নেত্রকোনার বিভিন্ন এলাকা থেকে ধীরে ধীরে কমছে বন্যার পানি। বন্যাদুর্গত এলাকা থেকে পানি কমলেও বাসিন্দাদের সংকট ও দুর্ভোগ এখনো কাটেনি। দুর্গত ব্যক্তিরা বাড়িঘরে ফিরলেও অধিকাংশই ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি সংস্কার করতে পারছেন না। এসব এলাকার অনেক গ্রামীণ রাস্তাঘাট পানির নিচে থাকায় প্রয়োজনীয় যোগাযোগেও তাদের বেগ পেতে হচ্ছে। জেলার সড়ক বিভাগ জানিয়েছে, জেলার সাড়ে ছয়শো কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক ডুবে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, টানা বৃষ্টি ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে সম্প্রতি নেত্রকোনার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, পূর্বধলা, বারহাট্টা ও সদর উপজেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। এতে অন্তত ২৭টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। গত মঙ্গলবার থেকে পানি কমতে শুরু হলেও এখনো বিভিন্ন রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আমন, শাকসবজির ক্ষেত ও ঘরবাড়িতে পানি রয়েছে। বন্যার পানির কারণে ২১২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রায় ২৮৫ কিলোমিটার গ্রামীণ কাঁচাপাকা সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো স্বাভাবিক হয়নি।
পানির নিচে ডুবে আছে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর আমন ফসল। জেলার কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও জেলার কংস, ধনু, সোমেশ্বরী, মগড়াসহ অন্য নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান বলেন, জেলার সব নদ-নদীর পানিই দ্রুত কমছে। তবে এখনো উব্দাখালী নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ মিটার। যেভাবে পানি কমছে, আশা করা হচ্ছে নদীর ওই পয়েন্টের পানিও বিপৎসীমার নিচে চলে যাবে। সব মিলিয়ে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে।
এদিকে বন্যায় জেলার সড়কপথে এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ কোটি টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এজিইডি) নেত্রকোনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম।
তিনি জানান, জেলায় এলজিইডির আওতাধীন ৫ হাজার ৯৫৩ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১ হাজার ৬৩৮ কিলোমিটার পিচঢালা সড়ক। বাকিগুলো সিসি, আরসিসি, মেগাডম, কার্পেটিং ও কাঁচা সড়ক। বন্যার পানিতে প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার সড়কপথ তলিয়ে যায়। আর এখনো ২৫০ কিলোমিটার সড়ক পানির নিচে আছে। যেসব সড়ক থেকে পানি নেমেছে, সেগুলো বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে যাওয়ায় অধিকাংশ সড়ক ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
অপরদিকে বন্যা দুর্গত এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ করেনি বলে মন্তব্য করেছেন পূর্বধলার জারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম নান্টু। তিনি বলেন, কংস নদের তীরে থাকা জারিয়া-নাটেরকোনা এলাকার দুই স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে সম্পদ ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। অনেক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। পানি কমলেও, তাদের দুর্ভোগ কমছে না। টাকার অভাবে নিম্ন আয়ের মানুষ ভেঙে যাওয়া ঘরবাড়ি থাকার উপযোগী করতে পারছেন না। এ ছাড়া গরু-ছাগল নিয়েও বিপদে পড়েছেন।
এ সব বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, সব মিলিয়ে বন্যার পরিস্থিতি এখন উন্নতির দিকে। মানুষের কিছু দুর্ভোগতো হচ্ছেই। আমরা ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রেখেছি। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটসহ অন্য বিষয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দ্রুত সমাধান করা হবে।