বলেন, নুরুল ফজল বুলবুল শেয়ারবাজারে ধীরে ধীরে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছিলেন। এরইমধ্যে তার নামে অনেক অনিয়ম ও আধিপত্য বিস্তারের কথা বেরিয়েছে। যেটা সম্ভব হয়েছে আওয়ামী লীগ করার কারণে। কেউই তার শেয়ারবাজারে আধিপত্য বিস্তারকে প্রতিরোধ করতে পারছিল না। তবে এখন সময় এসেছে। গত এক দশকে সিডিবিএলে কি অনিয়ম করেছে, তা খুঁজে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। একইসঙ্গে সিসিবিএল ও সিএমএসএফে কোন অনিয়ম করেছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখতে হবে।

নুরুল ফজল বুলবুল ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে শেয়ার সংরক্ষণকারী সিডিবিএলে দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র গড়ে তুলেছেন। যারা সার্ভার থেকে তথ্য পাচারসহ বিভিন্ন অনিয়মে জড়িত বলে অভিযোগ আছে।

নুরুল ফজল বুলবুল ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার কমিটির দায়িত্বে ছিলেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বড় পরাজয় হয়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের তদন্তে বুলবুলের বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারনার নামে তহবিল তসরুপের প্রমাণ মেলে। যে কারণে ওইসময় তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার করা হয়।

ডিএসইর আরেক সিনিয়র ট্রেকহোল্ডার বলেন,নুরুল ফজল বুলবুলের শেয়ারবাজারে কোন অবদান নাই। অথচ তিনি শেয়ারবাজারের ৩টি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের পর্ষদে। যে প্রতিষ্ঠানগুলো শত শত কোটি টাকার মালিক। ওইসব অর্থ লোপাটের জন্যই তারমতো একজন লোককে পর্ষদে বসানো হয়েছে। যিনি কোন কারণ ছাড়াই ওইসব প্রতিষ্ঠানের অর্থে নিয়মিত বিদেশ ভ্রমন করেন।

বর্তমানে সিডিবিএলের পরিচালনা পর্ষদে ১৩ জন সদস্য রয়েছেন। চেয়ারম্যান হিসাবে রয়েছেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন। কিন্তু তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় ভাইস চেয়ারম্যান, ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবির প্রতিনিধি নুরুল ফজল বুলবুল সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১১ সাল থেকে সিডিবিএলের পর্ষদে রয়েছেন তিনি। ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে আছেন ২০১৬ সাল থেকে।

সিডিবিএল দুই স্টক এক্সচেঞ্জে প্রতিদিন যত শেয়ার লেনদেন হয়, প্রতিষ্ঠানটি তা সংরক্ষণ করে রাখে। এ ছাড়াও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের যে কোনো তথ্য সিডিবিএলে সংরক্ষিত। এমন একটি প্রতিষ্ঠানে সুবিধাবাদী বুলবুল এক যুগের বেশি সময় পরিচালকের চেয়ার আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। যে প্রতিষ্ঠানটির বোর্ড মিটিংয়ে অংশ নিলে একজন সদস্যকে ৩০ হাজার টাকা সম্মানি দেওয়া হয়।

ট্যাগস

শেয়ারবাজার দুর্বৃত্তায়নের আরেক কুশলীব নূরুল ফজল বুলবুল

আপডেট সময় ০১:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪

১৬ বছরের বেশি সময় যাবত আওয়ামী নেতাদের দুর্বৃত্তায়নে দেশের শেয়ারবাজার বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই সময়ে আওয়ামী নেতারা শত শত কোটি টাকার মালিক হলেও লাখ লাখ বিনিয়োগকারী সর্বশান্ত হয়ে ঘরে ফিরেছে। এসব দুর্বৃত্তদের আরেকজন একেএম নুরুল ফজল বুলবুল। যিনি সংগোপনে শেয়ারবাজারের অন্তত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে গ্রাস করার পরিকল্পনা নিয়ে ঝেঁকে বসেছেন। যদিও শেয়ারবাজারে তার তেমন বিনিয়োগ নেই।

