ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতের পুঁজিবাজারে টানা পতন

ভারতের শেয়ারবাজারে গতকাল সূচকের বড় ধরনের পতন হয়েছে। দেশটির শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক সেনসেক্স ৯৩০ পয়েন্ট কমে ৮০ হাজার ২২০ পয়েন্টে নেমে আসে। বাজারের আরেক সূচক নিফটির অবস্থাও ভালো নয়। এই সূচকটি ৩০০ পয়েন্ট কমে ২৫ হাজারের নিচে নেমেছে।

বাজারের সব ক্ষেত্রে দুর্বলতার কারণে ভারতের শেয়ারবাজার রীতিমতো রক্তাক্ত। চলতি মাসে ধারাবাহিকভাবেই পতন হচ্ছে ভারতের শেয়ারবাজারের। চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই দিনেও বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। বাজার মূলধন কমেছে ৮ দশমিক ৯ লাখ কোটি রুপি।

এর আগে মে মাসে ভারতের সাধারণ নির্বাচনের সময়ও ভারতের শেয়ারবাজারে সূচকের বড় ধরনের পতন হয়েছিল। পরে বাজার ঘুরে দাঁড়ায়। এরপর চলতি অক্টোবর মাসে আবারও পতন হয় ভারতের শেয়ারবাজারে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ স্বল্প হারে নীতি সুদ হ্রাস করবে; সেই সঙ্গে দেশটির বন্ডের সুদহার বাড়ছে। সেই সঙ্গে চীন অর্থনীতি চাঙা করতে নতুন করে প্রণোদনা দিচ্ছে। এমন নানা কারণে ভারতের বাজার থেকে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছেন।

চলতি মাসে ভারতের শেয়ারবাজারে সূচকের পতনের মূল কারণ ইরান-ইসরায়েল সংঘাতজনিত অনিশ্চয়তা। ১ অক্টোবর ইসরায়েলে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তেহরান। অন্যদিকে ইরান–সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে লেবাননে স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। এই যুদ্ধের সরাসরি প্রভাব ভারতের শেয়ারবাজারে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় এ মাসের প্রথম দিকে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছিল। যদিও পরে তা কিছুটা কমেছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, ইসরায়েল ইরানের তেলক্ষেত্রে হামলা চালালে অপরিশোধিত তেলের দাম অনেকটাই বেড়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে ভারতের মতো তেল আমদানিকারী দেশের অর্থনীতি বড় ধাক্কা খেতে পারে। বিনিয়োগকারীরা এসব পরিস্থিতির ওপর নজর রেখে বাজার থেকে টাকা সরিয়ে নিচ্ছেন।

এ ছাড়া সম্প্রতি বেশ কিছু ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করেছে ভারতের শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণকারী কেন্দ্রীয় সংস্থা সেবি। এতে বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়েছেন। তা ছাড়া চীনের শেয়ারবাজারে নতুন করে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের একাংশ ভারতের বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার প্রভাব ভারতের শেয়ারবাজারে পড়ছে। গতকাল নিয়ে টানা ১৬ দিনে এই ছবি দেখা গেছে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত ৯৩ বাজার ৫০০ কোটি রুপি বাজার থেকে তুলে নিয়েছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। এর মধ্যে শুধু অক্টোবর মাসেই ৮২ হাজার ৫০০ কোটি রুপি তুলে নিয়েছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।

এখন পর্যন্ত এক মাসে বিদেশিদের বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার নিরিখে এটাই সর্বোচ্চ। এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর আগে এক মাসে সর্বোচ্চ ৬১ হাজার ৯৭৩ কোটি রুপি তুলে নিয়েছিলেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। সেটা হয়েছিল আবার কোভিডের সময়, ২০২০ সালের মার্চে।

গত সপ্তাহে শেষ লেনদেনের দিনে কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল ভারতের শেয়ারবাজার। এর আগে টানা কয়েক দিন পতন দেখা গেছে। বিশ্লেষকদের ইঙ্গিত, সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দার আভাস বিনিয়োগকারীদের ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। গত সপ্তাহে বাজার স্থিতিশীল থাকার ইঙ্গিত পাওয়ার পর বিনিয়োগকারীদের মনে হয়েছে, এখন মুনাফা তোলার সময়। হঠাৎ করে তাঁরা শেয়ার বিক্রি শুরু করায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