নুরুল ফজল বুলবুল বর্তমানে শেয়ারবাজারের অতীব গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) এর পর্ষদে আছেন ১৩ বছর ধরে।

এছাড়া, শেয়ারবাজারে কোন অবদান ছাড়াই তিনি ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ) ও সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেডে (সিসিবিএল) ঢুকে পড়েছেন।

নুরুল ফজল বুলবুল শুরুতে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলোচিত নজরুল ইসলাম মজুমদারের সঙ্গে সখ্যতা, আওয়ামীলীগ নেতা ও লবিং করে জায়গা করে নেন সিডিবিএলে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্সের (বিএবি) প্রতিনিধি পরিচালক হিসেবে সিডিবিএলে ঢুকেন তিনি। এরপরে সিডিবিএলের প্রতিনিধি হিসেবে সিএমএসএফ ও সিসিবিএলে তার কালো হাত বাড়ান।

ডিএসইর এক সিনিয়র ট্রেকহোল্ডার বলেন, নুরুল ফজল বুলবুল শেয়ারবাজারে ধীরে ধীরে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছিলেন। এরইমধ্যে তার নামে অনেক অনিয়ম ও আধিপত্য বিস্তারের কথা বেরিয়েছে। যেটা সম্ভব হয়েছে আওয়ামী লীগ করার কারণে। কেউই তার শেয়ারবাজারে আধিপত্য বিস্তারকে প্রতিরোধ করতে পারছিল না। তবে এখন সময় এসেছে। গত এক দশকে সিডিবিএলে কি অনিয়ম করেছে, তা খুঁজে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। একইসঙ্গে সিসিবিএল ও সিএমএসএফে কোন অনিয়ম করেছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখতে হবে।

নুরুল ফজল বুলবুল ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে শেয়ার সংরক্ষণকারী সিডিবিএলে দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র গড়ে তুলেছেন। যারা সার্ভার থেকে তথ্য পাচারসহ বিভিন্ন অনিয়মে জড়িত বলে অভিযোগ আছে।

নুরুল ফজল বুলবুল ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার কমিটির দায়িত্বে ছিলেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বড় পরাজয় হয়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের তদন্তে বুলবুলের বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারনার নামে তহবিল তসরুপের প্রমাণ মেলে। যে কারণে ওইসময় তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার করা হয়।

ডিএসইর আরেক সিনিয়র ট্রেকহোল্ডার বলেন,নুরুল ফজল বুলবুলের শেয়ারবাজারে কোন অবদান নাই। অথচ তিনি শেয়ারবাজারের ৩টি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের পর্ষদে। যে প্রতিষ্ঠানগুলো শত শত কোটি টাকার মালিক। ওইসব অর্থ লোপাটের জন্যই তারমতো একজন লোককে পর্ষদে বসানো হয়েছে। যিনি কোন কারণ ছাড়াই ওইসব প্রতিষ্ঠানের অর্থে নিয়মিত বিদেশ ভ্রমন করেন।

বর্তমানে সিডিবিএলের পরিচালনা পর্ষদে ১৩ জন সদস্য রয়েছেন। চেয়ারম্যান হিসাবে রয়েছেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন। কিন্তু তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় ভাইস চেয়ারম্যান, ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবির প্রতিনিধি নুরুল ফজল বুলবুল সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১১ সাল থেকে সিডিবিএলের পর্ষদে রয়েছেন তিনি। ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে আছেন ২০১৬ সাল থেকে।

সিডিবিএল দুই স্টক এক্সচেঞ্জে প্রতিদিন যত শেয়ার লেনদেন হয়, প্রতিষ্ঠানটি তা সংরক্ষণ করে রাখে। এ ছাড়াও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের যে কোনো তথ্য সিডিবিএলে সংরক্ষিত। এমন একটি প্রতিষ্ঠানে সুবিধাবাদী বুলবুল এক যুগের বেশি সময় পরিচালকের চেয়ার আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। যে প্রতিষ্ঠানটির বোর্ড মিটিংয়ে অংশ নিলে একজন সদস্যকে ৩০ হাজার টাকা সম্মানি দেওয়া হয়।