ট্যাগস

ভারতের পুঁজিবাজারে টানা পতন

আপডেট সময় এক ঘন্টা আগে

ভারতের শেয়ারবাজারে গতকাল সূচকের বড় ধরনের পতন হয়েছে। দেশটির শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক সেনসেক্স ৯৩০ পয়েন্ট কমে ৮০ হাজার ২২০ পয়েন্টে নেমে আসে। বাজারের আরেক সূচক নিফটির অবস্থাও ভালো নয়। এই সূচকটি ৩০০ পয়েন্ট কমে ২৫ হাজারের নিচে নেমেছে।

বাজারের সব ক্ষেত্রে দুর্বলতার কারণে ভারতের শেয়ারবাজার রীতিমতো রক্তাক্ত। চলতি মাসে ধারাবাহিকভাবেই পতন হচ্ছে ভারতের শেয়ারবাজারের। চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই দিনেও বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। বাজার মূলধন কমেছে ৮ দশমিক ৯ লাখ কোটি রুপি।

এর আগে মে মাসে ভারতের সাধারণ নির্বাচনের সময়ও ভারতের শেয়ারবাজারে সূচকের বড় ধরনের পতন হয়েছিল। পরে বাজার ঘুরে দাঁড়ায়। এরপর চলতি অক্টোবর মাসে আবারও পতন হয় ভারতের শেয়ারবাজারে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ স্বল্প হারে নীতি সুদ হ্রাস করবে; সেই সঙ্গে দেশটির বন্ডের সুদহার বাড়ছে। সেই সঙ্গে চীন অর্থনীতি চাঙা করতে নতুন করে প্রণোদনা দিচ্ছে। এমন নানা কারণে ভারতের বাজার থেকে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছেন।

চলতি মাসে ভারতের শেয়ারবাজারে সূচকের পতনের মূল কারণ ইরান-ইসরায়েল সংঘাতজনিত অনিশ্চয়তা। ১ অক্টোবর ইসরায়েলে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তেহরান। অন্যদিকে ইরান–সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে লেবাননে স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। এই যুদ্ধের সরাসরি প্রভাব ভারতের শেয়ারবাজারে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় এ মাসের প্রথম দিকে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছিল। যদিও পরে তা কিছুটা কমেছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, ইসরায়েল ইরানের তেলক্ষেত্রে হামলা চালালে অপরিশোধিত তেলের দাম অনেকটাই বেড়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে ভারতের মতো তেল আমদানিকারী দেশের অর্থনীতি বড় ধাক্কা খেতে পারে। বিনিয়োগকারীরা এসব পরিস্থিতির ওপর নজর রেখে বাজার থেকে টাকা সরিয়ে নিচ্ছেন।

এ ছাড়া সম্প্রতি বেশ কিছু ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করেছে ভারতের শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণকারী কেন্দ্রীয় সংস্থা সেবি। এতে বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়েছেন। তা ছাড়া চীনের শেয়ারবাজারে নতুন করে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের একাংশ ভারতের বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার প্রভাব ভারতের শেয়ারবাজারে পড়ছে। গতকাল নিয়ে টানা ১৬ দিনে এই ছবি দেখা গেছে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত ৯৩ বাজার ৫০০ কোটি রুপি বাজার থেকে তুলে নিয়েছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। এর মধ্যে শুধু অক্টোবর মাসেই ৮২ হাজার ৫০০ কোটি রুপি তুলে নিয়েছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।

এখন পর্যন্ত এক মাসে বিদেশিদের বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার নিরিখে এটাই সর্বোচ্চ। এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর আগে এক মাসে সর্বোচ্চ ৬১ হাজার ৯৭৩ কোটি রুপি তুলে নিয়েছিলেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। সেটা হয়েছিল আবার কোভিডের সময়, ২০২০ সালের মার্চে।

গত সপ্তাহে শেষ লেনদেনের দিনে কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল ভারতের শেয়ারবাজার। এর আগে টানা কয়েক দিন পতন দেখা গেছে। বিশ্লেষকদের ইঙ্গিত, সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দার আভাস বিনিয়োগকারীদের ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। গত সপ্তাহে বাজার স্থিতিশীল থাকার ইঙ্গিত পাওয়ার পর বিনিয়োগকারীদের মনে হয়েছে, এখন মুনাফা তোলার সময়। হঠাৎ করে তাঁরা শেয়ার বিক্রি শুরু করায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।